।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘রাষ্ট্রের অবৈধ কর্তৃপক্ষ আওয়ামী সরকার চক্রান্তমূলকভাবেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে সাজা দিয়েছে— সেটি আবারও প্রমাণ করলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।
শুক্রবার (১৪ সেপ্টেম্বর) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন ‘যেহেতু খালেদা জিয়া আদালতে আসতে চাচ্ছেন না, তাই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করুন।’ আদালতের কার্যক্রম শেষ করতে লিখিত আবেদনও করেছেন তারা।
বিষয়টি উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘অসাংবিধানিকভাবে কারাগারে আদালত বসিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায় চায় রাষ্ট্রপক্ষ। তারা আবারও প্রমাণ করলেন চক্রান্তমূলকভাবেই খালেদা জিয়ার সাজা দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কারাগারে খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তিনি হাত-পা নাড়াতে পারেন না, হাঁটা-চলা করতে তার মারাত্মক অসুবিধা হয়। চিকিৎসকরা বলেছেন-তার বাম হাত ও পা প্রায় অবশ হয়ে পড়েছে। গুরুতর অসুস্থতার কারণে আদালতে যেতে পারবেন না— বেগম জিয়া সে কথাটিই বলেছেন।’
‘কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ জোর করে আদালতকে ব্যবহার করে বিচারকার্য ছাড়াই রায় দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। এটি সম্পূর্ণরূপে ন্যায় বিচারের পরিপন্থী, অমানবিক ও মানবাধিকার লংঘন। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই তাড়াহুড়ো করার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। রাষ্ট্রপক্ষের এই চাপ সরকারের নির্দেশেই হচ্ছে’— অভিযোগ রিজভীর।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। কিন্তু আদালত তো তার চিকিৎসার ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দিলেন না। কারণ, আদালত সরকারের হুকুমের বাইরে যেতে পারবেন কী না— সেটি নিয়ে জনগণ সন্দেহ পোষণ করে। যেখানে দেশের প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নলের মুখে দেশ ছাড়তে হয়, সেখানে নিম্ন আদালত সরকারের চাপ প্রতিহত করে ন্যায় বিচার করতে পারবেন কী ? এখনও পর্যন্ত সেই দৃষ্টান্ত আমরা দেখিনি।’
মামলা হামলায় বিএনপির একজন নেতাকর্মীও বাদ যাচ্ছে না উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘পোলিও টিকা খাওয়ানোর একটি শ্লোগান আমরা অনেকদিন যাবৎ শুনে এসেছি ‘বাদ যাবে না একটি শিশু। এখন সরকার এই শ্লোগানটি ভিন্ন অর্থে প্রয়োগ করছে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর। অর্থাৎ ‘মামলা-হামলায় বাদ যাবে না বিএনপির একটি কর্মীও।’
মানুষ এখন নিজের ছায়াকেও ভয় পাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘মনে হয়-দেশের প্রতিটি মানুষকে কেউ না কেউ অনুসরণ করছে, গতিবিধি লক্ষ্য করা হচ্ছে। এমনিতে গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের ক্রমাগত বিস্তৃতি ঘটছে, তার ওপর রাজধানীসহ দেশের আনাচে কানাচে বিএনপির এমন কোনো সমর্থক নেই, যাদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়নি।’
বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মী সমর্থকদের ছাঁকনি দিয়ে ধরা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনগণকে পুলিশের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা। অথচ নিত্যদিনের পুলিশের আগ্রাসী অভিযানে দেশের মানুষের জানমাল নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছে। এদেশে বিদেশী মিশনের কুটনীতিকদেরও নিরাপত্তা নেই। বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদুতের ওপরও হামলা হয়েছে। কোথাও আওয়াজ শুনলেই সেখানে সরকারী হামলা ধেয়ে আসছে।’
‘গতকাল পুলিশ মামলা-হামলার বন্যা বইয়ে দিয়েছে’ উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ঢাকাসহ সারাদেশে গায়েবী মামলা দায়ের করা হয়েছে ৩ হাজারের অধিক। আসামী করা হয়েছে নামে-বেনামে প্রায় ৩ লাখ নেতাকর্মীকে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৫০০ এর অধিক নেতাকর্মীকে।’
তিনি জানান, বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আমিনুল হক, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এবং আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়ার বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় এবং বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আব্দুস সালামসহ অসংখ্য নেতৃবৃন্দের নামে পল্টন থানায় নতুন করে মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এছাড়া, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী বিষয়ক সম্পাদক এম এ মালেক, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক উজ্জল, জাসাস সাধারণ সম্পাদক হেলাল খান, সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সুলতানা আহমেদের বাসায় পুলিশ হানা দেয় এবং তল্লাশীর নামে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়’— জানান রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/জেএএম