ডুয়িং বিজনেস সূচকে ১০০ নিচে নামবে দেশ: বাণিজ্যমন্ত্রী
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২১:৩১
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ব্যবসায়ীদের প্রতি আওয়ামী লীগকে আবারও ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার আহ্বান জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘আমাদের আবারও নির্বাচিত করেন। আমরা আবারও ক্ষমতায় আসি। দেখবেন ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে বাংলাদেশ ১০০ এর নিচে চলে আসবে।’
এ সময় ব্যবসা বাণিজ্য আরও সহজ করতে ব্যবসায়ীদেরকেও কাজ করার আহ্বান জানান মন্ত্রী।
রোববার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক ফর পোস্ট এলডিসি গ্রাডুয়েশন, বিজনেস পারসপেকটিভ’ শীর্ষক প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে হচ্ছে ব্যবসা বাণিজ্যসহজীকরণ সূচক। ১৯০ টি দেশের মধ্যে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৭ তম। যে দেশে ব্যবসা বাণিজ্যের পরিবেশ যতো সহজ বা ভালো তালিকায় সে দেশ ততো এগিয়ে থাকে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন। ব্যবসায়ীদেরকে আমরাই সবচেয়ে বেশি নগদ প্রণোদনা দিয়েছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি থেমে থাকবে না। যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, সেভাবেই এগিয়ে যাবে। বর্তমান সরকার ব্যবসা বান্ধব, শ্রমিক বান্ধব এবং জনবান্ধব। তাই এ সরকারকে আবারো নির্বাচিত করতে হবে।
সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার কারণ উল্লেখ করে তোফায়েল বলেন, ‘অতীতে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের কারণে আমাদের নেওয়া অনেক প্রকল্প বন্ধ করে দেয়া হয়। নতুবা দেশ আরও এগিয়ে যেতো। তাই এবার সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেই হবে।’
জাতীয় ঐক্যের নামে অবাস্তব কোন প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে না বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সমালোচনা করে বলেন, ‘বলেছেন জাতিসংঘের মহাসচিবের আমন্ত্রণে গিয়েছেন। অথচ জাতিসংঘের সেক্রেটারির সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। এটি কোন ধরনের লেভেল? একটা পার্টির মহাসচিব। তাও আবার বাঙালি।’
পাকিস্তানের বেসরকারি এক টেলিভিশনের টক শোর ভাইরাল হওয়া এক ভিডিও মাইক্রোফোনে শোনান বাণিজ্যমন্ত্রী। যেখানে এক পাকিস্তানি নাগরিক আগামী ১০ বছরে পাকিস্তানকে বাংলাদেশ বানিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন। যদি তা পারেন তাহলে তিনি পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর গোলাম হয়ে যাবেন বলেও মন্তব্য করেন। উর্দু ভাষার ওই অনুষ্ঠানের বক্তব্য শুনিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী অবশ্য কোন মন্তব্য করেননি। বলেছেন, তাদের মুখেই শোনেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, দক্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের কল্যাণে আজকের প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। আমরা এসডিজির শর্ত পরিপালনে কাজ করছি। এটি অর্জনে নারীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ জন্য সরকারের প্রস্তাবিত ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে ১০টি নারী উদ্যোক্তাদের দেওয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে।
মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি গরিবের পকেট কেটে নেয়। অথচ মাথাপিছু আয় বাড়া সত্ত্বেও দেশে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশে ধরে রাখা গেছে। বর্তমান সরকারের সময়ে ২০০ বিলিয়ন ডলার অর্থিনীতিতে যোগ হয়েছে। অর্থনীতিতে এসেছে অকল্পনীয় পরিবর্তন।’
তিনি বলেন, এসডিজির লক্ষ্য পূরণে কৃষির উৎপাদন দ্বিগুণ করতে হবে। প্রসার ঘটাতে হবে যান্ত্রিকীকরণের। ভবিষ্যত বাংলাদেশ বিনির্মাণে পূঁজি বাজার, বীমা ও বন্ড মার্কেটের উন্নতি হতে হবে সমানতালে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সবুজ উন্নয়নের বিকল্প নেই।
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রযুক্তির নির্ভরতা বাড়ানো দরকার। আর্থিক নীতিতে সংস্কার আনতে হবে। বাংলাদেশ প্রচুর সম্ভাবনার দেশ। ঠিক কী ধরণের সম্ভাবনায় ডুবে আছি তা হয়তো আমরা নিজেরাও জানি না। বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, এলডিসি থেকে বের হয়ে গেলে আমরা অনেক সুবিধা পাবো না। যেহেতু উন্নত হবো, কিছু ছাড় দিয়ে হলেও আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। দেশের উন্নয়নের নারীদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। গার্মেন্ট, কৃষি ও মাইক্রো ক্রেডিটে নারীদের অবদান অগ্রগণ্য। আর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখত নারী উদ্যোক্তা তৈরি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে দক্ষ জনশক্তি বাড়াতে প্রয়োজন প্রশিক্ষণের।
এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘অনেকে বলে মধ্যম আয়ের দেশ হলে অর্থনৈতিক সাহায্য কমে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশ এখন আর সাহায্য নির্ভর অর্থনীতির দেশ নয়। বাংলাদেশ বিশ্বের ৪২ তম অর্থনৈতিক দেশ। ২০৩০ সালের মধ্যে ২৮ তম ও ২০৫০ সালে ২৩তম অর্থনৈতিক দেশে উন্নীত হবে বাংলাদেশ।’
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এই নেতা আরও বলেন, বেসরকারি খাত নিয়ে যদি আরও ভাবা না হয় তাহলে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নতির পথে সংস্কার করা কঠিন হবে। অনেক সময় থোক বরাদ্দ চাইতে গেলেও নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি হয়। সরকারের উপযুক্ত নীতি সহায়তা পেলে বেসরকারি খাতই বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন ফ্রেন্ডরিচ নিউম্যান ফাউন্ডেশন (এফএনএফ) এর কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. নাজমুল হোসাইন, ডিন্যাটের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ড. অনন্য রায়হান প্রমুখ।
সারাবাংলা/ইএইচটি/একে