Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ, চিকিৎসক-নার্স পলাতক


১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২৩:৩১

।। সাদ্দাম হোসাইন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ‘আমরা তো জানি না হাসপাতালের ভেতর পাষণ্ড ঢুইকা রইছে। আমার জামাইও জানে না, আমার ভাইও জানে না। সকালেও বাবার সঙ্গে কথা হইছিল। বিকেলে বাবা আসছে অপারেশন করতে। আমরা মনে করেছি ভালো ডাক্তার। কিন্তু অপারেশনে নতুন স্টুডেন্ট আইসা অ্যানেসথেশিয়া (অজ্ঞান) করে? অ্যানেসথেশিয়া তো করে সিনিয়র ডাক্তাররা। আমরা তো জানি না এসব। ওরা যে পাষণ্ড, তা আমরা কিভাবে জানব? এখনও আইসিইউতে যে রোগীগুলা আছে, সেগুলা মেরে ফেলবে। আরও রোগী মেরে ফেলবে তারা! তাদের বাঁচান।’

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সারাবাংলার কাছে কথাগুলো বলছিলেন সদ্যই বাবা জাহাঙ্গীর আলমকে হারানো রুপক জাহান সুমি। রাজধানীর পান্থপথ মোড়ের সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তার বাবা। সুমিসহ তার স্বজনদের অভিযোগ, ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে জাহাঙ্গীর আলমের।

জানা গেছে, এ ঘটনার পর থেকেই ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা পালিয়ে গেছেন। পালিয়ে গেছেন হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ কর্মচারীরাও। এ ঘটনায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কলাবাগান থানা পুলিশ হাসপাতালে অবস্থান নিয়েছে। তবে রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, পুলিশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ নিয়ে সেখানে গিয়েছে।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (শনিবার রাত ১১টা) সেখানে পাঁচ জন সিকিরিউটি গার্ড ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি। তবে হাসপাতালে নিহত জাহাঙ্গীরের স্বজনরা ভিড় করেছেন। এ ঘটনায় হাসপাতালে থাকা অন্য রোগী ও তাদের স্বজনরাও শঙ্কা বোধ করছে।

নিহত জাহাঙ্গীরের ছেলের শ্বশুর সৈয়দ আব্দুর রহমান আরজু সারাবাংলাকে বলেন, ‘পিত্তনালীতে পাথরের অপারেশন করতে জাহাঙ্গীর আলমকে অপারেশন থিয়েটরে (ওটি) নেওয়া হয়েছিল বিকেল ৪টায়। মিনিট বিশেক পর অপারেশন থিয়েটার থেকে একজন ডাক্তার এসে জানান, আপনাদের রোগীর অবস্থা বেশি ভালো নয়, আপনাদের বন্ড সেই করতে হবে। এটা বলে জামাইয়ের (জাহাঙ্গীরের ছেলে) কাছ থেকে একটা কাগজে সই নেয়। এরপর তারা সিঁড়ি বেঁয়ে নিচে নেমে যায়। তারপর আমরা ওটিতে গিয়ে দেখি, তিনি মারা গেছেন। পরে নিচে নেমে দেখি, হাসপাতালের ডাক্তার-নার্সসহ কোনো লোকই নেই। সবাই পালিয়ে গেছে।’

বিজ্ঞাপন

নিহত জাহাঙ্গীর আলমের বড় মেয়ে সুমি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, অপারেশন করার আগে অ্যানেসথেশিয়া করেন সিনিয়র ডাক্তাররা। অথচ তারা কোথায় থেকে স্টুডেন্ট খুঁজে এনে আমার বাবার অপারেশন করেছে। তারা যে এভাবে কত রোগী মেরে ফেলেছে, তা খোঁজ নিলে হয়তো জানা যাবে। তারা আমার বাবাকে মেরেছে। এখন যারা ভর্তি আছে, তাদেরও মেরে ফেলবে। আপনারা তাদেরকে বাঁচান, এ হাসপাতাল বন্ধ করেন।

এসময় সুমির ছোট খালা আঞ্জুমান আরা বিউটি এ প্রতিবেদককে নিহত জাহাঙ্গীরের চিকিৎসাপত্র দেখিয়ে বলেন, ‘তারা কেউ ডাক্তার না। পুলিশ-প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্যাডার বাহিনী দিয়ে তারা মানুষ মেরে ব্যবসা করতে এ হাসপাতাল খুলছে। তাদের চিকিৎসাপত্র দেখলেই বোঝা যায়। চিকিৎসাপত্রের কোথাও ডাক্তারের কোনো নাম-পদবি কিছুই নেই।’ এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার প্রস্ততি চলছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াসির আরাফাত খান সারারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনা জানতে পেরে হাসপাতালটিতে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তবে কেউ এখনও লিখিত অভিযোগ করেনি।’

ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত কলাবাগান থানার তদন্ত ওসি (অপারেশন) সমির চন্দ্র সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের কাছে এখনও কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তবে ঘটনা জানার পর আমি ডিউটিতে থাকায় এখানে এসেছি, যেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে।

সারাবাংলা/এসএইচ/টিআর

পান্থপথ ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর