Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খাট: বাংলাদেশের ঘাড়ে আফ্রিকান নেশার ভূত!


১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৪:৫৯

।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

দেশে গত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঘোষণা দিয়ে এক যুদ্ধে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নেশায় বুদ হয়ে থাকা প্রজন্মের মুক্তির প্রতিজ্ঞায় ‘মাদক বিরোধী’ সে যুদ্ধ এখন পর্যন্ত সফল বলে জানাচ্ছেন তারা।

যদিও মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেবে গত ১৫ মে থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত মাদক বিরোধী অভিযানে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে ২০২ জন। জেলে আটক রয়েছে আরো কয়েক হাজার মাদক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি।

তা সত্ত্বেও দেশে মাদক আসার পথ পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার নজির দেখা যাচ্ছেনা। গতকাল শুক্রবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৪৬৬ কেজির নতুন এক মাদকের (খাট) চালান জব্দ করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম শিকদার সারাবাংলা’কে বলেন, আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া থেকে চালানটি ঢাকায় এসেছে। আন্তর্জাতিক একটি মাদকবিরোধী সংস্থার দেওয়া গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এই মাদকসহ মো. নাজিম (৪৭) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়।

নজরুল ইসলাম শিকদার আরও বলেন, ইতিহাদ বিমানের একটি ফ্লাইটে করে নওয়াহিন এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় মাদকের এই চালানটি আসে। পরে নাজিমের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শান্তিনগরের নওশীন এন্টারপ্রাইজে অভিযান চালিয়ে আরো প্রায় ৪০০ কেজি পরিমাণ খাট উদ্ধার করা হয়। জব্দ হওয়া মাদক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।

উইকিপিডিয়া বলছে, হর্ন অব আফ্রিকা ও আবর উপ-দ্বীপাঞ্চলে জন্মায় গুল্ম জাতীয় এই মাদক। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘কাথা ইডুলিস’, যদিও স্থানীয়ভাবে একে খাট, কাট, খাত, ঘাট, চাট, অ্যাবিসিনিয়ান টি, সোমালি টি, মিরা, অ্যারাবিয়ান টি ও কাফতা নামেও ডাকা হয়।

বিজ্ঞাপন

খাটে অ্যালকালোইড ক্যাথিনন নামক এক ধরণের উদ্দীপক উপাদান থাকে, যার কারণে উত্তেজনা বাড়ে, ক্ষুধা কমে যায় এবং শরীরের উষ্ণতায় তারতম্য ঘটে। আমেরিকান কোকো পাতা, এশিয়ান পানের মতোই স্থানীয়দের মধ্যে হাজার বছর ধরে এই নেশাদ্রব্যের শুকনো পাতা চিবিয়ে খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।

তবে এর আসক্তি খুব ভয়ঙ্কর। খাটের কারণে অবসাদ, দৃষ্টিভ্রম, অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দাসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে৷। বেশি রস চিবিয়ে নেশা করলে বিপদও মারাত্মক। বিশেষজ্ঞদের বলছেন, ‘দাঁত এবং মাড়িতে ঘা হতে পারে। এ ছাড়াও, ইন্দ্রিয় শক্তি এবং যৌনক্ষমতা হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। খাট জীবনী শক্তিও কমিয়ে দেয়।’

১৯৮০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) একে মাদকদ্রব্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। কানাডা, জার্মানি, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে এটি অবৈধ না হলেও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণযোগ্য। ইসরাইলে এই উদ্ভিদের পাতা ওষুধ তৈরিতে ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। তবে মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থা- ডিইএ একে ক্ষতিকারক হিসেবে সতর্ক করেছে।

অপরদিকে আফ্রিকার দেশ জিবুতি, কেনিয়া, উগান্ডা, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া এবং ইয়েমেনে এর উৎপাদন, ক্রয়-বিক্রয় এবং অবাধে সেবনের বৈধতা রয়েছে।

সোমালিয়ার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সোমালিল্যান্ডের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ ‘খাট’ এ আসক্ত। তাদের মতে, ‘খাট মদের চেয়েও ভালো। এই নেশা শক্তি যোগায়। এটা নেয়ার পর স্বাভাবিকভাবে কাজ করা যায়।’

সোমালিল্যান্ডের অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং জনজীবনকে নিয়ন্ত্রণ করছে এই নেশাদ্রব্য। প্রতিদিন এর পেছনে ১ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ৯ লক্ষ ৩০ হাজার ইউরো খরচ করে সেখানকার মানুষ।

বিজ্ঞাপন

দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সোমালিল্যান্ডের বার্ষিক বাজেটের ২০ শতাংশই আসে খাট খাত থেকে। সোমালিল্যান্ডে বছরে ৫২৪ মিলিয়ন ডলারের খাট বিক্রি করে ইথিওপিয়া।

সারাবাংলা/এএস/জেডএফ

খাট মাদক বিরোধী অভিযান মাদকদ্রব্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর