Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডেঙ্গু ঝুঁকিতে বাংলাদেশসহ এশিয়ার ১৩০ কোটি মানুষ


১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৮:৩৫

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা : বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় ১৩০ কোটি মানুষ ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছে। এই অঞ্চলে ঘন ঘন ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। কখনও কখনও সেই প্রকোপ অনেক বড়। গত ৯ সেপ্টেম্বর ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক ৭১তম অধিবেশনে এসব কথা বলা হয়।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলে ভারত, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, পূর্ব তিমুর ও উত্তর কোরিয়া রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে থাকা বৈশ্বিক জনগোষ্ঠীর ৫৮ শতাংশ মানুষ এই অঞ্চলে বসবাস করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ মানুষ এই অঞ্চলে বসবাস করে। দ্রুত নগরায়ণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই অঞ্চলে এই দু’টি রোগ ছাড়াও কীটবাহিত অন্যান্য রোগের ঝুঁকিও বাড়ছে।

কেবল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যানেই নয়, চলতি বছর বাংলাদেশেও বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টাতেই রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৫৮জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার।

হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টারের ইনচার্জ ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, ‘চলতি মৌসুমে মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা তিন হাজার ৯২৪ জন। গত জুন মাসে তিন জন, জুলাই মাসে ৪ জন এবং আগস্ট মাসে ৪ জন ডেঙ্গু জ্বর, ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম এবং ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রক্তক্ষরণে মারা গিয়েছেন। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে এই মুহূর্তে রোগী ভর্তি আছেন ২৩২ জন।’

বিজ্ঞাপন

আয়েশা আক্তার সারবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণত জুলাই-আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর এ তিন মাস-ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে থাকি আমরা। গত বছরে চিকুনগুনিয়ার প্রার্দুভাব বেশি ছিল কিন্তু চলতি বছরে ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব খুব বেশি।’

‘ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশা নিধনে আমরা চলতি বছরের শুরু থেকে কয়েকদফা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে মিটিং করেছি, তাদের বারবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষকে বাড়ি ঘর পরিষ্কার রাখার জন্য সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে পত্রিকা, টেলিভিশনগুলোতে, কিন্তু তাতেও মানুষ সচেতন হচ্ছে না’, যোগ করেন তিনি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক অধিবেশনের সমাপণী অনুষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক পুনম ক্ষেত্রপাল সিং বলেছেন, ‘কীটপতঙ্গ দমনে জাতীয় ও তৃণমুল পর্যায়ে বহুপক্ষীয় উদ্যোগ জোরদার করতে হবে। সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে কর্মসূচি নিতে হবে। এজন্য নজরদারি জোরদার করার পাশাপাশি আন্তঃদেশীয় সহযোগিতা বাড়াতে হবে।’

এদিকে, চলতি মৌসুমে ডেঙ্গুর ধরণ বদলে গিয়েছে এবং মশা নিধন না করলে বা মশা নির্মূলের চেষ্টা যদি না করা হয় তাহলে ডেঙ্গু ঠেকানো যাবে না বলে সারাবাংলাকে জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘নিজের বাড়ি-ঘর পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। ঘরের ভেতরে পরিষ্কার পানি জমিয়ে রাখা যাবে না, মাঝে মাঝে বৃষ্টি হওয়াতে রাস্তার ধারের ড্রেনগুলোতে পানি জমে যাচ্ছে, পরিষ্কার পানি পেয়ে সেখানে মশা ডিম পারার সুযোগ পাচ্ছে বেশি। ড্রেনেজ সিস্টেমগুলো সিটি করপোরেশনকে ঠিক করতে হবে, কোথাও যেন পানি জমে থাকার সুযোগ না পায় সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে তাদের। নয়তো এবারে ডেঙ্গু ভোগাবে।’

বিজ্ঞাপন

অপরদিকে, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে জনসাধারণকে সচেতন থাকার কথা বলছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ‘এবারের মৌসুমে ভারি বর্ষণে এডিস মশাবাগিত রোগ ব্যাপক হারে দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’

আইইডিসিআরের জেষ্ঠ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘কীটপতঙ্গবাহিত রোগের ঝুঁকি বেড়েছে, এর প্রমাণ চলতি বছরগুলোতে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ। জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে এ প্রকোপ বেড়ে গিয়েছে।’

‘তবে এর প্রতিকারের জন্য মানুষকে সচেতন হতে হবে, সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এ সর্ম্পকে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা এবং জনসচেতনামূলক কাজে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশের বুদ্ধিজীবী, সমাজসেবী, সামাজিক প্রতিষ্ঠান তাদেরও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে অংশগ্রহণ করতে হবে’, বলেন ডা. এ এস এম আলমগীর।

তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যেই ডেঙ্গু চিকিৎসার ন্যাশনাল গাইডলাইন আপডেট করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল/প্রতিষ্ঠানে (ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় মৌসুম পূর্ব, মৌসুম ও মৌসুমোত্তর এডিস মশার তিনটি কীটতাত্ত্বিক জরিপ শেষ হয়েছে। ঢাকা শহরে একটি ডেঙ্গু প্রিভেলেন্স সার্ভে সম্পন্ন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে এডিস মশা শনাক্তকরণে একটি জরিপ করেছে।’

এর আগে, ২০১৭ সালে ঢাকা মহানগরীতে চিকুনগুনিয়া রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে আইইডিসিআর’র পাওয়া তথ্য অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়া সম্ভাব্য চিকুনগুনিয়া ও চিকুনগুনিয়া পরবর্তী আর্থ্রালজিয়া রোগীর সংখ্যা ছিল (১২ মে থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ১৩ হাজার ৮১৪ জন এবং আইইডিসিআর’তে রক্ত পরীক্ষায় নিশ্চিত চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হিসাব করা হয় ১ হাজার ৩ জন।

এছাড়া ২০১৭ সালে আনুমানিক ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭৬৯ জন।

সারাবাংলা/জেএ/এমও

ডেঙ্গু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া

বিজ্ঞাপন

নতুন বার্সেলোনায় মুগ্ধ মেসি
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ১০:৫৫

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর