২১ আগস্ট হামলায় প্রধান পরিকল্পনাকারী তারেক রহমান
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২০:০৩
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী ছিলেন মর্মে যুক্তি উপস্থাপনে তুলে ধরেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল।
সোমবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল দেশের প্রচলিত আইন ও দেশ-বিদেশের উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত এবং ফ্যাক্টের আলোকে আইনের উপর যুক্তি উপস্থাপনের সময় এসব কথা বলেন।
যুক্তি উপস্থাপনে আদালতের ৪টি সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরে মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, মামলাটিতে ৬১ জন সাক্ষী হওয়ার পর অধিকতর তদন্ত নিয়ে আসামি পক্ষ প্রশ্ন তুলেছেন। যেকোনো ফৌজদারি মামলা রায়ের পূর্বে আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩(৩)বি ধারা মতে অধিকতর তদন্তে পাঠাতে পারেন। এখান অধিকতর তদন্তের আবেদনও যথাযথভাবে করা হয়েছিল। আইনের বিধান লংঘন হয়নি। এ বিষয়ে আসামি পক্ষ যেসকল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ তাদের সিদ্ধান্ত আর এ মামলা ফ্যাক্ট এক নয়।
মুফতি হান্নানের একটি ফিলোসফি ছিল ইসলাম রক্ষার জন্য শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে হবে। যার বাস্তবানের জন্য রিয়েল স্ট্রেটের বাসা থেকে পরিকল্পনা শুরু করেন। এরপর একে একে উপমন্ত্রী পিন্টুর বাসা হয়ে শেষে হাওয়া ভবন।
তিনি আরও বলেন, এখানে আদালতকে বুঝতে হবে সেদিন শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে পারলে তার প্রধান বেনিফিসিয়ারী কে হতেন। এখানে স্পষ্ট যে হাওয়া ভবন। যেখান থেকে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ হতো। যার প্রধান ছিলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে পারলে ক্ষমতাকে চিরদিনের জন্য কুক্ষিগত করা যেত। দেশটাকে আবার পাকিস্তান বানানো যেত। রাষ্ট্রীয় মদদ ছাড়া সমরাস্ত্র গ্রেনেড দিয়ে এ ধরণের হামলা হতে পারে না। জজ মিয়া নাটক হতো না।
সোমবার (১০ সেপ্টম্বর) দুপুর ১২টা ১ মিনিটে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের এ মামলার অস্থায়ী ট্রাইব্যুনালে এ রাষ্ট্রের পক্ষের আইনজীবীর যুক্তি উপস্থাপন শুরু করে দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে তা শেষ হয়।
মামলাটি ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আইনি যুক্তি উপস্থাপনা চলছে। আজ অংশিক শেষ হওয়া ল পয়েন্টের উপর আগামী ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর পরবর্তী যুক্তি উপস্থাপনের জন্য দিন ঠিক করা রয়েছে।
এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমস্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর আইনগত বিষয়েও ওপর যুক্তি উপস্থাপন শেষে বেকসুর খালাস চেয়েছেন তার পক্ষের আইনজীবী। সেই দিন আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন।
যুক্তি উপস্থাপনের সময় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান উপস্থিত। এ ছাড়া আসামি পক্ষে অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান, নজরুল ইমলাম, তারা মিয়াসহ প্রমুখ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
মামলাটিতে ল’ পয়েন্টের রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলেই ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার দিন ঠিক করবেন।
মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষ ২৫ কার্যদিবস ফ্যাক্টের ওপর যুক্তি উপস্থাপন করেন। যা গত ১ জানুয়ারি তা শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩৮ আসামির মৃত্যুদণ্ড এবং ১১ সরকারি কর্মকর্তার ৭ বছর কারাদণ্ড দাবি করেন। এরপর আসামি পক্ষ ফ্যাক্টের ওপর যুক্তি ৮৭ কার্যদিবস উপস্থাপন শুরু করেন। যা গত ২৯ আগস্ট শেষ হয়।
এ মামলার জামিনে থাকা আসামিরা হলেন, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম।
জড়িত থাকা ৪৯ আসামির মধ্যে ৮ জন জামিনে রয়েছেন।
অন্যদিকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে আটক আছেন।
এ ছাড়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জেল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৮ জন আসামি পলাতক আছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভায় গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জনের নির্মম মৃত্যু হয়। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন কয়েক শতাধিক। বর্তমানের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও শ্রবণশক্তি হারান।
এ ঘটনায় মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক ৩টি এজাহার দায়ের করেন।
সারাবাংলা/এআই/এমআই