‘গায়েবি মামলার জলোচ্ছ্বাসে সারাদেশ প্লাবিত’
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৩:১১
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: পুলিশের দেওয়া গায়েবি মামলার জলোচ্ছ্বাসে সারাদেশ প্লাবিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, ‘সরকারি জুলুমের তীব্র কষাঘাতে সারাদেশ বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। গোটা দেশকে ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত করার উদ্যোগ চলছে। একদিকে লাগামহীন গ্রেফতারের উন্মাদনা, অন্যদিকে গায়েবি মামলার জলোচ্ছ্বাসে সারাদেশ আজ প্লাবিত।’
বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা গ্রাম থেকে শহরে এবং শহর থেকে বন্দরে ছুটে বেড়াচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীরা ঘরছাড়া; গ্রাম ও শহর নেতাকর্মীশূন্য। তৃণমূলের ওয়ার্ড থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন কমিটিতে সভাপতি থেকে সর্বশেষ সদস্য পর্যন্ত সবার বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে।’
বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর সাধারণ সমর্থকরাও মামলা-হামলার ছোবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘মূলত ভোটারশূন্য করার জন্যই সরকার বিএনপির ওপর আগাম আক্রমণ শুরু করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন আন্দোলন বা নির্বাচনের কাজে অংশগ্রহণ করতে না পারেন, সেজন্যই এই আগাম অভিযান।’
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা আরও বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে এজেন্ট দেওয়া দূরে থাক, বিএনপির কোনো প্রার্থীও যেন খুঁজে পাওয়া না যায়, সেজন্য সরকার আগাম আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। অবৈধ সরকার এখন উন্মাদের দশায় পৌঁছেছে। এরা নিজেদের আত্মবোধহীন উন্মাদে পর্যবসিত করেছে। মানুষের ক্ষোভের ধাক্কায় পালিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজতেই সরকার বেসামাল হয়ে ভুয়া মামলা ও গ্রেফতারকে কাজে লাগিয়ে টিকে থাকতে চাচ্ছে।’
আওয়ামী লীগকে খুন, গুম, লুটপাট, দখলবাজি, মিথ্যা মামলার বরপুত্র আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার স্বনির্মিত এই পুলিশি রাষ্ট এখন উৎখাত করার জন্য মানুষ ঐক্যবদ্ধ। শাসকদল পুলিশকে যেভাবে ব্যবহার করছে তা নজীরবিহীন। পুলিশি আচরণ মনুষ্যত্বহীনতার চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। অবৈধ সরকারের মসনদ গুঁড়িয়ে দিতে সমাজের ঐক্যবদ্ধ শক্তি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সরকারের পতনের জন্য অত্যাচারিত মানুষ আজ গর্জে উঠছে।’
‘শুক্রবার (১৪ সেপ্টেম্বর) গাজীপুরের কালিগঞ্জে দু’জন বিএনপি কর্মীকে গ্রেফতার এবং ৩৭ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর আগেও শ্রীপুর ও কালিয়াকৈরে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়,’— জানান রিজভী।
সংসদীয় কমিটির তৈরি করা ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল নিয়ে শঙ্কা জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মতকে উপেক্ষা করে বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিলের ওপর প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংসদীয় কমিটি, যা চলতি সংসদ অধিবেশনেই পাসের জন্য পেশ করা হতে পারে। এই আইন পাশ করা হলে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে। গণমাধ্যমকে সম্পূর্ণরুপে নিয়ন্ত্রণ করতেই এই আইন করা হচ্ছে। শুধু গণমাধ্যমই নয়, সরকারবিরোধী যেকোনো সমালোচনার পায়ে জিঞ্জির পরাতেই এই আইন; যেন কেউ সরকারের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটিও উচ্চারণ করতে না পারে।’
‘এটি একটি ভয়ংকর কালাকানুন। এই আইনে যেকোনো মানুষকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুচ্ছ অজুহাতে গ্রেফতার করতে পারবে, গণমাধ্যম অফিসে যখন তখন সরকারি আইন প্রয়োকারী সংস্থা হানা দিয়ে কম্পিউটার, ল্যাপটপ তল্লাশি করতে পারবে, সিজ করতে পারবে, নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিতে পারবে, এমনকি গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে পারবে,’— বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘এই আইনে কোনো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা যাবে না। অর্থাৎ সরকারের কোনো দুর্নীতিই প্রকাশ করা যাবে না। প্রকাশ করা হলে গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধে অপরাধী হতে হবে। এটা শুধু চরম উদ্বেগজনকই নয়, এটি সংবিধানের মূল নীতির পরিপন্থী।’
বিনা চিকিৎসায় খালেদা জিয়াকে শোচনীয় দুর্দশায় ফেলে দিতে কৌশলী চক্রান্ত চালানো হচ্ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার পছন্দমতো চিকিৎসকদের দ্বারা চিকিৎসা নেওয়ার অধিকার নেই। সরকারই ঠিক করে দিচ্ছে কারা হবেন বেগম জিয়ার চিকিৎসক। তাই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় চিকিৎসকদের দিয়ে তার মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে।’
‘অর্থাৎ ক্ষমতাসীনদের অনুগত চিকিৎসকরা বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রথমে শেখ হাসিনাকে রিপোর্ট করবে। তারপরে শেখ হাসিনা যা বলে দেবেন, সেই অনুযায়ী চিকিৎসা চলবে,’— বলেন রিজভী।
ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ না দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ডাক্তারদের দিয়ে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড গঠন দুরভিসন্ধিমূলক বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসা নিয়ে এটি এক চরম তামাশা। এর মাধ্যমে বেগম জিয়ার মানবাধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের অন্তর্ভুক্ত করার আশ্বাস দেওয়ার পরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা রাখেননি। দেশনেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অপরিণামদর্শিতার মাশুল একদিন তাদের দিতেই হবে।’
মেডিকেল বোর্ডে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার ইচ্ছাকৃতভাবেই বেগম জিয়াকে গুরুতর শারীরিক অসুস্থতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সরকারের অনুগ্রহভাজন ডাক্তারদের দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত বিপজ্জনক। যদি হিংসাশ্রয়ী হয়ে দেশনেত্রীর ক্ষতি করা হয়, তাহলে সরকারের পরিণাম হবে ভয়াবহ।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা শাহ মোহম্মদ আবু জাফর, আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, হেলেন জেরিন খান, আমিনুল ইসলামসহ অন্যরা।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর