বন্ধুর সঙ্গে ডায়ানার শেষ কথোপকথন
৩১ আগস্ট ২০১৮ ০৯:২৪
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট হাসপাতালে মারা যান তিনি। এর আগেরদিন ৩০ আগস্ট ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের একটি টানেলে তিনি বন্ধুসহ ভয়াবহ এক গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হন।
সবেমাত্র ৩৬ বছর বেঁচে ছিলেন নীল চোখ, ছোট চুল এবং মনোমুগ্ধকর হাসির এই বিস্ময় মানবী। তার জনপ্রিয়তা এত বেশি ছিল যে, ২০ বছর অতিবাহিত হলেও তার জীবনের কথাগুলো জানার জন্য মানুষ উৎসুক হয়ে থাকে। তার মৃত্যু আজও বাস্তবতার চোখে অপার রহস্যের ঝাপটা দিয়ে যায়।
ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই আশাবাদী ছিলেন এবং জীবনের শেষ গ্রীষ্মকালটি ডায়ানা দারুণ কাটিয়েছেন বলে তার এক বন্ধু জানিয়েছেন। মৃত্যুর আগে ডায়ানার সঙ্গে শেষ কথোপকথন নিয়ে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে এসব জানান তিনি।
নাচের শিক্ষক ডিরেক ডিন বর্ণনা দেন, জীবনের শেষ গ্রীষ্মকালে কীভাবে ডায়ানা দেখা পেয়েছিলেন সর্বোচ্চ সুখের। ডিনের ভাষ্যমতে, মৃত্যুর কয়েকমাস আগে মিসরীয় ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আল ফায়েদের ছেলে দোদি আল ফায়েদের প্রেমে পড়েছিলেন ডায়ানা।
ইংলিশ জাতীয় ব্যালে-নাট্যদলের সাবেক ওই পরিচালক বলেছেন, ব্যালে নৃত্যের প্রতি ডায়ানার আগ্রহ ও ভালোবাসায় কারণেই সাক্ষাতের অল্পদিনের মধ্যেই ভালো বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তাদের।
ফ্রান্সে দোদির সঙ্গে ছুটি কাটানোর আগেও ডিনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন ডায়ানা। সে সময় নিজের ভবিষ্যৎ, আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে তাদের মধ্যে অনেক কথা হয় বলে জানান ডিন।
ডিন বলেন, মারা যাওয়ার কয়েকদিন পূর্বে রয়্যাল আলবার্ট হলে অবস্থিত আমার সোয়ান লেক নাচের স্টেজে পা ছুঁইয়ে গেছে ডায়ানা। কিন্তু কে জানতো, সেটিই শেষ দেখা ব্যালে নাচ হিসেবে ওর চোখে লেগে থাকবে!
‘পরবর্তী জীবন নিয়ে তার ধারণা ছিল খুবই ইতিবাচক। সে জানতো তার গন্তব্য কোথায়, দাতব্য কাজ এবং শান্তির বার্তা পৌঁছে দেওয়ার ভেতরই সে খুঁজে পেয়েছিল নিজেকে।’
দোদির সঙ্গে নতুন সম্পর্কের অভিজ্ঞতা নিয়েও সাবলীলভাবে কথা বলেছিল ডায়ানা। ডিন বলেন, দোদি ওকে সুখী করতে পেরেছিল। দোদির সঙ্গে কাটানো সময়গুলো দারুণ যাচ্ছিলো ওর। দোদির কাছে শান্তি ও নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিল সে।
‘সেটা ছিল গ্রীষ্মের রোমাঞ্চ। যদিও আমি জানতাম যে, দোদিকে শিগগিরই বিয়ে করছে না ডায়ানা। কিন্তু ওদের সময়গুলো কাটছিলো চমৎকার।’
কিন্তু গ্রীষ্মের সেই রোমাঞ্চকর দিনগুলি খুব একটা বেশি স্থায়ী হয়নি ডায়ানার জীবনে। প্যারিসের আধো-আলো আধো-অন্ধকারের টানেল অতর্কিতে থামিয়ে দিল দোদি, ব্যক্তিগত ড্রাইভার হেনরি পলসহ ডায়ানাকে।
ডিন বলেন, সে বারই ওর সঙ্গে শেষ দেখা হয় আমার। প্যারিস থেকে ফিরেই ও ফের দেখা করতে আসবে বলেছিল। কিন্তু তা আর হলো কই!
‘ডায়ানা ছিলো সত্যিকারের এক রাজহংসী। দুর্দিনে যে শক্তি ও সাহস নিয়ে ওকে সব প্রতিকূলতা দূর করতে দেখেছি, তাতে ওর প্রতি কেবল শ্রদ্ধাই দেখাতে পারি আমি। অন্য কেউ অন্য কিছু করুক। সমালোচনা ডায়ানার জন্য নয়।’
উল্লেখ্য, ডায়ানা ফ্রান্সিস স্পেনসার জন্মেছিলেন ১৯৬১ সালের ১ জুলাই নরফোক জেলার স্যানড্রিংহামে। স্কুল শেষ করার পর তিনি লন্ডনে বাচ্চাদের দেখাশোনার কাজ করতেন, মাঝে মাঝে রান্নার কাজ করতেন। পরে তিনি লন্ডনের অভিজাত নাইটসব্রিজ এলাকায় এক নার্সারিতে সহকারী হিসাবে যোগ দেন।
২৯ জুলাই ১৯৮১ সালে লন্ডনের সেন্ট পলস গির্জায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেন লেডি ডায়ানা ও যুবরাজ চার্লস। প্রিন্সেস ডায়ানা অল্পদিনের মধ্যেই রাজপরিবারের হয়ে দায়িত্বপালন শুরু করেন। তিনি নার্সারি, স্কুল, ও হাসপাতাল পরিদর্শনে যেতে শুরু করেন। মানুষের সঙ্গে মেশার একটা সহজাত প্রবণতা ও স্বতঃস্ফূর্ততা তাকে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে যায়।
ডায়ানাকে বলা হত পৃথিবীর সবচেয়ে খ্যাতিমান মহিলা। ফ্যাশন, সৌন্দর্য, এইডস রোগ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে তার অবদান এবং ভূমি মাইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন তাকে বিখ্যাত করেছে। ধারণা করা হয়, সে বিশ্বের সর্বাধিক আলোকচিত্রিত নারী। অবশ্য সমালোচকদের মতে এই খ্যাতি এবং খ্যাতির জন্য প্রচেষ্টাই ডায়ানার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
সারাবাংলা/এএস