১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৪টিই বর্জন করেছে বিরোধী দল
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৮:৩৩
।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: আসছে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে সবগুলো রাজনৈতিক দল অংশ নেবে কি-না তা নিশ্চিত নয় এখনো। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও চারটি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন সে সময়কার বিরোধী দল।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি এ তিন সরকারের আমলেই ঘটেছে বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জনের ঘটনা। আবার বিভিন্ন নির্বাচনে তিন দলই বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন বর্জন করেছে এবং তাদের নির্বাচন বর্জনের কারণও প্রায় অভিন্ন ছিল। দলীয় সরকারের অধিনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়, এই কারণ দেখিয়েই তারা নির্বাচন বর্জন করে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার দুই মাস ২১ দিন পর ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সবশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় পার্টির এরশাদ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নির্বাচন বর্জনের যাত্রা শুরু হয়। তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই তা বর্জন করে।
একই সরকারের আমলে ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও সিপিবিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে।
এ ছাড়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার অধিনে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ প্রায় সব বিরোধী দল।
সবশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি, জামায়াত, সিপিবি ও বাসদসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করে।
মূলত ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পাটির আমলে, ১৯৯৬ সালে বিএনপির আমলে এবং ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব নয়, এই কারণ দেখিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিরোধী দলগুলো।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে ৪ নির্বাচন: ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে চারটি নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে সবগুলো রাজনৈতিক দলই অংশগ্রহণ করে। বাকি ছয়টি সংসদ নির্বাচন তিনটি দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়। এই ছয়টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে চারটি সংসদ নির্বাচন অধিকাংশ বিরোধী দল বর্জন করে।
পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই চারটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্ববধায়ক সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই চারটি নির্বাচনে দুই বার করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচিত হয়েছে। তবে এই চারটি নির্বাচন নিয়েও পরাজিত দল অভিযোগ করেছে কারচুপির।
চারবার করে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি: বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত দশটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঘুরেফিরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বা জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় এসেছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি চারবার করে এবং জাতীয় পার্টি দুবার সরকার গঠন করেছে। আওয়ামী লীগ প্রথম, সপ্তম, নবম ও দশম সংসদে এই চারটি সংসদে এবং বিএনপি দ্বিতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম এই চারটি সংসদে সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করে সরকার গঠন করেছে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি তৃতীয় ও চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়।
মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি পাঁচটি সংসদ: বাংলাদেশের ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে ৫টি সংসদ তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপসহ বিভিন্ন কারণে ৫টি সংসদ মেয়াদ শেষের আগেই ভেঙে গেছে। এই ৫টি সংসদের মধ্যে রয়েছে, প্রথম জাতীয় সংসদ, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ এবং ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ। তবে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম সংসদ তার মেয়াদকাল পূরণ করছে।
কোন নির্বাচনে কত ভোট পড়েছে: বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম সংসদ নির্বাচনে। এই নির্বাচনে ৮৭ শতাংশ ভোট পড়ে। অন্যদিকে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে। এতে ভোট পড়ে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
এ ছাড়াও প্রথম সংসদ ৫৪ দশমিক ৯ শতাংশ, দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ, তৃতীয় সংসদ ৬১ দশমিক ৩ শতাংশ, চতুর্থ সংসদ ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ, পঞ্চম সংসদ ৫৫ দশমিক ৪ শতাংশ। অন্যদিকে সপ্তম সংসদে ৭৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, অষ্টম সংসদে ৭৫ শতাংশ এবং দশম সংসদে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়ে।
বিভিন্ন সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত সদস্য সংখ্যা: বাংলাদেশে ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে প্রথম সংসদে ১১ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়াও ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৯ জন সংসদ সদস্য এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রেকর্ড পরিমাণ ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১২৮ জন, জাতীয় পার্টির ১৯ জন জাসদ ৩ জন, ওয়াকার্স পার্টির ২ জন এবং জাতীয় পার্টি জেপির এক জন।
সারাবাংলা/জিএস/এমআই