Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সুপ্রিমকোর্ট দিবস সামনে রেখে জ্যেষ্ঠ ছয় আইনজীবীর বিবৃতি


১ জানুয়ারি ২০১৮ ২১:১১

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: বিচার বিভাগের ইতিহাসে এই প্রথমবার সুপ্রিমকোর্ট দিবস পালন করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে বিচার বিভাগের উপরে নির্বাহী বিভাগের আধিপত্য ও হস্তক্ষেপমুক্ত একটি পরিবেশ তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছে দেশের সিনিয়র আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা।

একই সঙ্গে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথকীকরণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালতের দিক নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগ সংবিধান ও সর্বোচ্চ আদালতে রায়ের প্রতি সম্মান দেখাবেন বলে আশা  প্রকাশ করেন তারা।

সোমবার (১ জানুয়ারি) দিবসটি উপলক্ষে সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র ছয় আইনজীবী এ বিবৃতি দিয়েছেন।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ. এফ. হাসান আরিফ ও ফিদা এম. কামাল।

বিবৃতিতে তারা বলেছেন, ১৯৭২ সালে ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট উদ্বোধন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এবার প্রথম সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালিত হতে যাচ্ছে আগামী ২ জানুয়ারিতে।

এমন একটা সময়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে যখন এদেশের বিচার বিভাগের সর্বোচ্চ অভিভাবক প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য।

এই উপলক্ষে,বাংলাদেশের সংবিধান এর অখণ্ডতা রক্ষা, সমর্থন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এদেশের নাগরিকদের সকল মৌলিক অধিকার বলবৎ করার আদেশ বা নির্দেশ, সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের পাশাপাশি সংবিধানের যে কোন অংশের সঙ্গে সঙ্গতিহীন কোন আইন বা সরকারী বিধি বা আদেশ যা সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক এমন কোনো প্রশ্ন কিংবা জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এর গুরুত্বপূর্ণ রায় ও ঐতিহ্য গর্বের সাথে স্মরণ করছি।

বিজ্ঞাপন

এক্ষেত্রে ৭টি বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ গঠনের বিষয়ে প্রণীত সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী বাতিল, সামরিক ফরমান জারি সংক্রান্তে আনা সংবিধানের ৫ম সংশোধনী বাতিল, চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে ১০০ বছরের জন্য লীজ প্রদান বাতিল,  ২০০৭ সালের ১ কোটি ৪০ লাখ ভুয়া ভোটার বাতিল সংক্রান্ত রায় উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সংসদ কর্তৃক মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্তে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা ও বাতিলের রায়সহ জনস্বার্থে দেওয়া অসংখ্য রায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

উপরোল্লিখিত রায় সমূহের মাধ্যমে এটাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে জনগণের অধিকার রক্ষার্থে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ও ভারসাম্য কোনো অবস্থাতেই পরিবর্তন ও ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না।’

বিবৃতি তারা আরও উল্লেখ করেছেন,‘ সম্প্রতি মাসদার হোসেন মামলার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি পুনঃস্মরণ করতে গিয়ে দেখা যায় যে অধঃস্তন আদালতের ক্ষেত্রে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিধি প্রণয়নে সংবিধানের মূলধারার বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়। এটা গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। কারণ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্বকীয় অবস্থানের জন্য সংবিধান যে সুরক্ষা দিয়েছে তা সংরক্ষণ/বাস্তবায়ন করা সর্বোচ্চ আদালতের দায়িত্ব।

দীর্ঘ ৪৬ বছর কালক্ষেপণের পর এই বিধিগুলো বর্তমানে অধঃস্তন বিচার বিভাগের জন্য সরকার সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৩৩ অনুযায়ী করেছে, অথচ উক্ত ১৩৩ অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের জন্য প্রণীত হওয়ার বিষয়টি সংবিধানের কর্ম বিভাগের জন্য প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, অধঃস্তন আদালতে বিচার বিভাগীয় পদে নিয়োগ, নিয়ন্ত্রণ, পদোন্নতি প্রদান ও ছুটি মঞ্জুরীসহ শৃঙ্খলা বিধান সংক্রান্ত বিষয় সংবিধানে দুটি অনুচ্ছেদ ১১৫ ও ১১৬ তে পৃথকভাগে বিচার বিভাগের অংশে প্রণীত আছে।

বিজ্ঞাপন

তথাপিও উক্ত আইন প্রনয়নের মাধ্যমে অধঃস্তন বিচার বিভাগের বিচারকদের নির্বাহী বিভাগের অধঃস্তন হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, যা ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির লঙ্ঘনসহ মাসদার হোসেন মামলার রায়ের সাথেও সাংঘর্ষিক। উক্ত আইন সমূহ সংবিধানের অধীনে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের দুটি বিভাগ (আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ) এর সাথে যথাযথ পরামর্শ ব্যতীত প্রণয়ন করা হয়েছে।

অধঃস্তন আদালতে বিচারক নিয়োগ ও বদলি বিষয়ের বিধিমালা দীর্ঘ কালক্ষেপণের পর নির্বাহী বিভাগ ও মন্ত্রণালয় এমন একটি সময়ে স্থানান্তরিত হয়েছে যখন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য এবং যা সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের সাথে প্রয়োজনীয় অর্থবহ পরামর্শ ব্যতীত প্রণয়ন করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অধঃস্তন আদালতকে ১৯৯৯ সালের পূর্বের যুগে নির্ধারিত করার শামিল।

তাহলে সর্বোচ্চ আদালত দিবসে আমরা কি বার্তা প্রেরণ করব? এ বিষয়ে জনগণ ও সুশীল সমাজকে সচেতন করার কোনো বিকল্প নেই। আমাদের ঐক্য মতের মাধ্যমে একত্রিত হয়ে দেশের সাংবিধানিক ভারসাম্য রক্ষা করার প্রচেষ্টাকে একত্রিত করে দৃঢ় ও সংকল্পিতভাবে জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধার করা এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর ভিত্তিতে একটি উপযুক্ত স্বাধীন ও পৃথক বিচার বিভাগের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা ব্যতীত অন্য কোন বিকল্প নেই।

সারাবাংলা/এজেডকে/জেডএফ

 

সুপ্রিম কোর্ট সুপ্রিম কোর্ট দিবস

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর