পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র: কঠিন ঋণে গ্যারান্টি চায় নির্মাতা কোম্পানি
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২১:৩৬
।। স্পেশাল করেসপেন্ডন্ট।।
ঢাকা: পটুয়াখালীতে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্মাণ কাজের জন্য চীন থেকে নমনীয় ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে চীনের বৈদেশিক প্রকল্প ঋণের আওতায় প্রকল্পটির অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্মিতব্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির যৌথ মালিকানার কোম্পানি। এ জন্য প্রস্তাবিত ঋণচুক্তির বিপরীতে সরকারের রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি চাইছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসিএল)।
গত বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে ওই রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টির নীতিগত সম্মতির জন্য চিঠি দিয়েছে বিসিপিসিএল। এখন অর্থ বিভাগ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগকে এ সম্মতি নিতে হবে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। দুই ইউনিটের কেন্দ্রটির প্রথমটি আগামী বছরের প্রথমভাগে এবং অপর ইউনিটটি একই বছরের শেষ নাগাদ চালু হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। কেন্দ্রটির প্রথম পর্যায়ের কাজ চলমান এবং এ পর্যায়ের আর্থিক হিসাবও সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরুর বিষয়টি এখন অপেক্ষমাণ।
বাংলাদেশের নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের সিএমসির (চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন) উদ্যোগে এবং সমান অংশীদারিত্বে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে এবং কেন্দ্রটি পরিচালনায় দুই প্রতিষ্ঠানের সম-মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)।
কেন্দ্রটির নির্মাণ ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে চীনের দুই কোম্পানি এনইপিসি এবং সিইসিসি নিয়ে গঠিত কনসোর্টিয়াম।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ১৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা (২২০ কোটি মার্কিন ডলার)। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ অর্থ ঋণ হিসেবে দেবে চীনের এক্সিম ব্যাংক। বাকি ২০ শতাংশের সমান যোগান দেবে এনডব্লিউপিজিসিএল এবং সিএমসি।
কেন্দ্রটির প্রথমপর্যায়ের কাজের জন্য এরইমধ্যে অনমনীয় ঋণ দিয়েছে এক্সিম ব্যাংক। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের জন্য সহজ শর্তের নমনীয় ঋণ প্রাপ্তির জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু ইআরডি জানায়, আগামী ৫ বছরে চীনা অর্থায়নে বাস্তবায়িতব্য প্রকল্পের জন্য নমনীয় ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, নমনীয় ঋণের সুদ কম এবং পরিশোধকালীন সময়ও বেশি পাওয়া যায়। অন্যান্য শর্তের বেড়াজালও কম। কিন্তু অনমনীয় ঋণ একদিকে কঠিন শর্তের অন্যদিকে ঋণদাতার অনেক শর্তপালন করতে হয়। যেহেতু নমনীয় ঋণ পাওয়া যায়নি তাই অনমনীয় ঋণের ওপরই নির্ভর করতে হবে। অর্থবিভাগকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হবে।
বিসিপিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে বৈদেশিক অর্থায়নের উৎস নির্ধারণ করা প্রয়োজন। কারণ প্রকল্প কাজের জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করার আগেই প্রকল্পের অর্থায়ন প্রাপ্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করা আবশ্যক।
দ্বিতীয়পর্যায়ের কাজের বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য এরইমধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে আগ্রহপত্র পাওয়া গেছে। কেন্দ্রটির মালিকানার অর্ধেক এনডব্লিউপিজিসিএল’র এবং বাকি অর্ধেকের মালিকানা চীনা কোম্পানি সিএমসির। নমনীয় ঋণ পাওয়ার সুযোগ না থাকায় চীনের বৈদিশিক প্রকল্প ঋণ থেকে এর অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই ঋণের দায় এনডব্লিউপিজিসিএল এবং সিএমসি সমানহারে বহন করবে।
খোরশেদুল আলম বলেন, ‘চীনের বৈদেশিক প্রকল্প ঋণের আওতায় ঋণ গ্রহণ করতে হলে ঋণের সুদ ও অন্যান্য খরচ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার জন্য রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি আবশ্যক। মোট ঋণের ৫০ শতাংশের জন্য এনডব্লিউপিজিসিএলের পক্ষে রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি প্রয়োজন হবে। সিএমসির বাকি ৫০ শতাংশের জন্য তা প্রযোজ্য হবে না। তাই প্রকল্পের ঋণ গ্রহণের কার্যক্রম যথাসময়ে সম্পন্ন করার স্বার্থে অর্থ বিভাগকে রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি ইস্যুর নীতিগত সম্মতি প্রদানের অনুরোধ করা যেতে পারে।’
এনডব্লিউপিজিসিএল’র এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৯ সালের এপ্রিলে কেন্দ্রটির ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিট এবং অক্টোবরে দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ কাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ এগিয়ে চলছে। আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তিতে নির্মাণাধীন কেন্দ্রটিতে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম আট সেন্ট বা সাড়ে ছয় টাকার মতো হতে পারে।
সারাবাংলা/এইচএ/একে