বিএনপির কাছে ৩ প্রশ্ন কাদেরের
১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২০:১২
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বিএনপির প্রতি দেশের জনগনের কোনো আস্থা নেই জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির কাছে তিন প্রশ্নের জবাব জানতে চেয়েছেন।
শনিবার (১ সেপ্টম্বর) বিকেলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সম্পাদক মন্ডলীর এক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব প্রশ্ন রাখেন।
শরিকদের ৭০ আসন দেবে আওয়ামী লীগ
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির কাছে আমি তিনটি প্রশ্নের জবাব চাই। আমার প্রথম প্রশ্নটা হচ্ছে, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর, হত্যাকারীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে ইনডেমনিটির ক্যুখাত অধ্যাদেশ জারি এবং এর পর এই অধ্যাদেশকে ৫ম সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কী ব্যখ্যা জাতির সামনে আছে বিএনপির। এটা আমি জানতে চাই। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এর ব্যাখ্যা আমি জানতে চাই। অধ্যাদেশে খুনিদের রক্ষা করতে আবার সেটাকে আইনি স্বীকৃতি দিতে আমাদের সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা কোন যুক্তিতে, কেন? এর ব্যখ্যা আমরা বিএনপির কাছে জানতে চাই।’
‘দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, বিনা পয়সায় সাবমেরিন ক্যাবল প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার যে কাজটি তারা করেছেন এর ব্যাখ্যা?’
‘তৃতীয় প্রশ্ন হচ্ছে তড়িঘড়ি করে বেগম খালেদা জিয়ার রায়েরর আট দিন আগে বিএনপির গঠনতন্ত্র থেকে কেনো ৭ ধারা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এর ব্যখ্যা আমরা জানতে চাই।’
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান সরকারের পদত্যগ দাবি করেছে এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করেছে বিএনপি এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রথম বিষয়টি সংবিধান সম্মত নয়। আর দ্বিতীয় বিষয়টি আইনি বিষয়। তারা যদি মামলা মোকাবেলা করে আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম জিয়াকে মুক্ত করে আনতে পারে, ওয়েলকাম। সরকার যদি বাধা দিত, সরকার যদি বিচার বিভাগকে কোনো প্রকারে প্রভাবিত করতে চাইতো। তাইলে বেগম জিয়া এতগুলো মামলা থেকে জামিন পেত না। প্রায় ৩০টি মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন, সরকার যদি হস্তক্ষেপ করতো তাহলে কীভাবে এসব মামলা থেকে জামিন পেল।
‘সেই মামলার জন্যও আপনারা আইনি লিগ্যাল ব্যাটলে যান। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি সরকারের পক্ষ থেকে মামলার ব্যাপারে বেগম জিয়ার মুক্তির ব্যপারে আমাদের পক্ষ থেকে লিগাল ব্যাটলে কোনো প্রকার বাধা, কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ আমাদের পক্ষ থেকে হবে না।’
আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয় মওদুদ আহমেদের এমন বক্তব্য সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘মওদুদ আহমেদের কাছ থেকে আইনি প্রক্রিয়া শিখতে হবে? তিনি এমনও বলেছেন সংবিধানের বাইরে গিয়েও নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যায়। তারা যেসব দাবি সংবিধান বাইরে গিয়ে মেনে নেওয়ার দাবি করেছেন। যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে, আইন লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় আসে এটা তাদের পক্ষে বলা সম্ভব। মওদুদ নিজেই আইন লঙ্ঘন করেন, তিনি মৃত ব্যক্তির নামে ভুয়া সার্টিফিকেট আদালতে জমা দিয়ে ৪০ বছরের দখল করা বাড়িটা রক্ষ করতে পারেননি। যিনি অপচেষ্টার দালাল। তার পক্ষের এধরণের দাবি আমরা সেভাবে নিচ্ছি না।’
খালেদা জিয়াকে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করা হবে বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় কাদের বলেন, ‘রাজপথে সরকারে দশ বছর হয়ে গেল, এই দশ বছরের বারে বারে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে, সবই সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক ছোট খাটো আন্দোলনের ডাক নয়, বেগম খালেদা জিয়াও সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন এর সঙ্গে বাস্তবতা কতটুকু এটা আপনারা জানেন। দশ বছরে একটা দিনও সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার মতো কোনো আন্দোলন বিএনপি নামক বিরোধী দল করতে পারেনি। আমরা চাপ অনুভব করেছি এমন কোনো আন্দোলন বিএনপি করতে পারেনি।’
‘বাংলাদেশের ইতিহাসে এত ব্যর্থ অপজিশন, এত ব্যর্থ বিরোধী দল বাংলাদেশে আসেনি। এই ব্যর্থতার জন্য বিএনপির টপ টু বটম সকল নেতার পদত্যগ করা উচিৎ।’
‘ফখরুল ইসলাম, মওদুদ আহমদ মোশাররফ, রাস্তায় দাড়িয়ে মাইক দিয়ে কয়েকজনকে নিয়ে আওয়াজ দিলেই কি সরকার হটে যাবে? এই সরকারের গণভিত খুবই শক্তিশালী, এই সরকারের গণভিত বাংলাদেশের মাটির অনেক গভীরে প্রথিত। আমাদের শিকড় অনেক গভীরে আমরা হঠাৎ করে এস জনসমর্থহীন ভাবে সরকারে আসিনি। এটা যেন তারা ভুলে না যায়।’
জনগনের রায়ের উপর আস্থা নেই বলে সরকার ইভিএমে নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে বিএনপির এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ইভিএম আমাদের নতুন কোনো দাবি নয়। সারা দুনিয়ায় আধুনিক স্বচ্ছ এবং স্বল্প সময়ে ভোট প্রদান গণনা এবং ফলাফল। এটা সর্বশেষ প্রযুক্তি, ভারতে এটা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে আম আদমির অরবিন্দ কেজরিওয়াল, তিনি অভিযোগ করেছেন তিনি বলেছেন এখানে টেম্পারিংয়ের সুযোগ আছে, অনেক বিতর্ক আলাপ-আলোচনার পর শেষ পর্যন্ত অরবিন্দ কেজরিওয়াল অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন।’
‘ইভিএম নিয়ে বিএনপির কেনো ভয়, সেটা আমরা বুঝে ফেলেছি। বিএনপির ভয় হচ্ছে ইভিএমে ভোট হলে বিএনপি আর কেন্দ্র দখলের পুরোনো অভিযোগ আনতে পারবে না, ভোট জালিয়াতির কথা বলতে পারবে না। ভোট কারচুপির কথা বলতে পারবে না। বিএনপি আর পোলি এজেন্টদের বের করে দেওয়ার পুরোনো অভিযোগ আনতে পারবে না এ কারনেই বিএনপি ইভিএম চায় না।’
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, দীপু মণি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ, ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াসহ অনেকে।
সারাবাংলা/এমএমএইচ/এমআই