চাঁদাবাজি মিরপুরে, পরিবারের দাবি না.গঞ্জে ছিলেন মোজাম্মেল
৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২৩:২৮
।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: মিরপুর মডেল থানায় শ্রমিক সমিতির এক নেতার দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক। তবে চাঁদাবাজির বিষয়ে খোলাসা করে কিছু বলছে না পুলিশ। বাদীর অভিযোগ, চাঁদার লেনদেন হয়েছিল মিরপুর-২ নম্বরে সনি সিনেমা হলের সামনে। তবে মোজাম্মেল হকের ছেলের দাবি, ওই সময় বাসাতেই ছিলেন তিনি।
বুধবার (৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে মোজাম্মেল হককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এরই মধ্যে একদিনের রিমান্ডও পেয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) মামলার বাদী, বিবাদীর পরিবার ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মোজাম্মেলন হকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছেন দুলাল মিয়া নামে শ্রমিক সমিতির এক নেতা। মামলার এজাহারে তার ঠিকানা শাহ আলী থানার গুদারাঘাট এলাকা উল্লেখ করা হয়েছে। নিজেকে তিনি শ্রমিক সমিতি মিরপুর রোডের সাধারণ সম্পাদক দাবি করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১০ থেকে ১৫ দিন হলো যাত্রী কল্যাণ সমিতির নেতা দাবি করে মোজাম্মেল হক নামে একজন ব্যক্তি দুলাল মিয়ার মোবাইলে কল করে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছেন। সেই অনুযায়ী ৩ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার দিকে মিরপুর-২ নম্বরে সনি সিনেমা হলের সামনে ১০ হাজার টাকা নিয়ে হাজির হন তিনি। ওই ১০ হাজার টাকা দেওয়ার পর মোজাম্মেল হক তাকে বাকি টাকা দুই দিনের মধ্যে দেওয়ার কথা বলেন। পরে পরিবারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে মামলা দায়ের করেন দুলাল মিয়া।
এ বিষয়ে মামলার বাদী দুলাল মিয়ার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ৩ সেপ্টেম্বর মোজাম্মেল হক সবশেষ ফোন করে দুই লাখ টাকার চাঁদার কথা বললে আমি ভয় পেয়ে
১০ হাজার টাকা নিয়ে বিকেল ৫টার দিকে মিরপুর সনি সিনেমা হলের সামনে যাই এবং তাকে টাকা দেই। বাকি টাকা দুই দিনের মধ্যে দিতে হবে জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘টাকা না দিলে মিডিয়া আছে আমার হাতে। তোমাদের সব অপকর্মের কথা ফাঁস করে দেবো।‘
মোজাম্মেল হক কিসের অপকর্মের কথা বলেছেন— জানতে চাইলে দুলাল মিয়া বলেন, আমরা নাকি শ্রমিক সংগঠনের নামে বিভিন্ন পরিবহন থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদা হাতিয়ে নেই। কিন্তু এসব অভিযোগ তো সঠিক নয়। তাই ৪ সেপ্টেম্বর মিরপুর মডেল থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা করি।
এদিকে, মোজাম্মেল হকের ছেলে জিয়াউল হক চৌধুরী বলছেন, তার বাবার বিরুদ্ধে আনা চাঁদাবাজির অভিযোগ মিথ্যা। কারণ যে সময়ে তিনি চাঁদা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে, ওই সময়ে তার বাবা বাসাতেই ছিলেন।
জিয়াউল হক সারাবাংলাকে বলেন, ৩ সেপ্টেম্বর বাবা সারাদিন নারায়ণগঞ্জের সানারপাড় এলাকার বাসায় ছিলেন। বিকেল ৫টার দিকে তিনি বাসা থেকে বের হন এটিএন বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলে জয় ই মামুনের পরিচালনায় টক শো অনুষ্ঠান রেকর্ড করার জন্য। সেখান থেকে তিনি বাসায় ফিরে আসেন রাত ৯টার দিকে। সেই টকশো রাত ১২টার দিকে প্রচারিত হয়।
জিয়াউল হক বলেন, সামনে সড়ক পরিবহন আইন চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে যাত্রী অধিকারের পক্ষ থেকে কেউ বা কোনো প্রতিনিধি যেন না থাকে, মালিক পক্ষ একাই যেন কাজ করতে পারে; সে কারণেই হয়তো বাবা বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে এই মামলা করা হয়েছে। আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে এমনটাই ধারণা করছি। এটি একটি মিথ্যা মামলা। আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব। পুলিশকে আমরা কল রেকর্ড খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বজলুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, মামলার পর তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে আমি আসামিকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করেছি। তিনি কে বা তার পরিচয় কী, তা যাচাই করিনি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা ছয় দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলাম। আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। রিমান্ডে তাকে চাঁদাবাজি নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে। তদন্ত শেষ হলে বোঝা যাবে আসল ঘটনা কী।
ডিএমপির একজন পুলিশ পরিদর্শক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, সাধারণত এসব বিষয়ে মামলা না নিয়ে প্রথমে একটা জিডি করতে বলে। জিডি ধরে তদন্ত করতে গিয়ে সত্যতা পেলে সেটি মামলায় রূপান্তরিত হয়। কিন্তু যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিবের বেলায় তদন্ত ছাড়াই সরাসরি অভিযোগ নিয়েই এজাহার দায়ের হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর
চাঁদাবাজির অভিযোগ মোজাম্মেল হক যাত্রী কল্যাণ সমিতি যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব