কণ্ঠ রোধ করলে মতামত দেওয়ার ক্ষমতা থাকত না: প্রধানমন্ত্রী
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২১:৫৭
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: কণ্ঠ রোধ করলে কারও মতামত দেওয়ার ক্ষমতা থাকত না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাসের গুরুত্ব তুলে ধরার সময় তিনি বলেন, ‘কণ্ঠ রোধ হয়নি, কণ্ঠ আছে বলেই তো মতামত দিতে পারছেন। কণ্ঠ রোধ করলে মতামত দেওয়ার মতো ক্ষমতা থাকত না।’
বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দশম জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় সংসদের ২২তম অধিবেশনে ১৮টি বিল পাস করার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি জানি, এই বিলটি পাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই মতামত দিয়েছেন। সবচেয়ে দুঃখ লাগে যে কেউ কেউ শুধু ব্যক্তিস্বার্থ বা তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ বিবেচনায় কেবল ওই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তার মতামত দিয়েছেন। তারা একবারও চিন্তা করেননি, এটা গোটা সমাজ, গোটা দেশের স্বার্থে এই বিলটি গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টা তাদের মাথায় আসেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেখলাম, আমাদের দেশের বেশ কয়েকজন স্বনামধন্য এডিটর বা সাংবাদিক বা সমাজের বিজ্ঞজন, তারা এটার বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছে। তারা শুধু তাদের কণ্ঠ রোধ হলো কি না, সেটাই দেখলেন। তাদের কণ্ঠ তো রোধ হয়নি। কণ্ঠ আছে বলেই তো তারা মতামত দিতে পারছেন। কণ্ঠ রোধ করলে মতামত দেওয়ার মতো ক্ষমতা তাদের থাকত না।
আরও পড়ুন- সংসদের প্রতি আস্থা ফিরেছে মানুষের: প্রধানমন্ত্রী
এ প্রসঙ্গে সংসদ নেতা আরও বলেন, ‘এ দেশে মার্শাল ল ছিল। অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী ছিল। যারা তাদের পদলেহন করেছে, তোষামোদি করেছে, তাদের অসুবিধা হয়নি। কিন্তু তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে যারা কথা বলতে গেছেন, তাদের অসুবিধা হয়েছে। বেশি দূর যেতে হবে না। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা কিভাবে সাংবাদিকদের নির্যাতন করেছে, সেটাও তারা ভুলে গেছেন। এখন তারা ডিজিটাল আইন করার পরই তারা তাদের কণ্ঠরোধের কথা বললেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘কণ্ঠটা রোধ কোথায়? এই বাংলাদেশে এত টেলিভিশন, একটা টেলিভিশন ছিল। কোনো সরকার সাহস পেয়েছে এত টেলিভিশন বেসরকারি খাতে তুলে দিতে? কোন সরকার সাহস পেয়েছে রেডিও বেসরকারি খাতে তুলে দিতে? কেউ তো দেয়নি, দিয়েছি আমরা।’
ডিজিটাল প্রযুক্তির নেতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এগুলোও তো আমাদের দেখতে হবে। কাজ করতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য ডিজিটাল ডিভাইস ব্যাবহারের নিরাপত্তাটা অত্যন্ত দরকার। বিশেষ করে কুরুচিপূর্ণ অশ্লীল বা পর্ন জিনিস যেন তারা না দেখে। তারা এত বেশি এর মধ্যে ডুবে যায় যে অনেক সময় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে বিপথে চলে যায়।
এছাড়াও অপপ্রচারের নেতিবাচক দিক তুলে তিনি আরও বলেন, এটা তো আমাদের সমাজকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দেয়। সেইসঙ্গে রাজনীতির দিকটাও আছে। রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতি— সব ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার হলে সেটা সবার জন্য মঙ্গলজনক। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। সেটাই আমরা চাচ্ছি। সেই লক্ষ্য নিয়েই কিন্তু আইন পাস হয়েছে। এখানে শুধু গোষ্ঠীস্বার্থ দেখলে হবে না। আমাদের সাংবাদিকরা এত বেশি সংবেদনশীল হয়ে উঠছেন, এত বেশি তারা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছেন কেন? কী কারণে? এর কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না। আমি মনে করি, এটা আমরা করেছি দেশের কল্যাণে, জাতির কল্যাণে, শিশুদের কল্যাণে।
এসময় নিজের ছোট নাতির ডিজিটাল আসক্তির উদাহরণ তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই জায়গা থেকে মানুষকে আমার অবশ্যই নিরাপত্তা দিতে হবে। সমাজকে রক্ষা করতে হবে। সংসারকে বাঁচাতে হবে। প্রত্যেকটা মানুষের চরিত্র রক্ষা করতে হবে। আমাদের ছোট শিশু ও তরুণরা যেন বিপথে না যায়, তার ব্যবস্থা নিশ্চয় করতে হবে। কাজেই এখানে দুঃশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। যারা এগুলো বলছে, তাদের আমি বলব— এই দেশে তো বহু ঘটনা ঘটে গেছে। অতীতের ঘটনাগুলো একটু চিন্তা করুক। এখন তো সবই উন্মুক্ত। যে যার মতো লিখে যাচ্ছে। এত উন্নয়ন দেশে, সারাবিশ্ব দেখে বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়েছে। তারা বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল বলে। কিন্তু আমাদের দেশে তো এমনও পত্রিকা আছে, খুললেই মনে হবে বাংলাদেশে কিছুই হয়নি, বাংলাদেশ যেন একেবারে শেষই হয়ে গেছে।
‘গঠনমূলক সমালোচনা করুক, তাতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু এমনভাবে বিভ্রান্তি করার চেষ্টা করে, এই সরকার খুবই খারাপ কাজ করছে। কী খারাপ কাজটা করলাম, সেটাই আমার প্রশ্ন। হ্যাঁ, কিছু কিছু মানুষের চরিত্রই আছে কিছুই ভালো লাগে না। এটা এক ধরনের মানসিক অসুস্থতা। আর এই অসুস্থতায় যারা ভোগে, তাদের ব্যাপারে আমার বলার কিছু নেই,’— বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেশকে ভালোবাসি। দেশকে জানি, দেশকে চিনি। এই দেশ আমার। এই দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যেই তিনি জেল খেটেছেন। সারাজীবন কষ্ট স্বীকার করেছেন। তিনি দেশের উন্নয়ন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারেননি। তাকে হত্যা করা হয়েছে। সেই শোক, সেই ব্যাথা নিয়েই আমি কাজ করি কেন? আমার কোনো ব্যক্তিস্বার্থ নেই। মানুষের স্বার্থ রক্ষার জন্য, মানুষের উন্নতির জন্য আমার কাজ। আমি সঠিক কাজ করি কি করি না, সঠিক পথে আছি কি নেই— তা নিয়ে আমার আত্মবিশ্বাস আছে। কারও লেখা বা পত্রিকা পড়ে আমাকে শিখতে হবে না। আমি নিজেই জানি কোথায় কী। আমি সেভাবেই কাজ করি। হ্যাঁ, পত্রিকা থেকে আমি তথ্য নেই। সংবাদ নেই। কোথাও যদি একটা মানুষ কষ্ট পায়, সেই তথ্য নিয়ে আমি তাকে সাহায্য করি।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা