আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ট্রেনে, বিএনপি…
৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২০:৩৩
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপিসহ প্রধান বিরোধী দলীয় জোটের অংশগ্রহণ ছাড়াই ‘একতরফা’ নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের এমপি-মন্ত্রীরা ভাষণ-বক্তৃতায় বার বার বলেছেন, ‘নির্বাচনী ট্রেন মিস করেছে বিএনপি।’ আবার স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পর বলা হয়েছে, ‘ইন্টার সিটিতে না উঠে লোকাল ট্রেনে উঠেছে বিএনপি।’
রাজনীতিতে গত পাঁচ বছর ধরে চলে আসা এই ‘ট্রেন’ শব্দটি এতদিন ছিল উপমা হিসেবে। কিন্তু আজ শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সেটা বাস্তবে রূপ দিলো আওয়ামী লীগ। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ট্রেনে চেপে উত্তরবঙ্গ সফর করছেন।
নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে এবং সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম জনগণের কাছে তুলে ধরতে আওয়ামী লীগের এই উদ্যোগকে ওবায়দুল কাদের নির্বাচনী যাত্রা হিসেবেই বর্ণনা করেছেন। তিনি সরাসরি বলেছেন, ‘এই যাত্রা আমাদের নির্বাচনী যাত্রা। এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে।’
অর্থাৎ তিন মাস সময় হাতে রেখেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ট্রেনে উঠে পড়লো। এখন প্রশ্ন হচ্ছে— রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি কী করবে? তারা কি এবারও ‘নির্বাচনী ট্রেন’ মিস করবে? নাকি তারাও উঠে পড়বে নির্বাচনী ট্রেনে?
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের আদালতে বারান্দায় রেখে তারা নির্বাচনী ট্রেনে উঠে পড়লো— এটা কোনো গণতান্ত্রিক আচরণ হতে পারে না। এ দেশের জনগণ এটা মেনে নেবে না।’
‘নির্বাচনী ট্রেনে কবে নাগাদ উঠবে বিএনপি? অর্থাৎ প্রচারণায় কবে নাগাদ নামবে বিএনপি নেতারা’— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ১ সেপ্টেম্বর আমরা জনসভা করেছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে ওটাকেই আমরা নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে নিচ্ছি। দেখা যাক, সামনের পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়। তার ওপর ভিত্তি করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’
দলীয় সূত্রগুলো বলছে, নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে এখনো দ্বিধায় রয়েছে বিএনপি। অস্তিত্ব রক্ষায় দলটির একটি অংশ খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেই নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন। তাদের যুক্তি, নির্বাচনে না গেলে বিএনপি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে দলটি। তাই নির্বাচনে গিয়ে দলের অস্তিত্ব রক্ষা করা এই মুহূর্তে বেশি প্রয়োজন।
তাছাড়া নির্বাচনে গিয়ে বিরোধী দল হিসেবে স্থান নিশ্চিত করতে পারলে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন আরও জোরালোভাবে করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে দলের এই অংশ। তখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সরকারের ওপর চাপ তৈরিরও একটি সুযোগ পাবে বিএনপি। ৭৪ বছর বয়সে আর কারাগারে থাকতে হবে না খালেদা জিয়াকে।
কিন্তু বিএনপির মধ্যম সারির কিছু নেতা খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের প্রতি আনুগত্যের পরাকাষ্ঠা দেখাতে গিয়ে খালেদাবিহীন নির্বাচনে ঘোর বিরোধিতায় নেমেছেন। তাদের পরিষ্কার কথা— খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপির জন্য আত্মঘাতী হবে।
তারা বলছেন, খালেদা জিয়া কারাগারে থাকলে নির্বাচনের মাঠে সমান্তরালভাবে খেলতে পারবে না বিএনপি। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচনী প্রচারণা চালাবেন, আর বিএনপির চেয়ারপারসন কারাগারে থাকবেন— এতে করে সাধারণ ভোটারকে আকৃষ্ট করা বিএনপির জন্য কঠিন হবে। সুতরাং নির্বাচনে গিয়ে আরও ৫ বছরের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকে বৈধতা দেওয়ার কোনো মানে নেই।
তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের ট্রেনেই দেখা যাবে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে— এমনটিই শোনা যাচ্ছে দলটির অন্দর মহলের আলোচনায়। কারণ, গত বছর নির্বাচনী ট্রেন মিস করায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে বার বার বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন বয়কট করে ভুল করেছে বিএনপি।’ এবার হয়তো সেই ভুল করবে না দেশের অন্যত বৃহৎ রাজনৈতিক দলটি।
এ প্রসঙ্গে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা টোটাল সিচুয়েশন অবজার্ভ করছি। সঠিক সময়, সঠিক সিদ্ধান্তই আমরা নেব। শুধু এটুকু জেনে রাখুন, ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচন এবার হবে না। জনগণ হতে দেবে না।’
আরও পড়ুন-
নির্বাচনী ট্রেনযাত্রায় আওয়ামী লীগের নেতারা
দল শক্তিশালী করতেই ট্রেন সফর: ওবায়দুল কাদের
সারাবাংলা/এজেড/টিআর
আওয়ামী লীগ একাদশ জাতীয় নির্বাচন জাতীয়-নির্বাচন নির্বাচন নির্বাচনী ট্রেন বিএনপি