‘এখানে কোনো ম্যাজিক নেই’
১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৩:৩৭
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি কৌশল প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এখানে কোনো ম্যাজিক নেই। ম্যাজিক একটাই, সেটা হলো আমরা একটা আদর্শ নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করি।’
শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে ৭ মার্চ ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তার আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভবনের নাম ফলকের মোড়ক উন্মোচন করেন। এ সময় ঢাবি উপাচার্যসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর ঢাবি উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নবনির্মিত ভবনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, ইউজিসি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) নাসরিন আহমেদ, উপ-উপাচার্য মোহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ মো. কামাল উদ্দিন, রোকেয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক জিনাত হুদা।
আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২০ সালে জাতির জন্মশতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করব এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। কাজেই এই সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী খুব অল্প সময়ের ব্যবধানেই কিন্তু আমরা উদযাপন করতে যাচ্ছি।’
বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নের রোল মডেল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি যখন যেখানেই যাই, ওই একটাই প্রশ্ন অনেকে জিজ্ঞাসা করেন, আপনারা এত দ্রুত কীভাবে অর্থনৈতিক উন্নতি করতে পারেন? কোনো কোনো রাষ্টপ্রধান বা সরকারপ্রধান তো জিজ্ঞাসা করেন, ম্যাজিকটা কী?’
‘আমি শুধু তাদের একটা কথাই বলি, এখানে কোনো ম্যাজিক নাই। ম্যাজিক একটাই, সেটা হলো একটা আদর্শ নিয়ে আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করি। ক্ষমতা আমার কাছে ভোগের বস্তু নয়। ক্ষমতা হচ্ছে জনগণের জন্য দায়িত্ব পালন করা।’
‘জনগণের জন্য কি করতে পারলাম, কতটুকু করতে পারলাম, সেটাই বিবেচনা করি। সেটাই হিসাব কষি। সেটাই আমরা দেখি। প্রতিটি মুহুর্তে এটাই চিন্তা থাকে, কি কাজটা করলে দেশের মানুষের কল্যাণ হবে, মানুষ একটু ভাল থাকবে, ভালভাবে বাঁচবে, মানুষের জীবনটা উন্নত হবে? মানুষের জীবনে শান্তি ফিরে আসবে? মানুষের জীবনটা উন্নত হবে।’
‘সেই চিন্তা করেই আর জাতির পিতার যে নির্দেশিত পথ, সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করেছি বলেই এত দ্রুত আমরা দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি’ বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা।
‘ইনশাল্লাহ, এই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির পিতা তার ঐতিহাসিক ৭মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না, দাবায়ে রাখতে কেউ পারেনি বাঙালীকে, ভবিষ্যতেও পারবে না।’
দেশকে যেন এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি সে জন্য সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি, আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু তারপরও আমি মনে করি, শিক্ষায় যে খরচ করি, এটা কোনো ব্যয় না। এটা আমার দৃষ্টিতে বিনিয়োগ। যা আমাদের দেশ গঠনে কাজে লাগবে। আমাদের দেশের মানুষ উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠবে।’
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাধারণ ক্ষেত্রে বলা যায় যে, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের উপার্জনে চলবে। কিন্তু আমাদের এখানে যারা শিক্ষার্থী তাদের এটা ভাবা উচিত, পৃথিবীর মধ্যে বোধহয় সব থেকে কম খরচে উচ্চশিক্ষা বাংলাদেশে দেওয়া হয়ে থাকে। শতভাগ খরচই কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে। এটা কিন্তু পৃথিবীর কোন দেশে আছে বলে জানি না। কারণ আমরা আরও অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজখবর রাখি। কিন্তু আমরা বাংলাদেশে সেটা করি।’
তাই এর মর্যাটাও শিক্ষার্থীদের দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উচ্ছৃঙ্খলতা কখনো গ্রহণযোগ্য না। সবাইকে একটা নিয়ম মেনে চলতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়ম মেনে সেভাবেই আচরণ করতে হবে। সেটাই আমরা আশা করি, জাতি আশা করে।’
‘কাজেই আমরা চাই, আমাদের ছেলেমেয়েরা সবদিক থেকে জীবনমান তাদের উন্নত হোক। তারা এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাক। কারণ আমাদের তো সময় শেষ। বয়সও হয়ে গেছে। আর কতদিন। কিন্তু এর পরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যারা আসবে, তারা যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে তুলে জাতির পিতার যে স্বপ্ন ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা, সেই স্বপ্ন পূরণ করে যেন এগিয়ে নিয়ে যাই।’
দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করায় বিএনপি সরকারের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের প্রত্যেকটা জেলাকে নিরক্ষরতামুক্ত জেলা হিসেবে গড়ার উদ্যোগ নিয়েছিলাম, প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক সেবার উদ্যোগ করেছিলাম, ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি এসব বন্ধ করে দেয়। সেসময় দেশে স্বাক্ষরতার হারও কমে যায়। যাই হোক, এখন আমরা আবার কাজ করছি।দেশে স্বাক্ষরতার হারও আবার বাড়ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের ছেলেমেয়েদের উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।’
জাতির গঠনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৫২ সালের মাতৃভাষার সংগ্রাম থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, সর্বক্ষেত্রেই অগ্রগণ্য ভূমিকা রেখেছে। সেকারণেই এই বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা গুরুত্ব বহন করে। ছয় দফা আন্দোলন থেকে শুরু করে যত সংগ্রাম আন্দোলন হয়েছে, সব আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীনতার প্রতিটি আন্দোলনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা অনেক।’
২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সমস্যা সমাধানে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২টি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেছিলেন। ভবনগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল রোকেয়া হলের ৭ মার্চ ভবন।
১১ তলাবিশিষ্ট এ ভবনে প্রায় এক হাজার ছাত্রী আবাসন সুবিধা পাবেন।
সারাবাংলা/এনআর/একে
আরও পড়ুন
৭ মার্চ ভবনের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন, পথজুড়ে ১৯৭১ ফুট আলপনা
৭ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানমন্ত্রী রোকেয়া হল শেখ হাসিনা