রোহিঙ্গা ইস্যুর তদন্ত করবে আইসিসি, মিয়ানমার বলছে এখতিয়ার নেই
৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১০:১৯
।। সারাবাংলা ডেস্ক।।
ঢাকা: মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের রাখাইন প্রদেশ থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। তবে মিয়ানমার দাবি করছে, সেই অধিকার নেই আইসিসি’র।
বৃহস্পতিবার (৬ সেপ্টেম্বর) মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট আইসিসি’র এ সম্পর্কিত উদ্যোগকে ত্রুটিপূর্ণ ও সন্দেহজনক বলে অভিহিত করেছেন। পরে শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) আইসিসির এক বিবৃতিতে আইসিসির তদন্তের উদ্যোগকে প্রত্যাখান করেছে মিয়ানমার।
বার্তা সংস্থা এপি’র বরাত দিয়ে ইউএনবির খবরে বলা হয়, এর আগে, বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডসের হেগে আইসিসির প্রাক-বিচারিক শুনানি আদালত রোহিঙ্গাদের রাখাইন থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা তদন্তের সিদ্ধান্ত নেন। এই সিদ্ধান্তে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের নিজ বাড়িঘর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হবে।
আইসিসির এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে শুক্রবার (৭ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলন করেন মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ এইচ থ। তিনি জানান, এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগকে অস্বীকার করে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট বলেন, আইসিসির সিদ্ধান্তটি ত্রুটিপূর্ণ। তাদের এমন সিদ্ধান্তের মধ্যে বাজে ধারণা ও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।
ওই বিবৃতে আরও বলা হয়, পরিকল্পিতভাবে কোনো অঞ্চলে অভিযান চালানো হয়নি। বরং বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে আনতে মিয়ানমার সরকার কাজ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে রয়টার্সের কারাদণ্ড পাওয়া দু্ই সাংবাদিকের প্রসঙ্গ টেনে মিয়ানমার সরকারের ওই মুখপাত্র আরও বলেন, আদালত স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে সরকারের কোনো প্রভাব নেই।
এর আগে, এ বছরের এপ্রিলে আইসিসির প্রধান আইনজীবী ফাতোও বেনসুদার জানতে চেয়েছিলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ঘটা ঘটনা তদন্তের অধিকার আইসিসির রয়েছে কিনা। এ বিষয়েই সংশ্লিষ্ট পক্ষদের বক্তব্য শুনে বৃহস্পতিবার প্রাক-শুনানি আদালত সিদ্ধান্তের কথা জানান। তারা বলেন, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক আদালতের সদস্য নয়। তবে দেশটি থেকে জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সেই বাংলাদেশ আইসিসি’র সদস্য। ফলে রোম সনদ অনুযায়ী বাংলাদেশ সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে আইসিসি এ ঘটনা তদন্ত করার ক্ষমতা রাখে বলে মনে করছে আইসিসি।
তবে মিয়ানমার বরাবরই বলে এসেছে, তারা আইসিসির সদস্য নয় বলে আইসিসি এই তদন্ত করার এখতিয়ার আখে না। ফলে আইসিসির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হলে বাংলাদেশ জবাব দিলেও মিয়ানমার তার কোনো জবাব দেয়নি।
প্রচলিত নিয়াম অনুযায়ী, কোনো দেশ আইসিসির সদস্য না হলে সেই দেশের সীমানায় ঘটা কোনো অপরাধের বিচার এ আদালত সরাসরি করতে পারে না। কিন্তু আইসিসির সদস্য বাংলাদেশ এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আইসিসি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনাটিকে আন্তঃসীমান্ত অপরাধ বিবেচনা করছে বলেই তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টের শেষ দিকে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন চালাতে শুরু করে। ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া হয় হত্যা, ধর্ষণের মতো অপরাধের শিকার হয়ে দলে দলে রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করে। এরপর থেকে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় হয় তাদের। রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো এই নির্যাতনকে ‘জাতিগত নিধনের প্রামাণ্য উদাহরণ’ (টেক্সটবুক এক্সাম্পল অব এথনিক ক্লিনজিং) বলে অভিহিত করেছে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অধিকার সংস্থা।
সারাবাংলা/একে