Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘এই নিয়া চৌদ্দবার বাড়ি সরবার নাগচি’


৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৮:৫১

।। নিয়াজ আহমেদ সিপন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

লালমনিরহাট: ‘একবার-দুইবার নোয়ায়। এই নিয়া চৌদ্দবার বাড়ি সরবার নাগচি। গত আইতে একটা ঘর নদীত ভাসি গেইচে। বাকি ঘর তিনটা খুলচি। এগুলা নিয়া এলা হামরা কোনটে যাই বাহে- এই নদী হামাক ফকির বানাইছে।’ কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের বাগডোরা মধ্যপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ আব্বাস উদ্দিন।

তিনি জানান, ৩০ বছর আগে বিশাল জোতদার ছিল আব্বাস উদ্দিনের। প্রথমে তিস্তার ভাঙনে বিলিন হয়ে যায় খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কালমাটি গ্রামের হাট।  এরপর পুরো গ্রাম চলে যায় তিস্তার গর্ভে। অন্যদের মতো এই জোতদার পরিবারের জায়গা হয় রাস্তার ধারে। প্রায় দুই বছর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আয় করা টাকায় গড়ে তোলেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। সে ঘরও ধুয়ে নিয়ে যায় তিস্তার স্রোত। গত ৩০ বছরে ১৩ বার নতুন করে শুরু করেছেন আব্বাস উদ্দিন। যৌবনের সকল শ্রম নিয়ে গেছে তিস্তা।

“ছেলেদের টাকায় গত বছর দেড় লাখ টাকায় বাগডোরা মধ্যপাড়া গ্রামেই ১২ শতাংশ জমি কিনে বাড়ি করেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) মধ্য রাতে তিস্তার ভাঙন শুরু হলে আবারো শুরু হয় তাদের যুদ্ধ। বেড়া খুলে নিতে নিতে ভেসে যায় একটি ঘর।”

আব্বাস উদ্দিন জানান, তার পরিবারের সদস্যরা এখন আত্মীয় বাড়িতে। তার তিন ছেলে। বড় ছেলে সিরাজ মিয়া ৪০ দিন আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

কেবল আব্বাস উদ্দিন নন। ওই গ্রামের অন্তত অর্ধশত মানুষের ভাগ্য যেন একই কলমে লেখা হয়েছিল।

দিনমজুর কালাম মিয়া (৫০) আশ্রয় নিয়েছেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। দশম বারের মতো তার এক চালা টিনের ঘর ভেসে গেছে তিস্তার স্রোতে। এখন শঙ্কা- কখন ভেসে যায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। রাতে পালা করে জেগে থাকেন তারা স্বামী-স্ত্রী।

বিজ্ঞাপন

বাগডোরা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেওয়া গৃহবধূ মৈরন বেগম (২৮) জানান, গত ঈদের দিন ঘরহারা হন মৈরন বেগম। গত এক মাসে তার মতো পথে এসে দাঁড়িয়েছেন বাগডোরা মধ্যপাড়া গ্রামে প্রায় অর্ধশত পরিবার। একটু ভালো করে বাঁচার আশায় কেউ কেউ পরিবার নিয়ে রওয়ানা হয়েছেন অন্য জেলায়।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এর মধ্যে চলছে চড়া সুদের ব্যবসা। তারা জানান, যাদের তেমন আত্মীয় আছে- তারা আত্মীয়দের বাঁশ বাগান কেটে, ডোবায় মাটি ফেলে নতুন ঘর তুলেছেন। আমরা দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চরা সুদে ঋণ নিচ্ছি। আশেপাশে যদি জমি বন্দক পাই তাহলে বাঁধ থেকে সরে যাব।

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা বাহাদুরপাড়া গ্রামের গরিবুল্লাটারী পাড়া গত এক সপ্তাহে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে বাহাদুরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাহাদুরপাড়া মসজিদ। শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে কয়েক হাজার পরিবার।

ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে এলাকাবাসী মানববন্ধন করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

মহিষখোঁচা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আজাহারুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে তার ইউনিয়নে ১৩০টি পরিবারের বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের ঢেউ টিন ও নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে। ভাঙন রোধে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এছাড়াও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙন কবলিত এলাকার খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।

সারাবাংলা/এটি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর