দরজা লাগিয়ে অপমান করেছে, আমারও আত্মসম্মানবোধ আছে: প্রধানমন্ত্রী
২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৬:৫৩
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘যে যা বলুক, তাদের সঙ্গে আমি আর আলোচনা করব না।’
বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা জানাতে রোববার (২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ছেলে মারা যাওয়ার পরে যখন তার বাসায় দেখতে গেলাম আমার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিল। আমাকে ঢুকতে দিল না। সেদিন থেকেই তো আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আর তো আমি অন্তত ওদের সঙ্গে বসবো না। আমার সঙ্গে তাদের কোনো আলোচনা হবে না। আলোচনা হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যে যত কিছুই বলুক না কেন আমার কিছু আসে যায় না। আমার একটা আত্মসম্মানবোধ আছে। এটা মনে রেখেন। অপমানের একটা সীমা আছে। যারা দিনের পর দিন আমার বাড়িতে পড়ে থাকত, তার মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেওয়ার মতো সাহস রাখে?’
তিনি বলেন, ‘আমি তখন তো রিঅ্যাক্ট করিনি। কিচ্ছু বলিনি। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারল। তখনো আমার অ্যারেস্ট করা উচিত ছিল। কিন্তু আমি অ্যারেস্ট করিনি তখনও আমি সহনশীলতা দেখিয়েছি। কাজেই এটা বিএনপির সিদ্ধান্ত। তারা কী করবে না করবে। তারা একটা রাজনৈতিক দল, নির্বাচনে আসা না আসার বিষয়টি তাদের ওপর নির্ভর করে।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা বাস্তবায়নে আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই অনুপ্রেরণা থেকেই বিমসটেকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ফোরামে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমি আশা করি, আমাদের এই অগ্রযাত্রায় দেশের জনগণ ও গণমাধ্যম আমাদের পাশে থাকবে।’
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে চতুর্থ বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিমসটেক)’র চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সম্মেলনে যোগ দিতে ৩০ আগস্ট নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সফরকালে বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি চতুর্থ বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশনের (বিমসটেক) শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশন এবং শুক্রবার সকালে সমাপনী অধিবেশনসহ সম্মেলনের বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেন। বিমসটেকভুক্ত অন্যান্য দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে সম্মেলনে যোগ দেন ধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্যও রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সফরের প্রথমদিন বিকেলে কাঠমান্ডুর হোটেল সোয়ালটি ক্রাউনি প্লাজায় চতুর্থ বিমসটেক সম্মেলনের উদ্বোধনী সেশন শুরু হয়। নেপালের জাতীয় সঙ্গীতের পরিবেশনের মধ্যে শুরু হয় সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ভুটানের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দাসো শেরিং ওয়াংচুক, শ্রীলংকান প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রিয়ুথ চ্যান-ও-চার, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দেন।
কাঠমান্ডুর হোটেল সোয়ালটি ক্রাউন প্লাজায় বিকালে সাতটি দেশের আঞ্চলিক এই জোটের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও বিমসটেক সম্মেলনের সাইড লাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি, ভুটানের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দাসো শেরিং ওয়াংচুকের সঙ্গে বৈঠক করেন।
শুক্রবার সকালে বিমসটেকের সমাপনী অনুষ্ঠানসহ রিট্রিট সেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। একটি যৌথ ঘোষণার মধ্য দিয়ে এবারের শীর্ষ সম্মেলনের সমাপ্তি ঘটে।
এই উপ-আঞ্চলিক সংস্থাটি ১৯৯৭ সালের ৬ জুন ব্যাংকক ঘোষণার মধ্য দিয়ে গঠিত হয়। এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ৫টি দক্ষিণ এশিয়ার। এগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা। অন্য দুটি দেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড। বিশ্বায়নের আগ্রাসন মোকাবেলা করে আঞ্চলিক সম্পদ এবং ভৌগোলিক সুবিধাদি কাজে লাগিয়ে সবার স্বার্থে পারষ্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা হচ্ছে এই ধরনের জোট গঠনের উদ্দেশ্য।
সারাবাংলা/এনআর/একে