খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে ভর্তির সুপারিশ
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৩:৩১
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তির সুপারিশ করেছে তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। এই সুপারিশসহ খালেদা জিয়ার প্রেসক্রিপশন এরই মধ্যে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ আল হারুন সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ড মনে করছে, হাসপাতালে ভর্তি হলে খালেদা জিয়াকে আরও উন্নত চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হবে। সে কারণেই খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসার সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।’
আরও পড়ুন- হৃদরোগেও ভুগছেন খালেদা, প্রেসক্রিপশন রোববার
রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিএসএমএমইউ থেকে খালেদা জিয়ার জন্য মেডিকেল বোর্ডের প্রেসক্রিপশন কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
স্বাস্থ্য পরীক্ষায় খালেদা জিয়ার গুরুতর কিছু পাওয়া যায়নি জানিয়ে আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘খালেদা জিয়া হাসপাতাল ভর্তি হতে চাইলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল ভালো হবে বলেই মতামত দিয়েছেন তার চিকিৎসার জন্য গঠিত হওয়া মেডিকেল বোর্ড।’
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে কী পাওয়া গিয়েছে— জানতে চাইলে আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, নতুন কোনো উপসর্গ তারা পাননি, তার অসুস্থতা গুরুতর কিছু নয়। আগে থেকেই তার রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস ছিল। আর সে কারণেই তার দুই হাত ও পিঠে ব্যথা। এজন্য চিকিৎসকরা উপযুক্ত প্রেসক্রিপশনও দিয়েছেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় খালেদা জিয়ার ডায়াবেটিস, রক্তচাপ বা হৃদযন্ত্রের কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
বিএসএমএমইউ পরিচালক আরও বলেন, মেডিকেল বোর্ড তাকে ট্রিটমেন্ট দিয়েছেন। এরপরও যদি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন, তাহলে এমন একটি হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে যেখানে সব ডিসিপ্লিনের চিকিৎসা দেওয়া যাবে। আর তাই তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্যই মেডিকেল বোর্ড সুপারিশ করেছে। তার কিছু স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতেও সুপারিশ করা হয়েছে।
তাকে কোন হাসপাতালে কবে ভর্তি করা হবে, সেটা কারা কর্তৃপক্ষের ব্যাপার বলে জানান বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক। খালেদা জিয়াকে কত দিনের ভেতরে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে, সে বিষয়েও চিকিৎসকদের প্রতিবেদনে কিছু বলা হয়নি বলেও জানান তিনি।
খালেদা জিয়াকে ভর্তি করানোর বিষয়ে বিএসএমএমইউ আগ্রহী কি না— জানতে চাইলে আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, আমরা তাকে ভর্তি নেওয়ার জন্য প্রস্তুত।
এর আগে, শনিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে যান খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড। কারা কর্মকর্তা মাহবুবুল ইসলাম জানান, মেডিকেল বোর্ডের সদস্য প্রায় ২০ মিনিট ধরে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। কারাগারের সহকারী সার্জন ডা. মাহমুদুল ইসলাম জানান, খালেদা জিয়ার আগের সমস্যা আর্থ্রাইটিস ও হাঁটুর ব্যাথার পাশাপাশি হৃদযন্ত্রেও ব্যাথা রয়েছে।
খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা হলেন— বিএসএমএমইউয়ের পাঁচ চিকিৎসক মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এম এ জলিল, কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক, অর্থপেডিক বিভাগের অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বিরু, চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তারিক রেজা আলী ও ফিজিক্যাল মেডিসিন সহযোগী অধ্যাপক ডা. বদরুন্নেসা।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায়ে পাঁচ বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ওই দিনই তাকে আদালত থেকে নেওয়া হয় পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে। গত সাত মাসের বেশি সময় ধরে তিনি সেখানে সাজা ভোগ করছেন।
খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার পর থেকেই বিএনপি দাবি করে আসছে, তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে এবং তার সুচিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার দাবি করা হয়।
এদিকে, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার একাধিক শুনানির তারিখ পড়লেও সেসব শুনানিতে শারীরিক অবস্থার কথা উল্লেখ করে হাজির হননি খালেদা জিয়া। সর্বশেষ গত ৪ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার ওই আদালত স্থানান্তর করা হয় কারাগারে। ৫ সেপ্টেম্বর কারাগারেই বসে আদালত। সেদিন আদালতে হাজির হয়ে খালেদা জিয়া বলেন, শারীরিক অবস্থার কারণে তার পক্ষে আর আদালতে হাজির হওয়া সম্ভব না। আদালত যা খুশি সাজা দিতে পারেন। পরে ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর কারাগারে আদালত বসলেও হাজির হননি খালেদা জিয়া।
এর মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ইউনাইটেড কিংবা অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তির কথা বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জেল কোড অনুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই অনুযায়ীই বিএসএমএমইউয়ের পাঁচ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে নিয়ে গঠিত হয় মেডিকেল বোর্ড। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে মেডিকেল বোর্ডে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসককে রাখার দাবি করা হলেও সেই দাবি মানা হয়নি।
সারাবাংলা/জেএ/টিআর