Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাণিজ্যযুদ্ধ: আমেরিকার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে চীন


১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২১:৩৪

।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। দেশদুটি, একত্রে বিশ্ব অর্থনীতির প্রায় ৪০ ভাগ (আমেরিকা ২৩ দশমিক ৩ ভাগ ও চীন ১৬ দশমিক ১ ভাগ) নিয়ন্ত্রণ করে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, গত ১৪০ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ হিসেবে নিজেদের আসন ধরে রেখেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দ্রুত বিকাশমান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে চীন, সেই সঙ্গে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে আমেরিকার ঘাড়ে।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ছে প্রতি বছর গড়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হারে অপরদিকে আমেরিকার বাড়ছে ৩ শতাংশর কমে। অর্থনীতির মানদণ্ড পারচেজিং পাওয়ার পেরেটি (পিপিপি) বা ক্রয় ক্ষমতা পার্থক্য হিসেবে ইতোমধ্যে চীন, যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৮ সাল নাগাদ বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষস্থান দখল করে নেবে চীন।

প্রতিপক্ষ চীনের এই অর্জন খুব সহজভাবে নিতে চাইবে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সেটাই স্বাভাবিক। তবে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর আরও স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিষয়টি। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষোভেরও বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেমন, চীনা উদ্যোক্তরা নির্লিপ্তভাবে মার্কিন প্রযুক্তি চুরি করছেন ও পণ্য উৎপাদন করছেন। এ বিষয়ে চীন সরকারের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই। আমেরিকার চাকরির বাজারে হানা দিচ্ছে চাইনিজরা। বিশ্বব্যাপী বাড়ছে চীনের সামরিক প্রভাব। সেই সঙ্গে বাড়ছে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি। গত বছরই তা ছাড়িয়ে গেছে সাড়ে তিনশ বিলিয়ন ডলার।

তাই চীনের ওপর চাপ বাড়াতে ট্রাম্প প্রশাসন বেছে নিয়েছেন চীনা পণ্যে অধিক শুল্কে আরোপের পথ। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা চীনা পণ্য থেকে চলতি বছরের জুলাই মাসে ৩৪ বিলিয়ন ডলার, আগস্ট মাসে ১৬ বিলিয়ন ডলার ও সেপ্টেম্বরে ২০০ বিলিয়ন ডলার শুল্ক আরোপের ধারাবাহিক ঘোষণা দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে চীন কোনো পাল্টা পদক্ষেপ নিলে নতুন করে আবারও ২৬৭ বিলিয়ন ডলার শুল্ক বসানোর আগাম হুমকি দিয়ে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীনও আমেরিকান পণ্য থেকে অগাস্টে এক ঘোষণায় ১৬ বিলিয়ন ও সেপ্টেম্বরে আরেক ঘোষণায় ৬০ বিলিয়ন ডলার শুল্ক আদায় করে নেবে বলে জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

চীনের ওপর ট্রাম্পের অযাচিত রাগের আরও একটি কারণ হতে পারে নির্বাচনী প্রচারণা। ২০১৬ সালে নির্বাচনী প্রচরণায় ট্রাম্প, চীন বিরোধিতা পুঁজি করেছিলেন। ইন্ডিয়ানার এক প্রচারণায় তিনি বলেছিলেন, ‘চীন আমাদের ধর্ষণ করে যাচ্ছে। আমরা তা মেনে নিতে পারি না।’ তবে ভাবছেন না, অধিক শুল্ক আরোপের ফলে আমেরিকানদের যে পণ্য কিনতে বাড়তি অর্থ গুণতে হবে সে সম্পর্কে।

হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তার বরাতে ভক্স নিউজ জানায়, ট্রাম্পকে বলতে শোনা গেছে—আমি চীনকে চাপে রাখতে বলেছি। বিশেষ করে চীনের অর্থনীতি। যাতে তারা নিয়ম মানতে বাধ্য হয়। চাইনিজরা অনেকদিন ধরে আমাদের শুষে যাচ্ছে। তারা এখন অসুখী হলে কার কি আসে যায়?

অর্থাৎ ট্রাম্পের এই বাণিজ্যযুদ্ধের অর্থ চীনকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়া। কিন্তু সেটা কতটা বাস্তবিক? পাল্টা কৌশল হিসেবে চীন কি ভাবছে?

দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আপাতদৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান এই বছরের বাণিজ্যিক টানাপোড়নে চীনের রপ্তানি ধীর গতির হয়েছে, মুদ্রা অস্থিতীশীল হয়েছে, চীন কিছুটা বাজারও হারিয়েছে। কিন্তু সেই সঙ্গে দেশটি আরও বেশ কিছু বিষয় অর্জনও করছে। সেটি হচ্ছে কূটনৈতিক প্রেক্ষাপেট।

যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বাণিজ্যিক বাধার সম্মুখীন হয়ে চীন তার কূটনীতিতে পরিবর্তন এনেছে। ওয়াশিংটন ঝড় থেকে বাঁচতে চীন ও চীনের ব্যবসায়ীরা জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্কের চেষ্টা করছেন। চলতি বছর জাপানের সঙ্গে চীনের সুসম্পর্ক বিগত যেকোন সময়ের চেয়ে ভালো। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে কিছুদিন পরেই চীন সফর করবেন। এদিকে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে সুযোগ নিতে অথবা চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে অপেক্ষা করছে রাশিয়া। মস্কো ও বেইজিং কতটা ভালো বন্ধু হতে পারে তা দেখতেই অপেক্ষা করছে পুরো বিশ্ব।

আরও মজার ব্যাপার হলো উত্তর কোরিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপে চীনের ওপর এক ধরনের মার্কিন চাপ ছিলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এহেন আচরণের ফলে চীন এখন অনকটা স্বাধীনভাবেই তার কূটনৈতিক চাল চালতে পারবে। রাশিয়া ও তেহরানের সঙ্গে ঘনিষ্ট হতে চীনের আর বাধা থাকছে না।

অর্থাৎ, পুরো বিশ্ব যখন মিত্রতা পাশে রেখে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে সেখানে ট্রাম্প যেন বেছে নিচ্ছেন স্ব-নির্বাসন। প্রতিবেশী মেক্সিকো কানাডা অথবা ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তিনি যেন কোথাও তার মিত্র খুঁজে পাচ্ছেন না!

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, চীনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রকে বেপরোয়াভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেটা খুব স্পষ্ট। তার পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যেখানে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নোয়নের চেষ্টা করেছেন, মানবাধিকার ও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেছেন ট্রাম্প সেখানে চীনকে দেখছেন শত্রু হিসেবে। এ ব্যাপারে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জিং সুয়াং বলেন, আমাদের ১০০০ সৈন্য মারতে হলে আপনাকেও ৮০০ সৈন্য হারাতে হবে।

জিং সুয়াং কি বুঝাতে চেয়েছেন তার আর স্পষ্ট করে বলার প্রয়োজন নেই।

তবে এখানে খুব স্পষ্ট, বিশ্ব বাণিজ্যে চীন ইতোমধ্যে আমেরিকাকে ছাড়িয়ে গেছে। যদিও চীনের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাথাপিছু আয় এখনো বেশি। ২০১৭ সালের এক পরিসংখ্যানে, চীন আমেরিকার চেয়ে বিশ্বব্যাপী ৭১৬ বিলিয়ন ডলার বেশি রপ্তানি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রকে আমদানি করতে হয়েছে চীনের চেয়ে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বেশি। চীনের সাধারণ মানুষের জীবনমান, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবেশ ঝুঁকি এড়াতে পারলে চীন এ শতাব্দীর সেরা অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে তা ধারণা করা যায়। তবে বিশ্ব মোড়ল হতে চাইলে হতে চাইলে সেই সঙ্গে  চীনের বাড়াতে হবে সামরিক শক্তি।

সারাবাংলা/এনএইচ/এমআই

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর