মেঘনায় ইলিশের ঝাঁক
৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৯:১৬
।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।
লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় ইলিশের ঝাঁক। এতে আনন্দিত জেলে ও ব্যবসায়ীরা। কদিন আগেও নদীতে ইলিশের দেখা না থাকায় খালি হাতে ফিরছিলেন এখানকার জেলেরা। এখন মেঘনায় জাল ফেললেই ধরা পড়ছে মাঝারি ও বড় সাইজের ইলিশ।
জেলা মৎস্য বিভাগের দাবি, দেরিতে হলেও মেঘনায় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। নদীতে তাদের কড়াকড়ির কারণসহ জাটকা আহরণে নিষেধাজ্ঞার কারণে ইলিশ পরিপূর্ণ রূপ পেয়েছে। এ কারণে মেঘনার রামগতি, কমলনগরের মতিরহাট, সদর উপজেলার মজু চৌধুরীর হাট, আশপাশের বাজারসহ রায়পুর উপজেলার হাটবাজারেও পর্যাপ্ত ইলিশ দেখা যাচ্ছে।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ইলিশের সাইজও বেশ বড়। এতে আর আনন্দিত এখানকার পাইকার, আড়তদার, জেলে ও নদী নির্ভরশীল শ্রমিকরা।
অপরদিকে দীর্ঘদিন অলস সময় কাটানোর পর ফের জমজমাট হতে শুরু করেছে এখানকার মাছঘাটগুলো। জমে উঠছে মৎস্য আড়তগুলো। দাম একটু চড়া হলেও ইলিশের স্বাদ পেয়ে খুশি ক্রেতারা। জেলেদের মনে বইছে আনন্দের বন্যা।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মেঘনা নদী নির্ভরশীল সরকারি তালিকায় ৩৬ হাজার ৭ শত জেলে থাকলেও নদী ও মাছ নির্ভরশীল ৪০ হাজার জেলে পরিবার। এখানকার জেলেরা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেই চলে তাদের দৈনন্দিন জীবন। মেঘনা নদী ঘিরে চলে তাদের জীবন। এখন পুরোদমে সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ আসতে শুরু করেছে নদীতে।
জেলেরা জানান, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে নদীতে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় মাছঘাটগুলোতে ইলিশের আমদানি ও রফতানিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। মেঘনার লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার ১শ’ কিলোমিটার পর্যন্ত ছোট-বড় প্রায় ৩০টি মাছ ঘাটে জেলেরা মাছ বিক্রি করছেন।
জেলেরা মেঘনায় গত কয়েক মাস ধরে ইলিশের দেখা পায়নি। এতে দাদনের দায় নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন তারা। কিন্তু গত চার/পাঁচদিন ধরে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করছে। বিশেষ করে মেঘনায় ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। হঠাৎ করেই বৃষ্টি হওয়াতে মাছের আনাগোনা দেখা গেছে। এখন জাল ফেললেই মিলছে মাঝারি ও বড় সাইজের ইলিশ। পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ গ্রাম থেকে এক কেজিসহ সোয়া কেজি ওজনের ইলিশও।
কথা হয় চল্লিশ বয়সের জেলে মোকলেছ মোল্লার সঙ্গে। তিনি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার শিক্ষা গ্রামের জেলে।
তিনি জানান, অন্যবছরের তুলনায় লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও মতিরহাট নদীতে ইলিশের পরিমাণ অনেক বেশি। মাছের সাইজও বড়। অন্যবার এ সময় জাটকা ধরা পড়ত। কিন্তু এখন ৫০০ গ্রাম থেকে এক কেজি, সোয়া কেজি ওজনের ইলিশই বেশি।
রামগতি চর লক্ষ্মী এলাকার জেলে নুরুল ইসলাম জানান, আরো ১০ দিন আগে ইঞ্জিনচালিত একটি ট্রলার নদীতে নিয়ে গেলে তারা মাত্র সাতটি মাছ পান। ট্রলারের জ্বালানি খরচ ও জেলেদেরকে পারিশ্রমিক দিতে গিয়ে পকেট থেকে ৫০০ টাকা গচ্ছা যায়। কিন্তু শুক্রবার নদীতে গিয়ে পাঁচ ঝুড়ি মাছ পেয়েছেন তিনি। জালে ধরা পড়া মাছগুলোর সাইজ অন্যান্য বছরের চেয়ে বড়। সোবহান জমাদারের মতো একই অবস্থা মেঘনা উপকূলীয় জেলেদের। এক সপ্তাহ ধরে যেভাবে জালে ইলিশ ধরা পড়ছে এটি অব্যাহত থাকলে ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে বলে জানান।
কমলনগর উপজেলার সাহেবের হাট ইউনিয়নের জেলে হাছান মাঝি, হারুন মাঝি, নুর নবীসহ রামগতির পূর্ব চর সীতা গ্রামের মৃত অজিউল্লার ছেলে শাহজাহান, শরাফত আলীর ছেলে আবু তাহের জানান, নদীতে প্রচুর ইলিশ পড়ছে।
রায়পুরের মৎস্য পাইকার সুফিয়ান মোল্লা, আলতাফ মান্দ জানান, নদীতে ইলিশ ধরা পড়ায় ঈদের পরও ঈদ উৎসব বিরাজ করছে এ জেলার জেলেসহ তাদের পরিবারদের মাঝে।
রায়পুরের আড়তদার জয়নাল দেওয়ান জানান, এখন নদীতে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। এতে জমে উঠছে নদীর পাড়ে গড়ে উঠা মৎস্য আড়তগুলো। দাম একটু চড়া হলেও ইলিশের স্বাদ পেয়ে খুশি ক্রেতারা। একই এলাকার জেলে কাশেম বেপারী জানান, নদীতে ইলিশ পেয়ে আনন্দিত তিনিসহ এখানকার পাইকার, আড়তদার, জেলে ও নদী নির্ভরশীল মানুষগুলোও।
জেলার কয়েক এলাকায় খোঁজখবর নেওয়াসহ রোববার সকালে জেলার কমলনগর উপজেলার মতির হাট মাছের বাজারে গিয়েও নদীতে ইলিশ পড়ার প্রমাণ দেখা যায়।
মতির হাট এলাকার পাইকার মিনু বেপারী জানান, মাছের সাইজ অনুযায়ী হালিপ্রতি ইলিশ ১৫শ’ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। এতে বেশি মুনাফা পাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বড় সাইজের ইলিশের দাম অনেক বেশি।
মৎস্য আড়তদার ইউছুফ মিয়া জানান, এখন ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করছে। জেলেরাও নৌকা, জালসহ মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে নেমে পড়ছেন নদীতে। স্থানীয় বাজারের চেয়ে ইলিশের দাম ঢাকায় অনেক বেশি। তাই ঢাকার বাজারে ইলিশ বিক্রির ধুম পড়ে যাবে এবার।
জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির রায়পুর প্রতিনিধি মোস্তফা ব্যাপারিসহ কয়েকজন আড়তদার জানান, মেঘনা নদীতে কয়েকদিন ধরে যেভাবে ইলিশ ধরা পড়ছে শেষ পর্যন্ত তা থাকবে কি না বোঝা যাচ্ছে না। বর্তমানে হাটবাজারে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। এখন বাজারে জাটকা নেই বললেই চলে। বড় ইলিশ বিক্রি করে জেলেরাও লাভবান হচ্ছে।
এদিকে সিনিয়র রায়পুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন জানান, মেঘনা নদীতে কদিন ধরে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস,এম মহিব উল্লাহ জানান, নদীতে পানির প্রভাব থাকায় ও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাতের কারণে সাগর থেকে মাছ নদীর মোহনায় আসতে শুরু করে। এছাড়া জাটকা আহরণে কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইলিশ পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে। এতে করে ঝাঁকে ঝাঁকে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে। জেলেরা আরেকটু সচেতন হয়ে ঝাটকা নিধনসহ মৎস্য সংরক্ষণ আইন মেনে চললে এভাবে সারা বছরই ইলিশ পাওয়া যাবে। তখন মানুষ সারা বছরই বড় ইলিশের স্বাদ পাবে বলে জানান তিনি।
সারাবাংলা/একে