দিয়া-করিম মৃত্যুর ঘটনায় ৩০২ নয়, ৩০৪ ধারাই যথাযথ: পুলিশ
৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৮:০৪
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলার ৩০৪ ধারায় আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ফলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। পুলিশের দাবি হত্যাকারীদের বিচারে ৩০৪ ধারায় যথাযথ।
ইচ্ছা করে গাড়ি তুলে দিয়ে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পরও কেনো তাদের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারা আনা হলো না জানতে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘৩০২ ধারাটি এ ক্ষেত্রে আসবে না। ৩০৪ ধারাটি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা। ৩০২ ধারার সাজা মৃত্যুদণ্ড। ৩০২ ধারার জন্য তদন্তে যে আনুসাঙ্গিক বিষয়গুলো আসা দরকার তা পাওয়া যায়নি।’
দিয়া-করিমের মুত্যু: ৩০২ ধারায় অভিযুক্ত করা হয়নি আসামিদের
তিনি বলেন, ‘ ৩০২ ধারার ক্ষেত্রে পুর্ব পরিকল্পনা এবং নিশ্চিত মৃত্যু অনুযায়ী হত্যার পরিকল্পনা থাকতে হতো। কিন্তু তদন্তে তা পাওয়া যায়নি। যার কারণে ৩০২ ধারায় চার্জশিট আনা হয়নি। ৩০৪ যথাযথ ধারায় চার্জশিট প্রদান করা হয়েছে। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে যদি দুর্ঘটনা ঘটতো সেক্ষেত্রে ৩০৪(খ) ধারা পড়তো। সেক্ষেত্রে সাজা তিন বছর হওয়ার সম্ভাবনা থাকতো। যেহেতু ইচ্ছাকৃত করেছে তাই সবার বিরুদ্ধেই ৩০৪ ধারায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এতে যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
আবদুল বাতেন বলেন, রমিজ উদ্দিনের শিক্ষার্থী নিহত ও ১১ জন আহতের ঘটনায় মামলার তদন্ত শেষ করে দণ্ডবিধির ২৭৯, ৩২৩, ৩২৫, ৩০৪ ও ৩৪ ধারায় চার্জশিট দেওয়া হয়। এক মাসের মধ্যেই চার্জশিট প্রস্তুত করে তা আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। আদালত মামলার বিচার কাজ খুব দ্রুত শেষ করতে পারবেন এবং অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি দিতে পারবেন।
তিনি আরও জানান, ‘৬ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ৮ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের হলেও চার্জশিটে দুজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। কারণ তারা ঘটনার সময় ছিলেন না। অর্থাৎ তারা তৃতীয় বাসের হেলপার ও চালক। ঘটনার কিছুক্ষণ পরে মক্কা পরিবহনের বাসটি আসে।’
দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাবালে নূর পরিবহনেরই দুইটা গাড়ি একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা শুরু করে কার আগে কে যাবে। এ ধরণের প্রতিযোগিতা করার সময় একজন ড্রাইভার ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজেরন ওপর তুলে দেয়। সেখানে অনেক শিক্ষার্থীও ছিল। তখন ওই দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। প্রতিযোগিতামুলক গাড়ি চালিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা করে ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রদের ওপর গাড়ি তুলে দিয়ে মৃত্যু ঘটায়।
তিনি বলেন, দুই বাসের মালিক ও ড্রাইভার আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। মালিক বলেছেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, তারা জেনেই তাদের নিয়োগ করেছেন। এতে তার অপরাধ হয়েছে। কারণ তাদের প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেল চালানোর লাইসেন্স ছিল। এটা দিয়ে কখনোই বড় বাস চালাতে পারেন না তারা।
যাদের নামে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে তারা হলেন, যে বাসটি শিক্ষার্থীদের চাপা দেয় সেটির চালক হলেন মাসুম বিল্লাহ ও হেলপার হলেন এনায়েত হোসেন আর মালিক হলেন শাহাদাত হোসেন। বাকী তিনজন হলেন, যে বাসটি প্রতিযোগিতা করেছিল সেটির ড্রাইভার জোবায়ের হোসেন, হেলপার কাজী আসাদ ও মালিক জাহাঙ্গীর আলম। চার্জশিটে অভিযুক্ত চারজন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। বাকী দুজন কাজী আসাদ ও মালিক জাহাঙ্গীর আলম পলাতক আছেন। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী প্রমাণিত না হওয়ায় তৃতীয় বাসের চালক সোহাগ ও হেলপার রিপনকে অব্যাহতি দেওয়া দেয় ডিবি পুলিশ।
সারাবাংলা/ইউজে/এমআই
আরও পড়ুন: মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে সড়ক দুর্ঘটনায়
দিয়া-করিমের মামলার বিচার ৩০২ ধারায় হতে পারে বিদ্যমান আইনেই
জাবালে নূর পরিবহন দিয়া-করিমের মৃত্যু দিয়া-মিম শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট সড়ক দুর্ঘটনা