দেশে বেড়েছে ক্যান্সারের প্রকোপ, বেড়েছে মৃত্যু
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৯:৫৭
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: দেশে বেড়েছে ক্যান্সারের প্রকোপ, একইসঙ্গে বেড়েছে মৃত্যুর হার। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার-এর (আইএআরসি) প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়। গ্লোবোক্যান ২০১৮ অনুযায়ী, প্রতি বছর দেশে নতুন করে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৮১ জন আর মারা যান ১ লাখ ৮ হাজার ১৩৭ জন। গ্লোবোক্যানের ২০১২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই সংখ্যা ছিল, ১ লাখ ২২ হাজার ও মারা যেতেন ৯১ হাজার মানুষ।
সম্প্রতি আইএআরসি ‘গ্লোবোক্যান ২০১৮’ প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে সেন্টার ফর ক্যান্সার প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ (সিসিপিআর) এবং কমিউনিটি অনকোলজি ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এসব তথ্য জানায়।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের ইপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান ও সিসিপিআর-এর উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন সংবাদ সম্মেলনে জানান, ক্যান্সার গবেষণার দায়িত্বপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএআরসি বিভিন্ন দেশের জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই ও সমন্বয় করে গ্লোবোক্যান নামে একটা ডাটাবেজ প্রকাশ করে, যেখানে বাংলাদেশসহ ১৮৫ দেশের অনুমিত হিসেব দেওয়া হয়।
গ্লোবোক্যান ২০১৮ এর এই প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর নতুন ক্যান্সারাক্রান্ত মোট ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৮১ জন রোগীর মধ্যে পুরুষ ৮৩ হাজার ৭১৫ জন এবং নারী ৬৭ হাজার ৬৬ জন। দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৬৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৫৩ জন ধরে এই হিসাব করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, নারী ও পুরুষ উভয় যে ৫ ধরনের ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হন- খাদ্যনালির ক্যান্সার। এতে প্রতিবছর নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন ২০ হাজার ৯০১ জন, যা মোট জনসংখ্যার ১৩ দশমিক ৯ ভাগ, ঠোঁট ও মুখগহ্বরের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন ১৩ হাজার ৪০১ জন অর্থাৎ ৮ দশমিক ৯ ভাগ, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন ১২ হাজার ৭৮৪ জন অর্থাৎ ৮ দশমিক ৫ ভাগ, ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন ১২ হাজার ৩৭৪ জন অর্থাৎ ৮ দশমিক ৫ ভাগ এবং জরায়ু মুখের ক্যান্সারে প্রতি বছর নতুন করে আক্রান্ত হন ৮ হাজার ৬৮ জন যা মোট জনসংখ্যার ৫ দশমিক ৪ ভাগ।
পুরুষরা যেসব ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হন, তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে খাদ্যনালির ক্যান্সার। এতে প্রতি বছর নতুন করে আক্রান্ত হন ১৩ হাজার ৪৮৩ জন, যা মোট জনসংখ্যার ১৬ দশমিক ১ ভাগ, ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হন ৯ হাজার ২৫৪ জন অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ১১ দশমিক ১ ভাগ, ঠোঁট ও মুখ গহ্বরের ক্যান্সারে নতুন করে আক্রান্ত হন ৮ হাজার ৮৯৫ জন অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ১০ দশমিক ৬ ভাগ, গলবিল বা হাইপোফ্যারিংস ক্যান্সার। এতে আক্রান্ত হন ৬ হাজার ৫৪ জন অর্থাৎ ৭ দশমিক ২ ভাগ ও পাকস্থলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হন ৪ হাজার ৭৯২ জন যা মোট জনসংখ্যার ৫ দশমিক ৭ ভাগ।
নারীরা বেশি আক্রান্ত হন স্তন ক্যান্সারে। প্রতি বছর নতুন করে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন ১২ হাজার ৭৬৪ জন, যা মোট জনসংখ্যার ১৯ ভাগ), জরায়ুমুখের ক্যন্সার। এতে নতুন করে আক্রান্ত হন ৮ হাজার ৬৮ জন অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ১২ ভাগ, খাদ্যনালির ক্যান্সারে আক্রান্ত হন ৭ হাজার ৪২৩ জন অর্থাৎ ১১ দশমিক ১ ভাগ), পিত্ত থলির ক্যান্সারে আক্রান্ত হন ৫ হাজার ২৬১ জন অর্থাৎ ৭ দশমিক ৮ ভাগ এবং ঠোঁট ও মুখ গহ্বরের ক্যন্সারে আক্রান্ত হন ৪ হাজার ৫০৬ জন যা মোট জনসংখ্যার ৬ দশমিক ৭ ভাগ।
ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন আরও বলেন, আমাদের দেশে হাসপাতালভিত্তিক এই প্রতিবেদনের শীর্ষ পাঁচ ক্যান্সারের ক্রমবিন্যাসের গড়মিল রয়েছে। কিন্তু জনগোষ্ঠীভিত্তিক নিবন্ধন আমাদের না থাকায় এর সঙ্গে ভিন্নমত জানালেও তা প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ নেই।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি অনকোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাবেরা খাতুন।
সারাবাংলা/জেএ/এটি