‘দিবার পারি নাই হামা কিছু, এবার ভোট দিমো প্রধানমন্ত্রী’
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৯:১৬
।। নিয়াজ আহমেদ সিপন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।
লালমনিরহাট: বয়স ৮০ বছরের বেশি হবে কেরামত আলীর। দীর্ঘদিন এই তিস্তা দিয়ে বালু চরে হেঁটে রংপুরে গিয়েছেন। কেরামত আলী কখনো চিন্তা করতে পারেনি বালু চরে সেতু ও রাস্তা হবে। সবসময় এলাকার মানুষের পাশে থাকতেন এই বৃদ্ধ। কত মানুষকে বালু ও নদী পথ দিয়ে নিয়ে গেছেন রংপুর কিংবা রাজশাহী তার কোনো হিসাব নেই।
এ বালু পথে তার নানান ধারণের স্মৃতি আছে যা কিনা তিনি কখনো ভুলতে পারবেন না। তিনি ভুলতে পাবেন না তার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। প্রধানমন্ত্রী’র ভিডিও কনফারেন্স বক্তব্যে শুনতে তিনি এসেছেন। বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী যখন বলেছেন, রংপুরের মানুষ আমাকে ভোট দেন না। সেই কথা শুনে তিনি চিন্তিত হয়ে সেতুটির এক জায়গায় বসে থাকেন।
তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তোমাক ধন্যবাদ, রংপুর ও লালমনিরহাটের তিস্তা পাড়ের মানুষের এটা ছাড়া দেওয়ার কিছু নেই। এই বালু পথ এ্যালা হামার রাস্তা হইছে। বানাইলেন সেতু আর কি চাই। হামাক সব দিছেন দিবার পাই নাই হামা কিছু। এবার ভোট দিমো প্রধানমন্ত্রী। ভোট দিয়ে হামা এই ঋণ পরিশোধ করমো।’
এভাবেই বলেছেন ৮০ বছরের বৃদ্ধ লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার রুদ্বেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা কেরামত আলী। তিনি পেশায় ঘোড়ার গাড়ি চালক।
অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে উদ্বোধন হলো গঙ্গাচড়ায় তিস্তার উপর নির্মিত ‘গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু’।
রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার সময় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় গঙ্গাচড়ায় ভিডিও কনফারেন্সের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, জেলা প্রশাসক এনামুল হাবিবসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া এলাকার বিভিন্ন পর্যায়ের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশেষ করে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় দুর্ভিক্ষ ছিল বেশি। সেই অবস্থা এখন আর নেই। ব্রিজটি চালু হলে রংপুরের সঙ্গে কিংবা ঢাকার সঙ্গে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরত্ব কমবে। তাছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলের বুড়িমারী স্থলবন্দর হয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ গুরুত্ব পাবে। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য সহজে বাইরে বিক্রি করতে পারে। কৃষকরা লাভবান হবে।’
রংপুরবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন,‘ক্যাংকা করে কাজ করি বাহে। রংপুরে নৌকায় তো ভোট পাই না। উন্নয়ন করি আমি, আর ভোট দেন লাঙলে। অবশ্য তিস্তাপারের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।’
সেতু উদ্বোধন করে শেখ হাসিনা উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় জাহাঙ্গীর হোসেন নামের এক কৃষক বলেন, ‘এই এলাকা আগে মঙ্গা নামে পরিচিত ছিল। মঙ্গা শব্দটি খুঁজতে হলে এখন জাদুঘরে যেতে হবে। আমাদের রংপুর এখন সবুজে ভরা। আমরা কৃষকরা বীজ পাচ্ছি, সার পাচ্ছি। ভর্তুকির টাকা পাচ্ছি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। ভালো ফসল আমরা উৎপাদন করতে পারছি। কৃষককে এখন আর সারের পেছনে দৌড়াতে হয় না। সার দৌড়ায় কৃষকের পেছনে।’
সড়ক ও সেতু নির্মাণ কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর গঙ্গাচড়ায় ভিডিও কনফারেন্সের কারণে গত রাতে যে ব্রিজটি ধসে গিয়েছিল। সেটি দ্রুত গতিতে মেরামত করা হয়েছে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমরা সচল করেছি মহিপুর কাকিনা সড়কের যোগাযোগ।’
২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৯ মিটার প্রস্থ তিস্তা সড়ক সেতুটি নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেতুতে ১৬টি পিলার, ২টি অ্যাপার্টমেন্ট, ১৭টি স্প্যান ও ৮৫টি গার্ডার রয়েছে। থাকছে লাইটিং ব্যবস্থা।
সারাবাংলা/একে
উত্তরবঙ্গ গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লালমনিহাট