এল নিনো আসছে এ বছরই!
১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৮:২১
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
ঢাকা: এ বছরেই এল নিনো ফের হানা দেওয়ার ৭০ শতাংশ আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন, ডাব্লিউএমও)। তবে এবারের এল নিনো খুব শক্তিশালী নাও হতে পারে মনে করছে সংস্থাটি।
বিবিসির খবরে বলা হয়, সর্বশেষ ২০১৫-১৬ সালে এল নিনো দেখা দিয়েছিল। সেটি ছিল সবচেয়ে তীব্র এল নিনোগুলোর একটি। গোটা পৃথিবীর আবহাওয়া, বিশেষ করে তাপমাত্রার ওপর এর প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। ২০১৬ সাল ছিল ইতিহাসের উষ্ণতম বছর; তার পেছনেও ওই এল নিনোর ভূমিকা ছিল বলে মত দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
এল নিনো হলো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের সমুদ্রগুলোর একটি পর্যাবৃত্ত পরিবর্তন। দক্ষিণাঞ্চলীয় পর্যাবৃত্ত হিসেবে পরিচিত এই প্রাকৃতিক ঘটনায় পেরু ও ইকুয়েডরের পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রের উপরিতলের তাপমাত্রা স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি থাকে। এর বিপরীত প্রক্রিয়াও ঘটে, অর্থাৎ সমুদ্রের উপরিতলের তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমও হয়ে থাকে। সে প্রক্রিয়াকে বলা হয় লা নিনা। সাধারণত ৫ থেকে ৭ বছর পরপর এই পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। আর তা স্থায়ী হতে পারে ২ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এল নিনো বা লা নিনার ঘটনার প্রভাব সারাবিশ্বের আবহাওয়ার ওপরই পড়ে। আর জলবায়ুর পরিবর্তন এসব প্রাকৃতিক ঘটনাকে প্রভাবিত করে থাকে।
ডাব্লিউএমও বলছে, ২০১৬ সালের ঊষ্ণতম বছর হওয়ার ক্ষেত্রে যেমন ২০১৫-১৬ সালের এল নিনোর ভূমিকা ছিল, তেমনি আফ্রিকার দেশগুলোতে প্রচণ্ড খরার পেছনেও অন্যতম কারণ ছিল ওই এল নিনো। ওই বছর আফ্রিকা মহাদেশের বেশকিছু দেশে ফসলের উৎপাদন সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছিল। শুধু তাই নয়, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়েসহ দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে প্রবল বন্যারও কারণ হয়েছিল ওই এল নিনো।
ডাব্লিওএমও’র তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরুটা হয়েছিল এল নিনোর বিপরীত প্রক্রিয়া লা নিনা দিয়ে। অর্থাৎ পেরু-ইকুয়েডর উপকূলে সমুদ্রের উপরিতলের তাপামাত্রা ছিল গড় তাপমাত্রার চেয়ে খানিকটা কম। তবে তাপমাত্রা দ্রুতই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ডাব্লিওএমও’র মডেল অনুযায়ী, এ বছরের শেষের দিকে এবার আসতে পারে এল নিনো। এর সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ।
ডাব্লিওএমও’র মহাসচিব পেটেরি টালাস বলছেন, এবারের এল নিনো ২০১৫-১৬ সালের মতো তীব্র হবে বলে মনে করছে না ডাব্লিওএমও। তারপরও নিশ্চিতভাবেই এর কিছু প্রভাব বৈশ্বিক আবহাওয়ার ওপর পড়বে। আগে থেকেই এর পূর্বাভাস অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হলে অনেক জীবনহানি ঠেকানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষতি রোধ করা সম্ভব হবে।
এদিকে, এই প্রথমবারের মতো ডাব্লিওএমও এল নিনোর সঙ্গে বৈশ্বিক আবহাওয়ার পরিবর্তনের পূর্বাভাস দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলসহ ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলীয় প্রায় সব অঞ্চলেই সমুদ্রের উপরিতলের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে। সাধারণত ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে এল নিনো দেখা গেলেও মাত্র দুই বছরের মধ্যেই এর ফিরে আসার পেছনে সংস্থাটি বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনের ভূমিকা দেখছে।
পেটেরি টালাস বলেন, এল নিনো বা লা নিনার স্বাভাবিক যে গতিপ্রকৃতি, তাকে প্রভাবিত করছে জলবায়ু পরিবর্তন। এটি এসব প্রাকৃতিক ঘটনার প্রভাবের ধরনও বদলে দিচ্ছে। যেমন— এ বছর দুর্বল লা নিনা দিয়ে বছর শুরু হয়েছিল। কিন্তু তাতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা খুব বেশি কমেনি। ফলে এ বছরও উষ্ণতম বছর হওয়ার পথ থেকে সরে আসতে পারেনি।
সারাবাংলা/টিআর