‘পুলিশ ট্রাফিক আইন ভাঙলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও ছাড় নয়’
৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২১:৩৭
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: শুধু সাধারণ নাগরিক কিংবা বাসচালক নয়, কোনো পুলিশ সদস্য ট্রাফিক আইন ভাঙলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে অঙ্গীকার করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
আজ শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শাহবাগ মোড়ে পুলিশের মাসব্যাপী ট্রাফিক সচেতনতামূলক কার্যক্রম উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আলোচনা সভায় নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন অভিযোগ করে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করেন।
তার এই অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, কাঞ্চন ভাইয়ের একটা কথার জবাব দিতে হয়। এরই মধ্যে আমি ঘোষণা দিয়েছি, পুলিশের কোনো সদস্য যদি ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করেন, তার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। এক বিন্দু, এক সুতা, এক সরিষা পরিমাণ ছাড়ও দেওয়া হবে না। ট্রাফিক পুলিশ, ডিএমপি পুলিশ বা অন্য কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কেউ কোনোভাবেই ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বহু সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আগামীতেও নেওয়া হবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমি আমাদের শিশু সন্তানদের ধন্যবাদ দিতে চাই, যারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের নৈতিক মনোবলকে সুদৃঢ় করেছে, আইন প্রয়োগ করতে আমাদের সাহায্য করেছে। এজন্য আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। সেদিন আমি বলেছিলাম, তোমরা পথ দেখিয়েছ, আমাদের বিবেককে ধাক্কা দিয়েছ, আমরা তোমাদের এ শিক্ষাটাকে গ্রহণ করেছি। আমরা চেষ্টা করব সড়কের বিশৃঙ্খলা বন্ধ করে শৃঙ্খলা আনার জন্য। সে থেকে আমরা ১০ দিনের ট্রাফিক সপ্তাহ গ্রহণ করেছিলাম। ঈদের পরে আমরা মাসব্যাপী কর্মসূচি নিয়েছি। কিন্তু আপনারা যদি আইন না মানেন, তাহলে আমাদের করণীয় কী।
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, মালিক আইন মানে না, শ্রমিক আইন মানে না, পথচারী আইন মানে না এমনকি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও আইন মানে না! আমরা কেউই আইন মানি না। তাহলে কিভাবে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে? তাই আমাদের শপথ নিতে হবে, সর্বপ্রথম আমরা প্রত্যকে যে যে পেশায় আছি, আমরা ট্রাফিক আইন মানব, আমাদের পরিবারকে মানতে উদ্বুদ্ধ করব। আমার সহকর্মীকে মানার জন্য আমি উদ্বুদ্ধ করব— এটা আমাদের প্রথম কাজ।
আলোচনা সভায় ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আমরা দেখেছি, প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ ট্রাফিক আইন মানে না। এটা নিয়ন্ত্রণ করা পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু আমরা এও দেখি, যারা একটু আগেও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ছিলেন, তারাই ডিউটি শেষ করে উল্টো পথে গিয়ে ট্রাফিক আইন ভাঙেন। যাদের আইন শেখানোর কথা, তারাই আইন ভাঙলে অন্যরা কী শিখবে? তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ, আপনারাও আইন মেনে চলুন।
ইলিয়াস কাঞ্চন আরও বলেন, আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, স্কুল-কলেজের পাঠ্য বইয়ে ট্রাফিক সচেতনতা বিষয়টি যোগ করতে। কিন্তু সেটি কেবল চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত করা হয়েছে। আমাদের দাবি ছিল, সেটি যেন দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত করা হয়। তাহলে তরুণদেরও এ বিষয়ে সচেতন করা যেত। এ জন্য শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ ট্রাফিক আইনে সচেতন নয়, সেহেতু সবাইকে তিন মাস করে সময় দেওয়া হোক; স্কুল, কলেজ, গার্মেন্টস— যে যার যার অবস্থান থেকে এ সময়ে মধ্যে ট্রাফিক আইনের সচেতন হবেন। এজন্য প্রয়োজনে সরকারিভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করারা হোক। এটা হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব।
এসময় ইলিয়াস কাঞ্চন সভায় উপস্থিত সবাইকে ট্রাফিক আইন মানার জন্য শপথবাক্য পাঠ করান।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সড়কের শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য শুধু ট্রাফিক আইন প্রয়োগ করলেই হবে না, পথচারীদের চলাচলের জন্য সুব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। তাহলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে।
সভায় কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আমরা যখন ট্রাফিক সচেতনতার জন্য মোড়ে আলোচনা সভার আয়োজন করেছি, সবাই মাইকে কথা বলছেন, আমি চেয়ারে বসে গুনে দেখলাম, এর মধ্যেও ১১ জন লোক ইচ্ছামতো রাস্তা পার হচ্ছে। তাদের কারও কারও কানে মোবাইল ফোন। অথচ চার দিকের ফুটওভার ব্রিজ একদম খালি। এ সময় কেউ দুর্ঘটনায় পড়লে বা মারা গেলে দোষটা কার? তাই এসবের জন্য সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।
সভায় ঢাকা বাস মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতুল্লাত বলেন, আন্দোলনের পর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে চারটি টিম, ৬০ জন কর্মকর্তা নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। চুক্তিভিত্তিক কোনো গাড়ি যেন না চলে। এটা ঠেকাতে আমাদের টিম কাজ করছে। কারণ এর ফলে গাড়ির প্রতিযোগিত হয়। সেইসঙ্গে লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাতে দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু শুধু মালিক বা চালক সচেতন হলেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়, যারা রাস্তা ব্যবহার করে, তাদেরও আইন মানতে হবে। তাহলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব বলে মনে করি।
সচেতনতামূলক এই আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল ইলসাম, ক্রিকেটার ইমরুল কায়েসসহ বাসচালক ও মালিকেরা এবং স্কাউটের সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
আলোচনা শেষে ডিএমপি কমিশনারসহ উপস্থিত অতিথিরা শাহবাগে মোড়ে র্যালিতে অংশ নেন। র্যালি শেষে তারা বাসচালক ও হেলপার এবং পথচারীদের মধ্যে লিফলেট, চকলেট ও ফুল দিয়ে ট্রাফিক সচেতনতায় উদ্বুদ্ধ করেন।
সারাবাংলা/এসএইচ/টিআর