২৬ বছরেও হয়নি শেখ রাসেল শিশু উদ্যানের উন্নয়ন
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৯:৪০
।। হৃদয় দেবনাথ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে শিশুদের বিনোদনের জন্য তৈরি করা শিশু উদ্যানটি বেহাল অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘ ২৬ বছরেও এতে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া।
উদ্যানটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। অযত্ন আর অবহেলায় উদ্যানটি এখন প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
শ্রীমঙ্গলে শিশু উদ্যানটি প্রথম নির্মাণের পর স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু উদ্যানটি নির্মাণের শুরু থেকেই পর্যাপ্ত বিনোদন ব্যবস্থার অভাব ছিল। তাছাড়া সরকারি সহযোগিতার অভাব, সংস্কার আর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শেখ রাসেল শিশু উদ্যানটি একেবারেই ধ্বংসের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ সংলগ্ন প্রায় আড়াই একর জায়গা জুড়ে এই শিশু উদ্যানের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৮৪ সালে শিশু উদ্যানের পাকা সীমানা প্রাচীর তৈরি করা হয়। এ সময় উদ্যানের ভেতরে শিশুদের বসার জন্য হাতেগোনা কয়েকটি পাকা বেঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল।
উদ্যানটির ভেতরেই ছিল একটি বড় পুকুর। ছিল বিশাল একটি মাঠ। সরেজমিন দেখা যায়, অতীতের অনেক কিছুই আর অবশিষ্ট নেই উদ্যানটিতে। বড় পুকুরটি ক্রমেই ছোট ডোবায় পরিণত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে এটির গেট। সীমানা প্রাচীর ও বসার বেঞ্চগুলো ক্রমশ ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে।
প্রতিনিয়তই গরু-ছাগল চষে বেড়াচ্ছে উদ্যানের সমস্ত মাঠ জুড়ে। ডেকোরেটরস মালিকরা তাদের ময়লা আবর্জনাযুক্ত বিভিন্ন মালামাল ধোঁয়ার কাজে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে যাচ্ছেন উদ্যানের পুকুরটি। যার ফলে পুকুরটির পানিও দূষিত হয়ে গেছে।
১৯৮৪ সালের পর থেকে এ উদ্যানটিতে আর কোনো উন্নয়নের ছোঁয়াই লাগেনি শিশুদের চিত্ত বিনোদনের জন্য উপজেলার একমাত্র শিশু উদ্যানটি। সম্প্রতি এ উদ্যানটির নামের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই শহীদ শেখ রাসেলের নামে নামকরণ করা হয়েছে। এখন এটি শেখ রাসেল শিশু উদ্যান নামে পরিচিত।
উপজেলার সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিদের উদ্যোগে স্থানীয় সমাজসেবকদের সহযোগিতায় এখানে তৈরি করা হয়েছে একটি মুক্তমঞ্চ। এ মুক্তমঞ্চেই প্রতিবছর বৈশাখী অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়ে আসছে। অথচ দীর্ঘ ২৬ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও শিশু উদ্যানটির যথাযথভাবে নির্মাণ ও চালু করার ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।
সম্প্রতি স্থানীয় এমপি মো. আব্দুস শহিদ এমপির উদ্যোগে শিশু উদ্যানের জন্য একটি আধুনিক গেইট নির্মাণের প্রস্তাব গৃহীত হলেও সেটিও এখন পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
এ বিষয়ে সংস্কৃতিকর্মী পঙ্কজ কুমার নাগ সারাবাংলাকে বলেন, ‘পর্যটকরা চিত্ত বিনোদনের জন্য বেড়াতে আসেন প্রকৃতির অভয়ারণ্য চায়ের দেশখ্যাত শ্রীমঙ্গলে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের সন্তানদের চিত্ত-বিনোদনের জন্য একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র শেখ রাসেল শিশু উদ্যান নামে যেটি নির্মাণ করা হয়েছিল সেটি এখন একেবারেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতিকর্মীদের প্রাণের দাবি অনতিবিলম্বে সরকারি সহায়তায় উদ্যানটি প্রাণ ফিরে পাবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) আশেকুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘শেখ রাসেল শিশু উদ্যানের জায়গাতে একটু সমস্যা রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরাও আন্তরিকভাবে চাই শ্রীমঙ্গলে একটি আধুনিক শিশু উদ্যান গড়ে উঠুক। আর শেখ রাসেল শিশু উদ্যানের জায়গার জটিলতা নিরসন করে যদি দেওয়া হয় তবে আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।’
স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুস শহীদ এমপিকে আধুনিক গেট নির্মাণ করে দেয়ার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি কবে আধুনিক গেট নির্মাণ করে দেওয়ার কথা বলেছি সেটা এখন কী করে বলব? এটি পৌরসভার জায়গা, বিষয়টি পৌরসভা ভালো বলতে পারবে।’
শ্রীমঙ্গলের পৌর মেয়র মহসিন মিয়া মধু সারাবাংলাকে বলেন, ‘এটা উপজেলা প্রশাসনের আওতায় পড়েছে কিন্তু আমরা অনেকবার প্রস্তাব দিয়েছি এই শিশু উদ্যানটা আমাদের নামে দিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা দেয়নি।’
‘যদি উদ্যানটি আমাদের দিয়ে দিত তাহলে এটিকে শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর উদ্যান হিসেবে গড়ে তুললাম’ বলেন পৌর মেয়র মহসিন মিয়া।
সারাবাংলা/একে