সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিয়ে অন্তিম যাত্রায় ‘একাত্তরের জননী’
৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৪:৩৩
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: অন্তিম যাত্রাপথে একবার চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে এসেছিলেন একাত্তরের জননী খ্যাত সাহিত্যিক রমা চৌধুরী। খবর পেয়ে সোমবার সকাল থেকেই শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে জড়ো হতে থাকেন, রাজনীতিক, শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। হাতে ফুল নিয়ে শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে জড়ো হন বিভিন্ন স্কুলের শত, শত কোমলমতি শিক্ষার্থীও। হাজির হন প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারাও। জানানো হয় রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সম্মান। শোকাহত মানুষও ফুল দিয়ে, চোখের জল ফেলে শেষ শ্রদ্ধা জানান মহিয়সী এই নারীকে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সোমবার (০৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রমা চৌধুরীর মরদেহ নেওয়া হয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে। দুপুর ১২টায় চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে।
এর আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান এবং ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, চট্টগ্রাম মহানগর কমান্ডার মোজাফফর আহমেদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল রমা চৌধুরীর মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এসময় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান বলেন, রমা চৌধুরী একজন মুক্তিযোদ্ধা। এই রাষ্ট্র, এই জাতির প্রতি তাঁর অপরিসীম ত্যাগ। এই মহিয়সী নারীর মৃত্যুতে গোটা জাতি আজ শোকাহত। এই রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ে রমা চৌধুরীর ত্যাগ আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। এই জাতি আজীবন রমা চৌধুরীকে স্মরণ করে যাবে।
চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, রমা চৌধুরী একজন বীর। তিনি আমাদের লাল-সবুজের পতাকা এনে দিয়েছেন। আমরা যে বলি স্বাধীন দেশের নাগরিক, এই স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি রমা চৌধুরীর মতো অসংখ্য বীরের আত্মত্যাগের জন্য। রমা চৌধুরী আজীবন আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। কারণ বীরের কখনও মৃত্যু হয় না।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনারের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম, উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোস্তাইন হোসেন, কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসিনও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
প্রশাসনের কর্মসূচির আগে চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নাগরিক, রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক সংগঠন, বিভিন্ন স্কুলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন ও সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান এবং দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান নিজ নিজ সংগঠনের পক্ষে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা, ওয়ার্কার্স পার্টি চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহানসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতারাও মরদেহের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সভাপতি শহীদজায়া মুশতারি শফি ও সহ-সভাপতি ডা.চন্দন দাশ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, হাসান মুরাদ বিপ্লব ও শৈবাল দাশ সুমন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চুও নিজ সংগঠনের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান।
মুক্তিযোদ্ধা অমল মিত্র, আবৃত্তি সংগঠক রনজিৎ রক্ষিৎ, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান ও সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ পাল, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সহ-সভাপতি কবি আশীষ সেন, চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাহিদ হোসেন শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর, জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আতিক রিয়াদ, বাসদ (মার্কসবাদী), যুব মৈত্রী, গণজাগরণ মঞ্চ চট্টগ্রাম, বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি পরিষদ, সম্মিলিত সামাজিক সংগঠন পরিষদ, গ্রুপ থিয়েটার ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল, অপর্ণাচরণ সিটি করপোরেশন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, কৃঞ্চকুমারী সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পাহাড়িকা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কাজেম আলী হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে তাদের শিক্ষকদের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন।
সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদস্য সচিব বেদারুল আলম চৌধুরীও শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রমা চৌধুরীর মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর দীর্ঘদিনের স্মৃতিবিজড়িত চেরাগি পাহাড় মোড়ে লুসাই ভবনের নিচে। সেখানে আরেক দফা শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মরদেহ নেওয়া হচ্ছে বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়ায় গ্রামের বাড়িতে।
রমা চৌধুরীর বইয়ের প্রকাশক আলাউদ্দিন খোকন সারাবাংলাকে বলেন, শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী রমা চৌধুরীকে সমাধিস্ত করা হবে।
সোমবার (০৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ৪ টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রমা চৌধুরীর জীবনাবসান ঘটে।
আরো পড়ুন : মুক্তিযোদ্ধা রমা চৌধুরী আর নেই
রমা চৌধুরীর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক
সারাবাংলা/আরডি/একে