২৬ বছরেও সংস্কার হয়নি রাবির আব্দুল লতিফ হল, ঝুঁকি নিয়ে বসবাস
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৮:২৫ | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৮:২৮
।। আবু সাঈদ সজল, রাবি করেসপন্ডেন্ট ।।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে পুরানো আবাসিক হলগুলোর মধ্যে একটি নবাব আব্দুল লতিফ হল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পর ১৯৬৫ সালে হলটি নির্মাণ করা হয়। হলটির নাম নবাব আব্দুল লতিফ হলেও দীর্ঘদিনের সংস্কারের অভাবে হলটির নবাবী হাল একদম নেই। দেখতে যেমন জীর্ণ দশা, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণও হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য।
হলটি ঝুকিপূর্ণি ঘোষণা করে ২৬ বছর আগেই বিশেষজ্ঞরা হলের ছাদটি সংস্কারের প্রস্তাব দিলেও এখনো তা সংস্কার করা হয়নি। ফলে চরম ঝুঁকি নিয়ে সেখানে বসবাস করছে ৩২৫ জন আবাসিক শিক্ষার্থী।
হলের দুই সিটের কক্ষগুলোর ছাদ থেকে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো জায়গার পলেস্তরা খসে পড়ছে। মাঝে মধ্যে পলেস্তরা খসে পড়ে আহত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। কয়েকদিন আগে ডাইনিং হলের পলেস্তরা খসে মাথায় পড়ে মারাত্মক আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারী। তার মাথায় দেওয়া হয় পাঁচটি সেলাই।
তৃতীয় তলার ছাদের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। এ ছাড়া ফাটল দেখা দিয়েছে হলের সিঁড়িতেও। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা দাবি তুলেছেন যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগেই হলটি ভেঙে সংস্কার করা হোক অথবা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হোক।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ১৭টি হলের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থা এই হলের। এ ছাড়াও ঝুকিপূর্ণ অন্যান্য হলগুলোর মধ্যে রয়েছে শের-ই বাংলা হল, সৈয়দ আমির আলী হল ও শাহ মখ্দুম হল। সম্প্রতি হলগুলোর সংস্কার দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করলেও কোনো হলেরই সংস্কারে হাত দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১৯৯২ সালে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে আগুনে পুড়ে যায় গোটা আব্দুল লতিফ হল। সেসময় পুরোপুরি ড্যাম হয়ে যায় হলটি। বুয়েট থেকে বিশেজ্ঞদের ডেকে দেখানো হলে তারা হলটি পরীক্ষা করে জানিয়েছিলেন, সেটির মাত্র ৩৮ থেকে ৪০ শতাংশ টিকে থাকার ক্ষমতা আছে। তার মধ্যে ৩৬২, ৩৬৪ নম্বর রুমের শক্তিক্ষমতা মাত্র ১৫ শতাংশেরও কম হওয়ায় কক্ষদুটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বড় ধরনের বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেতে ১৯৯৪ সাল থেকে হল প্রশাসন সংস্কার আবেদন জানালেও এখন পর্যন্ত সংস্কার করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, ছাদের পলেস্তরা ভেঙ্গে পড়ে। মাঝে মাঝে কোনো কোনো কক্ষে পানিও পড়ে। অধিকাংশ সিঁড়িতে ফাটল ধরেছে। সারাক্ষণ ঝুঁকির মুখে থাকি আমরা। অন্যান্য সমস্যা তো আছেই। যেহেতু পুরো হলেই ড্যাম তাই হয় হলকে ব্লক করে দেওয়া হোক অথবা হলের তৃতীয় তলার ছাদ ভেঙে পুরোটাই সংস্কার করা হোক।
আহত হলের ডাইনিংয়ের কর্মচারী আব্দুল খালেক জানান, বিভিন্ন সময়ে হলের সংস্কারের কথা জনালেও কোনো উদ্যোগই নেয়নি প্রশাসন। কিন্তু ছাদের পলেস্তরা পরে আমার মাথা ফেটে পাঁচটি সেলাই দেওয়া হলে চিকিৎসার জন্য মাত্র পাঁচশ টাকা দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও হলের আবাসিক শিক্ষার্থী তৌহিদ মোর্শেদ জানান, হলের সংস্কার দাবিতে আবাসিক শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১৮ দফা দাবি নিয়ে প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু আমাদের সংস্কারের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
হল প্রসাশনের দাবি, ১৯৯৪ সাল থেকে সংস্কারের দাবি জানানো সত্ত্বেও যেহেতু কোনো সংস্কার করা হচ্ছে না তাই কারও জীবনের ক্ষতি বা বড় বিপদের ঘটনা হলে হল প্রশাসন তার দায় নেবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী সিরাজুম মুনির জানান, হলের সংস্কারের জন্য চার থেকে পাঁচবার বাজেট চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে কিন্তু যদি বাজেট না আসে তাহলে এ ব্যাপারে আমাদের করার কিছুই থাকে না। আমাদের নিজ উদ্যোগে কোনো কিছু করার ক্ষমতা নেই। তবে আমরা এ বিষয়ে সতর্ক রয়েছি।
হলের সাবেক ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ (প্রভোস্ট) ড. বিপুল কুমার বিশ্বাসকে পরপর দুইদিন ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কোনো নাম্বারেই ফোন রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রো-ভিসি-২ প্রফেসর ড. চৌধুরী মো. জাকারিয়া জানান, আমি বিষয়টি অবগত আছি। শিক্ষার্থীরা যাতে আতঙ্ক ছাড়াই হলে থাকতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে দ্রুতই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আরও পড়ুন-
রাবি বঙ্গবন্ধু হলে তীব্র পানি সংকট, উদ্যোগহীন কর্তৃপক্ষ
সারাবাংলা/এমআই