ডাবল ফার্স্ট ক্লাস রেখে নবমকে নিয়োগের সুপারিশ!
৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২০:৪২
।। ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভিন্ন সেশনের একাধিক প্রথম স্থানে থাকা প্রার্থীদের বাদ দিয়ে মেধাক্রমে নবম স্থানের এক প্রার্থীকে প্রভাষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মেধা তালিকায় শীর্ষে থাকা প্রার্থীসহ ওই বিভাগের শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা।
সূত্র জানায়, গত ১৩ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদের সভাপতিত্বে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে তিনজন প্রভাষক (স্থায়ী) নিয়োগর জন্য বোর্ড বসে। অন্যান্য বোর্ড সদস্যরা ছিলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নেহাল করিম, অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম খান ও অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা।
বোর্ডে ৩৪ জন প্রার্থীর মধ্য থেকে তিনজনকে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। সুপারিশপ্রাপ্তরা হলেন ইশরাত জাহান ইয়ামুন; সিজিপিএ অনার্স ও মাস্টার্সে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৭৪ ও ৩ দশমিক ৮৮, ওয়াসফিয়া শাম্মা; সিজিপিএ যথাক্রমে ৩ দশমিক ৭২ ও ৩ দশমিক ৮৩ এবং ফাইজুল হক ইশান; সিজিপিএ যথাক্রমে ৩ দশমিক ৫৮ এবং ৩ দশমকি ৭৫ (মেধাক্রম নবম)
এর মধ্যে ফাইজুল হক ইশানকে নিয়োগের সুপারিশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, অন্তত ১৫ জন প্রার্থী সিজিপিএতে তার থেকে এগিয়ে ছিলেন। এর মধ্যে তিনজন প্রার্থী ছিলেন যারা অনার্স ও মাস্টার্স উভয় পরীক্ষায় ডাবল ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। এ ছাড়া অন্তত দুজন প্রার্থী ছিলেন যারা উভয় পরীক্ষায় মেধাক্রমে তৃতীয় ছিলেন।
সুপারিশপ্রাপ্ত ফাইজুল হক ইশানের থেকে মেধাক্রমে এগিয়ে থাকা কয়েকজন প্রার্থীদের মধ্যে আছেন- সাইফুল ইসলাম, অনার্স ও মাস্টার্সে সিজিপিএ যথাক্রমে ৩ দশমিক ৬৬ ও ৩ দশমিক ৮২ (মেধাক্রম প্রথম), মুহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন সিজিপিএ যথাক্রম ৩ দশমিক ৭৬ ও ৩ দশমিক ৯২ (মেধাক্রম প্রথম), তৌহিদ হোসেন খান (অনার্সে প্রথমস্থান বিদেশি ডিগ্রি আছে), এ বি এম নুরুল্লাহ সিজিপিএ যথাক্রম ৩ দশমিক ৬৩ ও ৩ দশমিক ৭৬, শেখ রুকাইয়া হাসান সিজিপিএ ৩ দশমিক ৭১ ও ৩ দশমিক ৭৩, রাসেল হোসাইন সিজিপিএ ৩ দশমকি ৬৩ ও ৩ দশমকি ৭৮ (মেধাক্রম তৃতীয়), শামসুল আরেফিন সিজিপিএ ৩ দশমিক ৬৬ ও ৩ দশমিক ৭৩ (মেধাক্রম তৃতীয়), মাসুদুর রহমান সিজিপিএ ৩ দশমকি ৬৫ ও ৩ দশমকি ৬৮।
এই ঘটনায় মেধাতালিকায় শীর্ষে থাকা প্রার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এক প্রার্থী নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ভাইভা বোর্ডে ইচ্ছাকৃতভাবে হেনস্তা করা হয়েছে। শীর্ষ মেধাবীদের বাদ দিয়ে অন্যদের শিক্ষক করলে বিশ্ববিদ্যালয়ই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক অযোগ্যদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলতেন বর্তমান প্রশাসনে থাকা লোকজন। এখন তারাই অযোগ্যদের নিয়োগে সুপারিশ করছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভয়াবহ হবে।
এদিকে, গোপন সূত্রে জানা গেছে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বর্তমান ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম সমালোচিত সুপারিশকৃত ইশানের থিসিস সুপারভাইজার ছিলেন। ভাইভাতে তিনি তাকে অধিক নম্বর দিয়েছেন বলে অন্যান্য নিয়োগপ্রার্থীরা অভিযোগ তুলেছেন। এ ছাড়া তাকে আগে থেকে প্রশ্ন শিখিয়ে নিয়ে আসা হয় বলে একজন বোর্ড সদস্য অভিযোগ তোলেন
মেধাবীদের রেখে তুলনামূলক কম মেধাবীকে সুপারিশের বিষয়ে অধ্যাপক সাদেকা হালিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিন্ডিকেট সভার পর কথা বলব। আমরা কেবল সুপারিশ করেছি। সিন্ডিকেট চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’ তিনি সিলেকশন বোর্ড সভা প্রধান অধ্যাপক নাসরীন আহমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য বলেন। আরেকজন বোর্ড সদস্য অধ্যাপক নেহাল করিমও উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) সঙ্গে কথা বলার জন্য বলেন।
এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য ও সিলেকশন বোর্ড সভা প্রধান অধ্যাপক নাসরীন আহমাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা দেখব।’
বিষয়টি অবহিত করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, আমার কাছে না আসলে তো বুঝবো না। ওটা সিলেকশন কমিটির কাছে। তার কাছে আসলে তিনি দেখবেন বলে জানান উপাচার্য।
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের জন্য উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) এর সভাপতিত্বে বোর্ড বসে। বোর্ডে সুপারিশকৃতদের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হয়। আগামী পরশু সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা রয়েছে।
সারাবাংলা/কেকে/এমআই