দিয়া-করিমের মুত্যু: ৩০২ ধারায় অভিযুক্ত করা হয়নি আসামিদের
৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৭:২৯
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে কুর্মিটোলা এলাকায় জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর প্রাণহানির ঘটনায় তদন্ত শেষে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
চার্জশিটে জাবালে নূর পরিবহনের মালিকসহ ছয় জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে দণ্ডবিধির ২৭৯, ৩২৩, ৩২৫, ৩০৪ ও ৩৪ ধারায়। এই মামলায় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার পরিবর্তে ৩০৪ ধারায় আসামিদের অভিযুক্ত করায় আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন: দিয়া-করিম মৃত্যুর ঘটনায় ৩০২ নয়, ৩০৪ ধারাই যথাযথ: পুলিশ
বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এই চার্জশিট জমা দিয়েছে বলে সারাবাংলা’কে নিশ্চিত করেছেন ডিএমপি গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান।
আলোচিত এ ঘটনায় আসামিদের ৩০৪ ধারায় অভিযুক্ত করায় বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটানোর দায়ে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন সাজা হতে পারে আসামিদের। যদিও এ ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হত্যাকাণ্ড ধরে ৩০২ ধারায় অভিযোগ আনা হলে দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার সুযোগ ছিল।
দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় শাস্তির বিধানে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি খুনের অপরাধ করলে ওই ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবে। অন্যদিকে, ৩০৪ ধারার শাস্তির বিধানে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বেপরোয়াভাবে যান চালিয়ে কারও মৃত্যু ঘটালে দায়ীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।
আরও পড়ুন: মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে সড়ক দুর্ঘটনায়
গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূরের দুই বাসের রেষারেষিতে রমিজ উদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থী দিয়া আক্তার মিম ও আব্দুল করিমের প্রাণহানির পর একাধিক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে, চালকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণেই প্রাণ হারাতে হয় দুই শিক্ষার্থীকে। চালক চাইলেই গতি নিয়ন্ত্রণ করে দুর্ঘটনা এড়াতে পারতেন। কিন্তু তিনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ না করায় প্রা হারাতে হয়েছে দুিই শিক্ষার্থীকে। ফলে ৩০২ ধারায় বিচার হতে পারে এ ঘটনার।
ওই ঘটনার পর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের বিচার দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় সম্ভব।’ গত ৬ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে ধরে নিয়ে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় বিচারের সুযোগ রয়েছে।’
একই কথা বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও। তিনি বলেন, নতুন আইনে (সড়ক পরিবহন আইনের সংশোধনীর খসড়া) দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় বিচার করার সুযোগ নেই। তবে ঘটনাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ধরে ৩০২ ধারায় বিচারের সুযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন: দিয়া-করিমের মামলার বিচার ৩০২ ধারায় হতে পারে বিদ্যমান আইনেই
আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল গত ৮ আগস্ট সারাবাংলাকে বলেন, দিয়া-করিমের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ৩০২ ধারায় চার্জশিট দিতে পারেন।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জাবালে নূর পরিবহনের মালিক, চালক ও হেলপারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন ৩০৪ ধারায়। ফলে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার কোনো সুযোগই নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই মামলাটিকে আসামিদের দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় অভিযুক্ত করার মতো উপাদান ছিল। এর আগে তাজরীন গার্মেন্ট কিংবা রানা প্লাজার ঘটনাকেও দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো হত্যা মামলা হিসেবেই বিচার হচ্ছে। এ ঘটনার ক্ষেত্রেও তাই হওয়ার কথা ছিল।’
আরও পড়ুন: চার্জশিটে জাবালে নূরের মালিকসহ আসামি ৬
এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘এই ঘটনা গঁৎবাঁধা তদন্তের বিষয় নয়। মানুষের নিয়ন্ত্রণে থাকে না বা দৈব-দুর্বিপাক— এমন ঘটনাগুলোকে দুর্ঘটনা বলা যায়। কিন্তু এটা তো তেমন ঘটনা নয়। সে ক্ষেত্রে এটা হত্যা মামলাই হওয়ার কথা। সেটা না হয়ে চার্জশিটে দুর্ঘটনা মামলা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ এ মামলায় অধিকতর তদন্ত হওয়া উচিত বলে মত দেন জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
উল্লেখ্য, দিয়া-করিমের মৃত্যুর পর রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা দুই সহপাঠী হত্যার বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজপথে নেমে আসে। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তারা রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেয়। এর মধ্যে তারা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে গাড়ি ও চালকের লাইসেন্স পরীক্ষাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। সরকারের পক্ষ থেকেও দুই শিক্ষার্থীর প্রাণহানির বিচারসহ শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়।
এরপর রাজধানীতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সড়ক পরিবহন আইনের সংশোধনীও ভেটিংয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সংসদের আগামী অধিবেশনেই এটি পাস হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এই আইনেও বেপরোয়া যানচালনার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রাখা হয়নি। এ অপরাধের জন্য শাস্তি ৩ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫ বছর করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
সারাবাংলা/ইউজে/জেএ/টিআর
জাবালে নূর পরিবহন দিয়া-মিম শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট সড়ক দুর্ঘটনা