ইভিএম, ব্যবহারের চেয়ে কিনতে বেশি আগ্রহী ইসি
২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৩:২৪
।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নিতে না পারলেও তা কিনতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইভিএম কিনতে তিন হাজার ৮২৯ কোটি টাকার প্রকল্পটি নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়ন করতে চায় কমিশন। সে জন্য আরপিও সংশোধনের প্রায় দুই মাস আগে গত ৫ জুলাই ইভিএম-এর যন্ত্রপাতি আমদানী করতে ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণপত্র খুলতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদন নেয় কমিশন।
ইসি সূত্র জানায়, আগামী সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করলেও তা বড় পরিসরে হবে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতো সংসদ নির্বাচনেও কয়েকটি আসনের নির্দিষ্ট কিছু কেন্দ্রে পরীক্ষামূলকভাবে এটি ব্যবহার করা হবে। সংসদ নির্বাচনের চার মাস আগে বিদেশ থেকে ইভিএমের যন্ত্রপাতি আমদানি করে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে (বিএমটিএফ) ইভিএম প্রস্তুত করে ইসিকে সরবরাহ করা কোনোভাবেই সম্ভব না। স্বয়ং প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাও বৃহস্পতিবার এক প্রশ্নের জবাবে সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেন, আরপিও সংশোধন মানেই যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই ইভিএম ব্যবহার করা হবে, তা নয়। তবে প্রয়োজনে যাতে ইভিএম ব্যবহার করা যায়, সে জন্য আরপিও সংশোধন করে ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে ভালো ফল পেয়েছি তাই জাতীয় নির্বাচনেও যাতে ইভিএম ব্যবহার করা যায় আমরা তার ক্ষেত্র তৈরি করে গেলাম।
সিইসি আরও বলেন, ‘আরপিও সংশোধন করা হয়েছে। যাতে সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যায়। তবে এটা সংসদ অধিবেশনে পাশ হতে হবে। তার আগে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং হয়ে মন্ত্রিসভায় যাবে অনুমোদনের জন্য। যদি এটা সেখানে অনুমোদন হয় তবেই জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে।’
অন্যদিকে ইসি কমিশনার হেলালুদ্দীন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের ইভিএম ব্যবহার করতে আরপিওতে সংশোধন আনা হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের একটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করতে হলেও আরপিও সংশোধনের প্রয়োজন ছিল। তাই এটি সংশোধন করা হয়েছে। তবে কতটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে এই মুর্হুতে বলা সম্ভব নয়।
এর আগে গত ৩০ আগস্ট বৃহস্পতিবার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) বৃহস্পতিবার ইসির কমিশন সভায় আরপিও সংশোধন করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। যদিও কমিশনের অন্যতম সদস্য মাহবুব তালুকদার আরপিও সংশোধন করে আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভা বয়কট করেন। তারপরেও সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে আরপিও সংশোধনের বিষয়টি অনুমোদন করে কমিশন।
ইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, আরপিও সংশোধনের দেড় মাস আগে গত জুলাই থেকে ইভিএম কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে কমিশন। এরই অংশ হিসেবে সংসদ নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য দেড় লাখ ইভিএম কিনতে ৩ হাজার ৮২৯ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় ইসি। পরে গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে ইভিএম কেনার জন্য আমদানী প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। ইভিএম এর যন্ত্রপাতি আমদানি করতে ঋণপত্র খুলতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিশেষ অনুমোদন নিয়েছে ট্রাস্ট ব্যাংক। একই সঙ্গে পোল্যান্ড থেকে মেশিন, চীন থেকে ব্যাটারি এবং হংকংসহ কয়েকটি দেশ থেকে ইভিএম-এর যন্ত্রপাতি আনা হচ্ছে।
ইসি সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বেই আরপিও সংশোধন করে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি অন্তভুক্ত করতে গিয়ে বেশ তড়িঘড়ি করেছে কমিশন। যে কারণে ইসির আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটি থেকে আরপিওর ৩৫টির মতো সংশোধনী দিলেও শুধু ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি প্রধান্য দেওয়া হয়েছে। এমনকি আদালতের নির্দেশনা থাকলেও আইনটি বাংলায় রূপান্তর করার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ১০০ আসনে ইভিএম ব্যবহারের কথা আরপিও সংশোধনের আগে বলা হলেও বাস্তবে তা সম্ভব নয়। কারণ নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংখ্যাক ইভিএম সংগ্রহ ও দক্ষ জনবল তৈরিসহ কারিগরি প্রস্তুতি গ্রহণ করা সম্ভব নয়। মূলত নির্বাচনের পূর্বে বিশেষ মহলের চাপে ৩ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা প্রকল্পে খরচ করতেই ইভিএম ব্যবহারে আরপিও সংশোধন করা হয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, দেড়লাখ ইভিএম কেনার জন্য কমিশন থেকে প্রকল্প নেওয়া হলেও বাস্তবে তা কার্যকর করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন খোদ কর্মকর্তারা। তারা বলেন, গত এপ্রিলে ২ হাজার ৫৩৫টি ইভিএম কেনার প্রক্রিয়া শুরু করলেও বিগত চার মাসেও ইভিএম হাতে পাওয়া সম্ভব হয়নি।
সারাবাংলা/জিএস/এমআই