জনগণের সম্পদ হলো ঐতিহাসিক ‘রোজ গার্ডেন’
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২০:৩৬
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের জন্মস্থান পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি ‘রোজ গার্ডেন’র রেজিস্ট্রেশন দলিল বুঝে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকারের কেনা ঐতিহাসিক এ বাড়িটি এখন থেকে জনগণের সম্পদ হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে। এটি রূপ দেওয়া হবে জাদুঘরে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় শিগগিরই এ বিষয়ে কাজ শুরু করবে।
রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গণভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাড়িটির মালিক লায়লা রকীব ও তার সন্তানদের কাছ থেকে বাড়িটি কেনার রেজিস্ট্রেশন দলিলপত্র গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
ঐতিহাসিক মূল্য বিবেচনায় ব্যক্তি মালিকানায় থাকা পুরনো ওই বাড়িটি ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকায় কিনে নেয় সরকার। বাড়িটির অবস্থান পুরান ঢাকার ঋষিকেশ দাস রোডে।
রোজ গার্ডেনকে পুরাতন ঢাকার ঐতিহাসিক স্মৃতি চিহ্নসমূহ তুলে ধরতে জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোজ গার্ডেন ভবনটির একটি ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে। কারণ এ ভবন থেকে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন উপমহাদেশের অন্যতম পুরনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের জন্ম হয়।’
এ ধরনের ঐতিহাসিক স্থাপনাকে নষ্ট করা ঠিক নয় বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার এর আগে নগর ভবনে একটি জাদুঘর করেছিল কিন্তু সেখানে অফিসিয়াল কাজের চাপ বেশি থাকায় জাদুঘরের পরিবেশ বজায় রাখা যায় না। এরই পরিপ্রক্ষিতে নগর ভবনের জাদুঘর রোজ গার্ডেনে স্থানান্তর করা হবে এবং সেখানে পুরাতন ঢাকার ঐতিহাসিক নিদের্শন সমূহ প্রদর্শন করা হবে।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এই বাড়িতেই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমান আওয়ামী লীগ) গঠনের পরিকল্পনা হয়। তৎকালীন মুসলিম লীগের প্রগতিশীল একটি অংশের উদ্যোগে বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এই রোজ গার্ডেনেই গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে এ দলের নতুন নাম হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
গত ৮ আগস্ট সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ওই বাড়িটি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন পায়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বর্তমান মালিকদের কাছ থেকে গণখাতে ক্রয় বিধি অনুযায়ী সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে সরকার ৩৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকায় বাড়িটি কিনে নিচ্ছে।
ক্রয় কমিটির উপস্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়, ঋষিকেশ দাস নামের এক ধনাঢ্য ও শৌখিন ব্যবসায়ী ১৯৩১ সালে প্রায় ২২ বিঘা জমির ওপর এই বাগানবাড়ি নির্মাণ করেন। দোতলা এই বাড়ির চারপাশে বিভিন্ন দেশ থেকে আনা দুর্লভ প্রজাতির গোলাপের চারা লাগান তিনি। বাড়ির নাম রাখেন ‘রোজ গার্ডেন। সাত হাজার বর্গফুট আয়তনের এই ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি জলসাঘর রয়েছে, যার মেঝে শ্বেতপাথরে তৈরি। বাড়ির সামনের অংশে শানবাঁধানো পুকুর। কিন্তু বাড়িটি পুরোপুরি সাজিয়ে তোলার আগেই দেউলিয়া হয়ে যান ঋষিকেশ দাস।
ঢাকার তখনকার এক পুস্তক ব্যবসায়ী কাজী আবদুর রশীদের কাছে ১৯৩৬ সালে ওই সম্পত্তি বিক্রি করে দেন তিনি। আবদুর রশীদ সেখানে একটি পাঠাগার গড়ে তোলেন এবং রোজ গার্ডেনের নাম পাল্টে রাখেন ‘রশীদ মঞ্জিল’। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রোজ গার্ডেনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ (বর্তমান আওয়ামী লীগ) গঠনের পরিকল্পনা হয়। কাজী আবদুর রশীদের কাছ থেকে ১৯৬৬ সালে রোজ গার্ডেনের মালিকানা পান তারই বড় ভাই কাজী হুমায়ুন বশীর। তিনি ১৯৭০ সালে বেঙ্গল স্টুডিওকে বাড়িটি ইজারা দেন।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৮৯ সালে রোজ গার্ডেনকে সংরক্ষিত ভবন হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু আদালতে মামলা করে ১৯৯৩ সালে অধিকার ফিরে পান কাজী আবদুর রশীদের মেজ ছেলে কাজী আবদুর রকীব। ১৯৯৫ সালে মারা যান তিনি। এরপর থেকে তার স্ত্রী লায়লা রকীবের মালিকানায় রয়েছে এই সম্পত্তি।
বাড়িটি তৈরির ইতিহাস থেকে জানা যায়, সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসায় ঢাকার খানদানি পরিবারগুলো তেমন পাত্তা দিত না ঋষিকেশ দাসকে। একবার তিনি জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর বাগানবাড়ি বলধা গার্ডেনের এক জলসায় গিয়ে অপমানিত হয়েছিলেন। এরপরই তিনি রোজ গার্ডেন তৈরির সিদ্ধান্ত নেন।
সারাবাংলা/এনআর/একে