‘হাঁচি-কাশি হলে বিদেশে ডাক্তার দেখাতে যান, আপত্তি নেই!’
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৩:৪৩
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: একশ্রেণির ধনী তৈরি হয়েছে, যারা হাঁচি-কাশি হলেও ডাক্তার দেখানোর জন্য বিদেশে ছুটে যান বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এ নিয়ে কোনো আপত্তি নেই তার। বরং তারা বিদেশে গেলে দেশের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে সাধারণ মানুষের চিকিৎসার সুযোগ একটু হলেও বাড়বে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, দেশে এখন একটি ধনী শ্রেণি গড়ে উঠেছে যারা হাঁচি-কাশি হলেও বিদেশে যায়। তাতে আমি কিছু মনে করি না। আমি মনে করি, তারা বিদেশে যেতে চাইলে যাক, এতে আপত্তি নেই। কারণ, তারা বিদেশে গেলে দেশের হাসপাতালগুলোতে তখন নিম্নবিত্ত, সাধারণ মানুষরা জায়গা পাবে। দেশে চিকিৎসার সুযোগ তাদের জন্যই থাক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেশি বড়লোক যারা, এয়ার অ্যম্বুলেন্সে করে বিদেশে যাক। এতে দেশের হাপাতালগুলোতে জায়গাও খালি হলো, সাধারণ মানুষও চিকিৎসা পেলো।
আরও পড়ুন- প্রতিটি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে: প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে আসার পর বিএসএমএমইউকে দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে কাজ (মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা) করতে হয়েছিল। আমাদের লক্ষ্য ছিল, চিকিৎসাসেবা উন্নত করা। সাধারণ মানুষ যেন উন্নত মানের চিকিৎসা পায় এবং চিকিৎসা খাতে গবেষণা হতে পারে, সেটা আমরা করতে চেয়েছিল। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করা, নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করে আন্তর্জাতিক মানের করে তোলার লক্ষ্য থেকেই আমরা কাজ শুরু করি।
জাতির পিতার লক্ষ্য পূরণ করতে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তুললেও পরবর্তী সরকার তা বন্ধ করে দেয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আবার ক্ষমতায় আসার পর দেশের সব হাসপাতালগুলোকে উন্নত করেছি। ইউনিয়ন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ জেলা হাসপাতালগুলোতেও শয্যা বাড়িয়েছি। জরিপের মাধ্যমে আমরা জেনেছি কোন জেলায় কত মানুষ চিকিৎসা নিতে যায়। সেই জরিপ অনুযায়ী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ জেলা হাসপাতালগুলোর সক্ষমতা বাড়িয়েছি। আমরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতালের দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ শুরু করেছি। সারাদেশের মানুষের চিকিৎসা সেবা উন্নত করতে এবং দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির জন্য বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার কাজ করছি।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটাই, মানুষের সেবা দেওয়া। সেই লক্ষ্যে আমরা স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়ন করেছি। বিশেষায়িত সেবা যেন দেওয়া যেতে পারে, সে লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
চিকিৎসাসেবায় সঠিক ব্যবস্থাপনা চালুর কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চিকিৎসায় রেফারেল ব্যবস্থা চালু করেছি। কোনো রোগী এলে একটি ওয়ার্ডে যাবে, সেখান থেকে তাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
অনলাইনে স্বাস্থ্যসেবা নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওয়েব ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। এখন সারাদেশেই অনলাইনে সেবা নেওয়ার সুযোগ আছে। ইন্টারনেটের ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। সেই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আরও উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে বিশ্বাস করি। আমরা চাই, কোনো মানুষকে যেন চিকিৎসার জন্য ঢাকা শহরে আসতে না হয়। সে যেন তার জায়গা থেকেই বিশেষজ্ঞ মতামত ও চিকিৎসা পেতে পারে, তার জন্য আমরা সব পদক্ষেপ নিচ্ছি।
তিনি বলেন, ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালিত হবে। এর আগে ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করব আমরা। জাতির পিতার রেখে যাওয়া স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আমাদের উন্নয়নশীল দেশে গ্র্যাজুয়েশন হয়েছে। আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে। সেই অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে হবে। সেইসঙ্গে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ তো একটি ব-দ্বীপ। এই ডেল্টা অঞ্চলের মানুষ সবসময় শোষণের শিকার হয়েছে। এই দেশ এখন স্বাধীন, সামনে আমরা কতটুকু উন্নতি করব, তার জন্যই ২১০০ সালের ডেল্টা প্ল্যান করেছি। আমাদের আজকের শিশু আগামী দিনের নাগরিক। তাদের জন্য যেন উপযুক্ত ও উন্নত দেশ গড়ে তুলতে পারি, তারা যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ আর পিছিয়ে থাকবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কেউ আর বাংলাদেশকে পেছনে নিতে পারবে না, এটাই আমি বিশ্বাস করি।
সারাবাংলা/টিআর