পরিত্যক্ত কারাগারে বিচার অবৈধ, প্রধান বিচারপতির কাছে তদন্ত দাবি
৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৭:১২
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচার কাজ পরিচালনার জন্য হঠাৎ করে আইন বহির্ভূতভাবে আদালত স্থানান্তর করা হয়েছে— এমন অভিযোগ করে প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ চেয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।
রোববার (৯ সেপ্টেম্বর) প্রধান বিচারপতির সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সঙ্গে তার খাস কামরায় দেখা করে এই হস্তক্ষেপ চান তারা।
এসময় আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো না উল্লেখ করে লিখিত আবেদনে বলেছেন, তিনি (খালেদা জিয়া) গুরুতর অসুস্থ, হাঁটতে পারেন না, যা সরকারও স্বীকার করেছে। তবুও সরকার তার যথাযথ চিকিৎসার বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
লিখিত আবেদনে আরও বলা হয়, দেশের কারাগারের তালিকা থেকে পরিত্যক্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারটি এখনও বাদ দেওয়া হয়নি। সে কারণে সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি ছাড়া পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে আদালত স্থাপন অবৈধ ও আইন বহির্ভূত। পরিত্যক্ত কারাগারে কোনো বিচার কাজ চলতে পারে না। যদি চলে, তা হবে অবৈধ।
লিখিত আবেদনে প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা আপনার কাছে অনুরোধ করছি, যারা বিচারিক ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে এবং যে বিচারিক কর্মকর্তা তার বিচাররিক সীমা লঙ্ঘন করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট বাংলদেশ (হাইকোর্ট বিভাগ) ১৯৭৩ বিধি অনুযায়ী তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার সাক্ষাৎ শেষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, হঠাৎ করে রাতের বেলা নিয়ম ও আইন বহির্ভূতভাবে জেলখানার একটি কক্ষকে অস্থায়ী আদালত বানানো হয়েছে। আইন অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়ার বিধান থাকলেও সেটি করা হয়নি। বিষয়টি আমারা প্রধান বিচারপতিকে জানিয়েছি। তিনি ধৈর্যের সঙ্গে বিষয়টি শুনেছেন। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন।
আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, গত তারিখে (৫ সেপ্টেম্বর) আপনারা দেখেছেন, অসুস্থ অবস্থায় জোর করে খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া বসতে পারেন না, দাঁড়াতে পারেন না, হাঁটতেও পারেন না। এ অবস্থায় তাকে হাজির করা হয়েছে। আইনজীবীদের কোনো জুডিশিয়াল নোটিশ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা আগে একটা জুডিশিয়াল আদেশ দিয়ে আইনজীবীদেরকে নোটিশ করতে হয়। সেই নোটিশ পর্যন্ত করা হয়নি। যেহেতু এটা ওপেন ট্রায়ালও না, সে কারণে আমরা সেখানে উপস্থিত হতে পারিনি। পরে এই আদালত আবার ১২ সেপ্টেম্বর তারিখ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা মনে করেছি, সংবিধানের অভিভাবক হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট। আর সুপ্রিম কোর্টের অভিভাবক হচ্ছেন প্রধান বিচারপতি। সুতরাং এই ধরনের গেজেট নোটিফিকেশন ১৯ (বি) চ্যাপ্টার ১ সুপ্রিমকোর্ট অব বাংলাদেশ হাইকোর্ট রুলস ১৯৭৩ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের পাওয়ার। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলোচনা না করে এই ধরনের কোর্ট স্থাপন করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে না। এই কথাগুলো আমরা বলেছি। আরও বলেছি, মাননীয় প্রধান বিচারপতি আপনি এই বিচারাঙ্গনের অভিভাবক। আমরা মনে করি আপনার সুপ্রিমেসি এবং মাসদার হোসেন মামলার পরে সুপ্রিম কোর্টে সুপ্রিমেসি অবশ্যই থাকতে হবে।
জয়নুল আবেদীন বলেন, প্রধান বিচারপতিকে আমরা এও বলেছি, আপনার সঙ্গে আলোচনা না করে রাতের অন্ধকারে এই ধরনের প্রজ্ঞাপন জারি বিচার বিভাগের জন্য খুবই দুঃখজনক। কোনো বিচারালয় এভাবে স্থানান্তর করতে পারে না। আমরা বিশ্বাস করি, রাতের অন্ধকারে এই রকম একটি আদালত গেজেট করার জন্য আপনি অনুমতি দেননি।
প্রত্যেকটি পয়েন্টে প্রধান বিচারপতির কাছে বলতে সক্ষম হয়েছেন উল্লেখ করে জয়নুল আবেদীন বলেন, প্রধান বিচারপতি আমাদের কথা শুনেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, প্রধান বিচারপতি আমাদের আবেদন গ্রহণ করেছেন। আমরা আশাবাদী। তিনি বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
এর আগে, দুপুর ১টা ২০মিনিটের দিকে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান বিএনপির সিনিয়ন আইনজীবীরা। দুপুর ১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, মীর নাছির, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদলসহ বিএনপির আইনজীবীরা।
আরও পড়ুন-
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি প্রতিনিধিদল
খালেদার চিকিৎসা চেয়ে রিট, প্রধান বিচারপতির কাছে আইনজীবীরা
সারাবাংলা/এজেডকে/জেডএফ