Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় মজুরি বাড়াতে চান মালিকেরা


৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২১:৩৫

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি নির্ধারণে সরকার গঠিত মজুরি বোর্ডে প্রস্তাবিত ন্যূনতম মজুরি ৬ হাজার ৩৬০ টাকা দেওয়াও কষ্টকর হবে বলে মন্তব্য করেছেন কোনো কোনো মালিক প্রতিনিধি। তবে কয়েকজন বলেছেন, সার্বিক মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় প্রস্তাবিত মজুরি হয়তো কিছুটা কম। দরকষাকষির জন্যই মূলত বোর্ডে ওই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

তবে পাঁচ বছর পর পর মজুরি বাড়ানোর ঝামেলা এড়াতে প্রতিবছরই মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় মজুরি বাড়াতে চান মালিকেরা। মালিক প্রতিনিধিরা বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের ব্যবসায় টিকে থাকা কষ্টকর। এজন্য ব্যবসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারিভাবে সুনির্দিষ্ট ‘এক্সিট প্ল্যান’ থাকা দরকার।

রোববার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর বিজিএমইএ ভবনের নুরুল কাদের অডিটরিয়ামে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সাধারণ সভায় পোশাক মালিক প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন।

ডিসেম্বরে কার্যকর হতে যাওয়া ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নিয়ে পোশাক মালিকদের মতামত জানতে এ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় কয়েকজন সাধারণ প্রতিনিধিও তাদের মতামত তুলে ধরেন। কথা বলেন শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারাও।

সরকার গঠিত মজুরি বোর্ডে গত ১৬ জুলাই নতুন কাঠামোতে মজুরি নিয়ে প্রস্তাবনা জমা দেয় মালিক ও শ্রমিক পক্ষ। প্রস্তাবনায়, সর্বনিম্ন মজুরি ১২ হাজার ২০ টাকা দাবি করেছে শ্রমিক পক্ষ। আর মালিক পক্ষ দিতে চেয়েছে শ্রমিকদের দাবির প্রায় অর্ধেক। ন্যূনতম ৬ হাজার ৩৬০ টাকা মজুরি দিতে চায় মালিকেরা। তবে, বোর্ডের চতুর্থ সভায় গত ৩ সেপ্টেম্বর বোর্ড চেয়ারম্যান সিনিয়র জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম উভয়পক্ষকে ভারসাম্যে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। উভয় পক্ষকেই তিনি নিজেদের দাবি থেকে একটু করে ছাড় দেওয়ার কথা বলেছেন। অন্যদিকে, কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন এখনও ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকার দাবিতে অটল রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানের শুরুতে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘৫ বছর পরই নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। বর্তমানে আমাদের নানা ধরণের সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। বেতন যারা দিবে, তারা কতো দিতে পারবে সেটা তারাই জানে। কেউ কেউ ১৬ হাজার টাকা বেতন দেওয়ার কথা বলে, এই টাকা দিলে শিল্প থাকবে কি থাকবে না, তা বলতে পারবে মালিকেরা। আমরা এসব দাবি বিবেচনায় নিচ্ছি না। মালিকের সক্ষমতা ও শ্রমিকের প্রয়োজনীয়তা অনুসারেই নতুন মুজরি নির্ধারিত হবে। এখানে শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রস্তাবনা বিষয়ে মালিকরা তাদের মতামত তুলে ধরবেন।’

বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, নতুন মজুরি কাঠামো নিয়ে আমাদের ভেতর একটা আতঙ্ক কাজ করছে। মালিক পক্ষ যে প্রস্তাব দিয়েছে সে অনুযায়ী আমরা বেতন দিতে পারবো কি না তা নিয়ে শঙ্কা আছে। যারা বাইরে থেকে অনেক কথা বলছে, যারা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, তারা কি ভেবে দেখেছেন আমরা আসলে কতোটা মুনাফা করছি? আগে কতো মুনাফা করতাম আর এখন কতো করি?

এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ১২০০ ফ্যাক্টরি নেই। ঝড়ে গেছে। জাইকার ফান্ড থাকবে, বলা হয়েছিল। ফ্যক্টরি অনুমোদন হয়ে গেছে। ফান্ডের খোঁজ নেই। আমরা অসম যুদ্ধে প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধকতাকে দূর করে ব্যবসায় টিকে আছি। প্রতিনিয়ত এই সংগ্রাম করে যাচ্ছি। লিভার্টির মতো ফ্যক্টরি বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই কোর্টের বারান্দায় দৌঁড়াচ্ছে। সময় আমাদের বিপরীতে। ভোটকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকদের নিয়ে আমাদের চেয়ে যাদের ব্যথা-বেদনা বেশি তারা ষড়যন্ত্রকারী।

সিপিডির সমালোচনা করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, গবেষণার নামে কতো টাকা খেয়েছেন তা কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের কাছে আপনারা জবাব দেননি। জাতি হিসেবে আমরা পরশ্রীকাতর। জাতীয় খেলা হাডুডু। একজন উপরে উঠতে থাকলে আমরা তার পায়ে ধরে রাখি। তারপরও আমরা এগিয়ে যাবো।

বিজ্ঞাপন

ব্যবসায়ী সংগঠনের শীর্ষ এই নেতা বলেন, একদিক দিয়ে ছাড় দিলে আরেক দিক দিয়ে আদায় করে নিতে হবে। বেতন বাড়াতে হলে কর কমাতে হবে। নতুবা ট্যাক্স ইনসেনটিভ দিতে হবে। কর্পোরেট ট্যাক্স করে দিলেন ১০ থেকে ৩০ শতাংশ, বাস্তবতা হল ক্রেতারা দাম বাড়াচ্ছে না। উই হ্যাভ টু প্লে ভেরি স্মার্ট ওয়ে।

দেশে এবং দেশের বাইরে মাথা উঁচু করে পোশাক মালিকদের দরকষাকাষির আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, কেন চায়না বা ভিয়েতনামের চেয়ে আমাদের পোশাকের দাম কম হবে? ৫ বছর পর পর মজুরি নিয়ে আমরা আলোচনা চায় না। প্রতিবছর মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় ঘটিয়ে মজুরি নির্ধারণ করতে চাই। দুই দিন পর পর জিম্মি করবেন, কারো হার্টের সমস্যা হবে, এমন অবস্থায় থাকতে চাই না।

বিজিএমইএর প্রাক্তন সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, ক্রেতারা আমাদের মূল্য দিচ্ছে কি দিচ্ছে না তা কিন্তু ভাবতে হবে। আমাদের রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কদিন আগেই বিজিএমইএর সভাপতির হার্টে অপারেশন করতে হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখুন, পোশাক মালিকদের প্রত্যেকেরই একই অবস্থা। কারো হার্টে সমস্যা, নয়তো কারো ব্ল্যাড প্রেশার।

পোশাক মালিক টিপু মুন্সি এমপি বলেন, প্রত্যেকবারই নির্বাচনের আগে আমাদের নতুন মজুরি নির্ধারণ করতে হয়। একটা চাপ থাকে। ২৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় ৬ হাজার ৩০০ টাকা হয়তো কিছুটা কম। দরকষাকাষির জন্যই এ প্রস্তাব করা হয়েছে। পাঁচ বছর পর পর মজুরি বাড়াতে চাই না, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় প্রতিবছরই মজুরি সমন্বয় করতে চাই। তিনি আরও বলেন, কিছু শ্রমিক নেতা আছে, বাইরে থেকে টাকা পায়। তারা আবার একশন দেখাতে না পারলে টাকা বন্ধ হয়ে যায়। তাদের প্রতিহত করতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

মুক্ত আলোচনায় ইন্ট্রুমেক্স গ্রপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েত উল্লাহ বলেন, ৬ হাজার ৩৫০ টাকার প্রস্তাব যুক্তিযুক্ত হলেও আমরা এখন ৫ হাজার টাকা বেতন দিতেই হিমশিম খাচ্ছি। ড্রেস আপ লিমিটেডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, নির্বাচনের আগে ৪০ লাখ ভোটার বনাম ২ হাজার মালিক। আমরা মনে হয় বলির পাঠা হতে যাচ্ছি। স্টাইলিশ গার্মেন্টেসের চেয়ারম্যান সালিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, শ্রমিকদের আমরা দিতে চাই। সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নেই।

বিজিএমইর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান বলেন, প্রতিবছরই ব্যবসার খরচ বাড়ছে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হচ্ছে। কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের জন্য অনেক সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। মুজরির বাইরেও অনেক সুবিধা তারা পাচ্ছে।

সভাপতির বক্তব্যে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এ বছর মনে হয় দরকষাকাষি একটু কঠিন হবে। মূল্যস্ফীতি সমন্বয়ের মাধ্যমে মজুরি নির্ধারণের ব্যাপারে অবশ্যই চেষ্টা করবো। এক্সিট প্ল্যান যাতে করা হয় সে ব্যাপারেও সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবো।

সারাবাংলা/ইএইচটি/এমঅাই

ন্যূনতম মজুরি পোশাক কারখানা মূল্যস্ফীতি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর