রোহিঙ্গা ইস্যু: আইডিবিকে পাশে চাইলেন প্রধানমন্ত্রী
৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১১:৩৩
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: রোহিঙ্গাদের এখন আমরা তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চাই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যখন জাতিগত নির্মূলের মুখোমুখি তখন আইডিবি নিশ্চুপ থাকতে পারে না। কাজেই জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করার জন্য আইডিবিকে সুদৃঢ়ভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
রোববার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর হোটেল রেডিসনে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি)’র ঢাকাস্থ ‘রিজিওনাল হাব’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে একটি মানবিক সংকট মোকাবেলা করছে। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য বাংলাদেশ সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়ে তাদের প্রবেশ করতে দিয়েছে। নিজস্ব সম্পদ, বাস্তুসংস্থান ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে জানার পরও বাংলাদেশ বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দেশে আসতে দিয়েছি। মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও খাদ্য দিয়ে যাচ্ছে।’
‘এখন আমরা তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চাই। বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ ও স্থায়ী প্রত্যাবর্তনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিও স্বাক্ষর করা হয়েছে। মিয়ানমারকে চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য চাপ অব্যাহত রাখার জন্য আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
‘আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (স.) নিপীড়িত মানবতার পাশে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যখন জাতিগত নির্মূলের মুখোমুখি তখন আইডিবি নিশ্চুপ থাকতে পারে না। কাজেই জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করার জন্য আইডিবিকে সুদৃঢ়ভাবে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে আমরা সক্ষম হবো বলে বিশ্বাস করি এবং ইনশাল্লাহ আমরা তা করব।’
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সমর্থন ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন। সকলে মিলে আমরা নতুন প্রজন্মের জন্য উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলব বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকায় ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) আঞ্চলিক প্রধান কার্যালয় স্থাপনের দিকটি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ উদ্যোগ সদস্য রাষ্ট্রের উন্নয়ন অগ্রাধিকার, প্রয়োজনীয় চ্যালেঞ্জসমূহ আরও বলিষ্ঠভাবে বুঝতে সহায়তা করবে। আইডিবি বাংলাদেশের অন্যতম বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী।’
আমাদের দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিগত চার দশকে আইডিবি’র ভূমিকা উল্লেখযোগ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইডিবি এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে ২২ বিলিয়ন ডলার উন্নয়ন সহযোগিতা দিয়েছে। ৫৬টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশ সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক সহযোগিতা গ্রহণকারী দেশ। ঢাকায় নতুন অফিস স্থাপন বাংলাদেশের জন্য আইডিবির সম্পর্ক সুসংহত ও অংশীদারিত্ব সুদৃঢ় করার আরও একটি ধাপ।’
বাংলাদেশের জনগণের টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু এই অভিযাত্রা কখনোই মসৃণ ছিল না। আমাদের দক্ষ নেতৃত্ব ও জনগণের বলিষ্ট প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুঁড়ি থেকে আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।
স্বল্প সময়ের মধ্যেই উন্নত দেশ হবার পথে এ যাত্রা আমরা অব্যাহত রেখেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী, সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশ হওয়া আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের বিস্ময়। যা অন্যদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
জিডিপির আকারে বাংলাদেশ বর্তমানে পৃথিবীর ৪৩ তম বড় এবং ক্রয় ক্ষমতার সমতা অনুযায়ী ৩২তম বৃহৎ অর্থনীতি। একাধিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে দ্রুত সময়ে দারিদ্রদূরীকরণে বাংলাদেশ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। দারিদ্রসীমা বর্তমানে প্রায় ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। আমাদের উন্নয়নের অন্যতম লক্ষ্য হলো, জনগণের জীবনমান উন্নত করা, আমরা গরিববান্ধব এবং জনমুখী উন্নয়ননীতি গ্রহণ করেছি। যা আমাদের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে।
জনমুখী সুবিধার সুফল ভোগের জন্য আমাদের আরও চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য আমরা ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক, সফটওয়্যার প্রযুক্তি পার্ক স্থাপন করার পাশাপাশি বেসরকারি বৈদেশিক বিনিয়োগও সহজতর করে দিয়েছি বলেও পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
এছাড়াও অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা বেশকিছু বড় প্রকল্প নেওয়া, নিজস্ব অর্থায়নে অন্যতম বৃহৎ প্রকল্প পদ্মা সেতু নির্মাণ, দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় আমরা উন্নয়ন ধরে রাখতে পেরেছি। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে জিডিপি ৭দশমিক ৭৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৭শ ৫২ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। গত দশ বছরে মুদ্রাস্ফীতি ১২ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে নামিয়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশে আমরা আনতে সক্ষম হয়েছি বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
সরকারের বিভিন্ন গৃহীত পদক্ষেপে সামাজিক-অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী ডেলটা প্ল্যানের কথা তুলে ধরে বলেন, ২১০০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কীভাবে উন্নত দেশ হবে সে পরিকল্পনাও আমরা নিয়েছি এবং তা বাস্তবায়নের জন্যও সে পকিল্পনা গ্রহণ করেছি। এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
এরপর ইসলামি ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক রিজার্ভ হাবের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি। অনুষ্ঠানে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) প্রেসিডেন্ট ড. বন্দর এম এইচ হাজ্জর, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/একে/জেএএম