‘দারিদ্র্য কমলেও ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে’
৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২০:০২
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বাংলাদেশে দারিদ্র্য কমলেও ক্ষুধার্ত মানুষের অনুপাত বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ প্রফেসর জুমো কউমি সুন্দরম। তিনি বলেন, খাদ্য উৎপাদন বাড়লেই দারিদ্র্য কমে না। দারিদ্র্য কমাতে হলে খাদ্যের সুষম বণ্টন এবং মান নিশ্চিত করতে হয়।
শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর হোটেল লেকশোরে অনুষ্ঠিত সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) উদ্যোগে এসডিজি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ; খাদ্য, জ্বালানি ও অসমতা শীর্ষক বার্ষিক একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে ‘কাউন্সিল অফ ইমিনেন্ট পারসন’ মালয়েশিয়ার অর্থনীতিবিদ প্রফেসর জুমো কউমি সুন্দরাম এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহান, উপস্থিত ছিলেন, সিপিডির সিনিয়র রিচার্স ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্রাচার্য, ড. মুস্তাফিজুর রহমান, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
প্রফেসর জুমো বলেন, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করতে হলে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পৃথিবীব্যাপী অসমতা দূরীকরণে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়ছে তা কতটা কার্যকর তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এই সব সমস্য দূরীকরণে পৃথিবীব্যাপী যে রিসোর্স দরকার তা না করে বরং অনেক ক্ষেত্রে উল্টোটাই করা হচ্ছে। পৃথিবীব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচনের পরিবর্তে অভিবাসন সমস্যার দিকে বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্র্য কমলেও পুষ্টিহীনতা এবং ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা কমছে না, বরং অনেক ক্ষেত্রেই তা বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান পুষ্টিহীনতা পৃথিবীব্যাপী এক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দরিদ্রতা এবং পুষ্টিহীনতা এ দুইটি জিনিসের মধ্যে একটি সর্ম্পক থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে তার মিল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে এই দুইটি জিনিসের মধ্যে কোনো ক্রটি থাকতে আছে কিনা তাও দেখা উচিত।
প্রফেসর জুমো কউমি সুন্দরম বলেন, বাংলাদেশে দরিদ্রতা বিমোচনে কিছুটা উন্নতি করলেও পুষ্টিহীনতার দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি হয়নি। বরং অনেক ক্ষেত্রে তা বেড়েছে। ফলে পুষ্টিহীনতা বিষয়ে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রফেসর জুমো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশকে মধ্যবর্তী কোনো পদক্ষেপ রাখার সুযোগ নেই। এমনকি এলডিসিগুলোকেও এমন পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে কয়লা ও তেলভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট করার পরিবর্তে সরাসরি নবায়ণযোগ্য জ্বালানী দিকে নজর দিতে হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সোলার প্যানেল ব্যবহার করা হচ্ছে, এর দামও তুলনামূলতভাবে কম। এটা বাংলাদেশের জন্য একটা বড় ধরনের ইতিবাচক দিক।
তবে এর পাশাপাশি বায়ুভিত্তিক জ্বালানীর দিকেও বাংলাদেশকে নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, কয়লা ও তেলভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট বাংলাদেশের জন্য অনেকটা উল্টোদিকে যাত্রা করার মতো পরিস্থিতি। বরং এসব পাওয়ার প্ল্যান্ট কমিয়ে বাংলাদেশকে নবায়নযোগ্য জ্বালানীর দিকে নজর দিতে হবে।
প্রফেসর জুমো অসমতমার ক্ষেত্রে বলেন, পৃথিবীব্যাপী পরিসংখ্যান অনুযায়ী অসমতা সাধারণত প্রবৃদ্ধি কমায়। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী যত বেশি উন্নত হচ্ছে ততবেশি অসমতা এবং বৈষম্য বাড়ছে। এ ছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও বিশ্বে অসমতা তথা বৈষম্য বাড়ছে। তবে পৃথিবীব্যাপী সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে বৈষম্য কমানো অনেক ক্ষেক্রে সম্ভব হতো।
তিনি বলেন, সাধারণত উন্নত দেশগুলোর পণ্যগুলো প্যাটেন রুলসসহ নানা নিয়ম কানুন থাকার কারণে তাদের পণ্যগুলোর বাজারমূল্য তুলনামূলকভাবে কমছে না। যেভাবে কমছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর পণ্যের দাম।
অন্যদিকে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যপক রেহমান সোবহান বলেন, চীন বর্তমানে আমেরিকায় অনেক বড় বিনিয়োগ করছে। চীন চাইলে আমাদের দেশগুলোতে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে পারে। তবে চীনের বিনিযোগ বাড়াতে এই অঞ্চলের দেশগুলোর নেতৃত্বকে আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
সারাবাংলা/জিএস/এমআই