গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা রইসুল হক বাহারকে শেষ শ্রদ্ধা
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৭:০১
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: তারুণ্য থেকেই প্রগতিশীল রাজনীতির পথে যে যাত্রা শুরু করেছিলেন রইসুল হক বাহার, জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তা থেকে বিচ্যুত হননি। চট্টগ্রাম বন্দরের চাকরি থেকে সাংবাদিকতা, সবখানেই তারুণ্যে নেওয়া রাজনৈতিক আদর্শের পাঠ চর্চা করে গেছেন। সততার মূর্ত প্রতীক, গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা রইসুল হক বাহার বামপন্থা আর শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার লড়াইয়ের দীক্ষা দিয়ে গেছেন অসংখ্য তরুণ-যুবককে।
রাজনীতির শিক্ষক, সাংবাদিকতার শিক্ষক রইসুল হক বাহারের শেষযাত্রায় চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঢল নেমেছিল শিষ্য-অনুরাগীদের। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন, আবার নীরবে অশ্রুপাত করেছেন কেউ। বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় বিদায় দিয়েছেন একাত্তরের রণাঙ্গনের এই বীর সেনানীকে।
বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে রইসুল হক বাহারের মরদেহ নেওয়া হয় তার একসময়ের স্মৃতিবিজড়িত কর্মস্থল নগরীর নন্দনকাননে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফুলকির সামনে। সেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় সিক্ত হন তিনি। এরপর মরদেহ নেওয়া হয় চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। সেখানে আগে থেকেই রইসুল হক বাহারের আদর্শের অনুসারী, ভক্ত-অনুরাগীরা অপেক্ষায় ছিলেন। লাল-সবুজের পতাকায় মোড়ানো মরদেহে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তারা।
দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, একুশে পদকপ্রাপ্ত বুদ্ধিজীবী আবুল মোমেন, মুক্তিযোদ্ধা-সাংবাদিক নাসিরউদ্দিন চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধের গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, সিপিবি চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা, ফুলকির অধ্যক্ষ শীলা মোমেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার মজুমদার, ওয়ার্কার্স পার্টি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহান, গণসংহতি কেন্দ্রের হাসান মারুফ রুমি, কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার ও আবু তাহের মুহম্মদ, প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সহসভাপতি শহীদ উল আলম, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার, সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশ ও প্রচার সম্পাদক মিন্টু চৌধুরী, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সবুর শুভ ও প্রচার সম্পাদক আহমেদ কুতুব, কবি অভীক ওসমান ও কামরুল হাসান বাদল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান, যুব ইউনিয়নের চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক উজ্জল সিকদার, ডেইলি স্টারের ব্যুরো প্রধান তুষার হায়াতসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা সেখানে ছিলেন।
রইসুল হক বাহারের সর্বশেষ কর্মস্থল দৈনিক পূর্বকোণ, সাবেক কর্মস্থল সুপ্রভাত বাংলাদেশ, রাজনৈতিক সংগঠন জাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী), ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী, যুব মৈত্রী, ছাত্রফ্রন্ট, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, সমাজ সমীক্ষা সংঘ, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
রইসুল হক বাহারের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী নাসিরউদ্দিন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘একাত্তরে সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস প্রতিরোধের আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের সকল গণআন্দোলনে রইসুল হক বাহার সক্রিয় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ ছিল তার ধ্যানজ্ঞান। লেখনীর মধ্যেও তিনি সেটাই ধারণ করতেন। এই দেশ যতদিন থাকবে, রইসুল হক বাহার বীরের বেশে বাঙালির অন্তরে বেঁচে থাকবেন।’
দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ‘বাহার ভাই (রইসুল হক বাহার) একটি শোষণমুক্ত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমৃত্যু তিনি এই স্বপ্ন লালন করেছেন এবং সেটার জন্য কাজ করে গেছেন। অসাম্প্রদায়িক-শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে তিনি সবসময় আমাদের প্রেরণা হয়ে থাকবেন।’
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রইসুল হক বাহারের মরদেহ নেওয়া হয় চট্টগ্রাম বন্দরে, যেখানে তিনি দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। সেখানে দুপুর ২টায় গার্ড অব অনার দেওয়া হয় প্রয়াত এই মুক্তিযোদ্ধাকে। এরপর জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় চট্টগ্রাম বন্দরের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে জীবনাবসান হয় এই মুক্তিযোদ্ধার।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই