Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্ত্রীর সঙ্গে ভাইয়ের পরকীয়ায় প্রাণ হারালেন মনির


১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৬:৩৯

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ছোট ভাই আজমল হক মিন্টুর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল স্ত্রী কাজল রেখার। একপর্যায়ে তারা বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। আর তার জন্যই পাঁচ থেকে সাত মাসের পরিকল্পনায় তারা হত্যা করে মনিরুজ্জামান মনিরকে।

শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গুলশান ডিসি কার্যালয়ের কনফারেন্স কক্ষে উপকমিশনার মোস্তাক আহমেদ সাংবাদিকদের এই হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।

গত ৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বাড্ডা সাতারকুল এলাকায় খোলা মাঠ থেকে মনিরুজ্জামান মনিরের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গে ময়নাতদন্তের সময় মনিরের ছোট ভাই আজমল হক মিন্টু লাশ শনাক্ত করেন। তবে কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে পারেননি কেউ। পরে পরবর্তীতে পুলিশ আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে।

উপকমিশনার মোস্তাক আহমেদ বলেন, মনির-মিন্টুদের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে। কর্মসূত্রে মনির থাকতেন ফেনীতে, মিন্টু থাকতেন কড়াইল বস্তি এলাকায়। মনিরের স্ত্রী কাজল রেখা দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন দিনাজপুরে। এর মধ্যেই মিন্টুর সঙ্গে কাজল রেখার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে দেবর-ভাবি সিদ্ধান্ত নেন, তারা বিয়ে করবেন। তবে মিন্টুকে কাজল রেখা শর্ত দেন, বিয়ে করতে হলে ভাইকে মেরে ফেলতে হবে। সেই অনুযায়ী গত পাঁচ থেকে সাত মাস ধরে মনিরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তারা।

মোস্তাক আহমেদ বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী মিন্টু ঢাকায় কিলার আব্দুল মান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এক লাখ টাকায় মনিরকে হত্যায় রাজি হয় মান্নান। মনিরকে খুন করতে ১০ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়া হয় মান্নানকে, বাকি টাকা কাজ শেষে দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। মান্নান জানান, ছিনতাইয়ের সময় মনির খুন হয়েছে— এমনভাবে পরিকল্পনা করা হবে।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ জানায়, ঈদ করতে মনির ফেনী থেকে বাড়ি গিয়েছিলেন। তবে ফেনীতে ফেরার আগে ছোট ভাই মিন্টু তাকে জানান, তার বিয়ের জন্য মেয়ে দেখতে হবে ঢাকায়। কাজল রেখাও স্বামীকে তাড়া দেন ঢাকা যাওয়ার জন্য। পরে ৭ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর থেকে ঢাকার পথে রওনা দেন মনির। ঢাকায় নামার পর মিন্টুকে ফোন দিলে তিনি মনিরকে জানান, শাওন নামে তার এক বন্ধুকে পাঠিয়েছে ভাইকে রিসিভ করার জন্য। শাওনের সঙ্গে গাবতলী থেকে গাড়িতে করে রওনা দেন মনির। ওই গাড়িতেই ছিলেন আব্দুল মান্নান ও ফাহিম। শাওনসহ এই দু’জনও ছিলেন কন্ট্রাক্ট কিলার, যাদের সঙ্গে এক লাখ টাকায় মনিরকে হত্যার চুক্তি।

ওই গাড়িতে করে প্রথমে মনিরকে নিয়ে যাওয়া হয় নতুন বাজার এলাকায়। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় সাতারকুল এলাকায় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পশ্চিম দিকে মেরুর হিন্দু পাড়ার পাশে খোলা মাঠের পায়ে হাঁটার রাস্তার পাশে। সেখানেই মনিরকে হত্যা করে পালিয়ে যান আব্দুল মান্নান, ফাহিম ও শাওন।

গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মোস্তাক আহমেদ বলেন, লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে নিলে ছোট ভাই মিন্টু তা শনাক্ত করেন। একই দিন মিন্টু বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলাও দায়ের করেন।

ডিসি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করার জন্য পুলিশ প্রযুক্তির সহায়তা নেয়। সংশ্লিষ্ট সবার ফোন কল রেকর্ড করে জানা যায় দেবর-ভাবির প্রেমের সম্পর্কের কথা। পরে ১২ সেপ্টেম্বর কাজল রেখাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে পুরো পরিকল্পনা বলে দেন। পরে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন তিনি। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ীই গ্রেফতার করা হয় মিন্টুকে। তার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে পরে কিলার মান্নান, শাওন ও ফাহিমকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। তারাও এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) তাদের আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি আগের মামলার বাদী আসামি হওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর