Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক হবে রোল মডেল: প্রধানমন্ত্রী


১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৭:৩৬

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: বাংলাদেশ-ভারতের চলমান সম্পর্ক বিশ্বের অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘বহু বছর ধরে আমাদের মধ্যেকার সম্পর্ক পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ ও সুনামের কারণে আজ পরিপক্কতা লাভ করেছে। আমাদের এই সম্পর্ক বিশ্বের অন্যান্য অংশের জন্য রোল মডেল হিসেবে গণ্য হবে। এই সুসম্পর্ক আমাদের দৃঢ় আস্থার সঙ্গে পারস্পরিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে সাহায্য করছে। এতে দুই দেশের জনগণই লাভবান হচ্ছে।’ এ সময় বাংলাদেশের উন্নয়নে সমর্থন দেওয়ায় ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি।

এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বলেন, আজ থেকে আমরা আরও কাছে এলাম। আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হলো।

সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একাধিক প্রকল্প উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আশা করি, আমাদের এই বন্ধুত্ব অটুট থাকবে। আগামী দিনে আমাদের দুই দেশের যৌথ প্রচেষ্টায় এমন অনেক সাফল্যগাঁথা উদযাপন করতে পারব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার ও ভারতবাসী আমাদের যে সহযোগিতা করেছিল, যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল, আমরা তা সবসময় কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি। এটা আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে চিরদিন একটি মাইলফলক হিসেবে বজায় থাকবে।

বিজ্ঞাপন

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিদ্যুৎ-জ্বালানি, যোগাযোগে অবকাঠামোর উন্নয়ন, জনগণের মধ্যে যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে বহু অগ্রগতি সাধিত হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা ব্লু-ইকোনমি, সাামাজিক সহযোগিতা, পারমাণবিক শক্তি, সাইবার নিরাপত্তা, মহাকাশ গবেষণার মতো নতুন নতুন খাতে দুই দেশের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাত আমাদের দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার অন্যতম উপাদান। বর্তমানে ভারত থেকে আমরা ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছি। ভারত থেকে আরও তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা গত সাড়ে ৯ বছরে তিন হাজার ২শ মেগাওয়াট থেকে ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।

বাংলাদেশকে আগামীতে এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেওয়ার প্রতিশ্রুতির কারণে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) বলেছেন, আমাদের আরও এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেবেন। আমি আশা করি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিজী, আপনি নিশ্চয়ই এব্যাপারে সম্মতি দেবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ১৩ হাজার ৬৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন আরও ৫৫টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছি। আমাদের উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য আরও অনেক বিদ্যুৎ প্রয়োজন। এজন্য আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতার কাঠামোর অধীনে ২০৪১ সালের মধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা করছি। আশা করি, এই লক্ষ্য অর্জনে ভারত আমাদের পাশে থাকবে।

বিজ্ঞাপন

রেলওয়ে খাতের দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মালামাল পরিবহনের জন্য রেল সংযোগ পুনরায় চালু করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি, শিগগিরই লাইন-অব-ক্রেডিটের আওতায় ভারতীয় অর্থায়নে যৌথভাবে ঢাকা ও টঙ্গীর মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ রেললাইন এবং টঙ্গী ও জয়দেবপুরের মধ্যে ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণের ভিত্তিফলক স্থাপন করতে পারব।

স্থল সীমান্তসহ দুই দেশের মধ্যেকার বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশা করি, আমাদের বন্ধুত্ব অটুট থাকবে। আগামীতেও আমরা দুই দেশের জনগণের সামনে আরও অনেক অনেক নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র বাস্তবায়ন করে তাদের সামনে উপস্থিত হতে পারব।

প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন ঘোষণা শেষে কুলাউড়া রেললাইন প্রকল্প এলাকায় উপস্থিত এলাকাবাসীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তিনি বলেন, আমরা কিন্তু এই কাজের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করলাম। লাইন-অব-ক্রেডিটের টাকায় এটা করা বলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে একসঙ্গে উদ্বোধন করলাম। কাজেই কাজ যেন ভালোভাবে হয়, সেদিকে আপনাদের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা বাড়বে এবং মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হবে।

ভেড়ামারাবাসীর প্রতি হাস্যরস করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভেড়ামারা তো আসলেই ভেড়াই ছিল, এবার মানুষ করে দিলাম।

এর আগে, সোমবার ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে দু’টি রেল প্রকল্পের নির্মাণ কাজ এবং বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে ভারত থেকে ভেড়ামারায় নবনির্মিত ৫শ মেগাওয়াট এইচভিডিসি ব্যাক টু ব্যাক স্টেশন সেকেন্ড ব্লকের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি।

ভিডিও কনফারেন্সে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর দুই পাশে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফকি-ই-ইলাহী চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, ভারতের প্রধানমন্তী নরেন্দ্র মোদির পাশে ছিলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এরপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সূচনা বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। পরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন।

প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে তিন প্রকল্প এলাকায় সংযুক্ত হয়ে কথা বলেন।

আরও পড়ুন-

দুই রেল প্রকল্প ও বিদ্যুৎ স্টেশনের উদ্বোধন করলেন হাসিনা-মোদি

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর