২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: বাবর-পিন্টুর খালাস চাইলেন আইনজীবী
৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৮:৪০
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর আইনগত বিষয়ের উপর যুক্তি উপস্থাপন শেষে বেকসুর খালাস চেয়েছেন তার পক্ষের আইনজীবী।
বুধবার (৫ সেপ্টেম্বর) এই দুই নেতার পক্ষে আইনজীবী এসএম শাহজাহান প্রায়ই দেড় ঘণ্টা দেশের প্রচলিত আইন ও দেশ-বিদেশের উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের আলোকে যুক্তি উপস্থাপন করেন। পরে তারা এ দুই নেতার খালাস দাবি জানান।
এদিন দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের এ মামলার অস্থায়ী ট্রাইব্যুনালে এ আইনজীবী যুক্তি উপস্থাপন শুরু করে সাড়ে দুইটায় শেষ করেন। ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আইনি যুক্তি গ্রহণের পর আগামী ১০, ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর পরবর্তী যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও বিদেশের উচ্চ আদালতের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘মুফতি হান্নানের স্বীকারোক্তি অন্য কোনো আসামির স্বীকারোক্তি বা কোনো সাক্ষীর সাক্ষ্য দ্বারা সমর্থিত হয়নি। বাবর সাহেব পিন্টুর বাসায় এবং হওয়া ভবনে ষড়যন্ত্রমূলক মিটিংয়ে গিয়েছেন বা পিন্টুর বাসায় ষড়যন্ত্রমূলক মিটিং হয়েছিল এ সম্পর্কে অন্য কোনো সাক্ষী বা আসামি হান্নানের বক্তব্য সমর্থন করে সাক্ষ্য দিয়েছেন এমন কোন সাক্ষী রাষ্ট্রপক্ষ দেখাতে পারেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দণ্ডবিধির ৩৪ ও ১০৯ ধারাও তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। তাই যদি মনে করা হয় উপমন্ত্রী পিন্টু মাওলানা তাজউদ্দিনের ভাই এবং বাবর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তাই তাদের অভিযুক্ত করতে হবে তবে আমার কিছু বলার নেই। ন্যায়বিচার প্রসিকিউশন যেমন চায়, আসামিপক্ষও চায়। আমি আদালতে ওই নারকীয় হামলাকে সমর্থন করতে আসিনি। আমি তাদের (পিন্টু ও বাবর) জীবনের ১২টি বছর ফিরিয়ে দিতে বলবো না। তারা নির্দোষ, আমি তাদের খালাস চাই। এখন আপনার (বিচারক) ন্যায় বিচারের প্রতিক্ষায় রইলাম।’
অপরদিকে আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলে রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল আইন ও উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তের উপর যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন।
তিনি বলেন, ‘আসামিপক্ষ ৬১ জন সাক্ষীর পর অধিকতর তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা এ বিষয়ে যে সব সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তাদের সিদ্ধান্ত আর এ মামলার ফ্যাক্ট এক নয়। তিনি উচ্চ আদালতের একটি সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করে বলেন, রায়ের পূর্বে যে কোন পর্যায়েই আদালত একটি মামলা ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৩ (৩)বি ধারা মতে অধিকতর তদন্তে পাঠাতে পারেন। এখনে অধিকতর তদন্তের আবেদনও যথাযথভাবে করা হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ২টি মোটিভে সেদিন গ্রেনেড হামলার দিকে রয়েছে। এক নম্বর শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সকল নেতাকে হত্যা করা। আর দ্বিতীয়টি বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানো। এভাবে নিরস্ত্র জনগণের উপর সমরাস্ত্র দিয়ে হামলা করা ইতিহাসে বিরল। আদালত সময় দিলে আগামী ধার্য তারিখে ল’ পয়েন্টের যুক্তি উপস্থাপন করব।’
বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন যুক্তি উপস্থাপন শেষ হওয়ার পর বলেন, “আপনারা ল’ পয়েন্টে যুক্তি উপস্থাপন করে আদালতের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সহায়ক করছেন। আশা করি সামনের দিনগুলোতেও করবেন।”
বুধবার যুক্তি উপস্থাপন শেষ হওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ‘আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। তবে তাদের যুক্তিতে আমরা একমত নই। আমরাও যুক্তি খণ্ডন করতে শুরু করেছি। মামলাটিতে ল’ পয়েন্টের রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলেই ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার দিন ধার্য করবেন।’
মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষ ২৫ কার্যদিবস ফ্যাক্টের উপর যুক্তি উপস্থাপন করেন। যা গত ১ জানুয়ারি তা শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং ১১ সরকারি কর্মকর্তার ৭ বছর কারাদণ্ড দাবি করেন। এরপর আসামিপক্ষ ফ্যাক্টের উপর যুক্তি ৮৭ কার্যদিবস উপস্থাপন শুরু করেন। যা গত ২৯ আগস্ট শেষ হয়। এরপর গত ৪ ও ৫ কার্যদিবস ল’ পয়েন্টে আসামিপক্ষ যুক্তি উপস্থাপন করলেন।
এ মামলার জামিনে থাকা আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডি’র সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম।
জড়িত থাকা ৪৯ আসামির মধ্যে ৮ জন জামিনে রয়েছেন।
অন্যদিকে, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে আটক আছেন। এছাড়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জেল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৮ জন আসামি পলাতক আছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভায় গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জনের মৃত্যু হয়। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন কয়েক শতাধিক। বর্তমানের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও শ্রবণশক্তি হারান।
এ ঘটনায় মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক ৩টি এজাহার দায়ের করেন।
সারাবাংলা/এআই/এমও