Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষার আলো এখনও টিমটিমে


২ জানুয়ারি ২০১৮ ০৯:০৪

মেসবাহ শিমুল, চরকুকরী মুকরী থেকে ফিরে

ছোটো খালের পাড়ে চরের প্রধান বাজারটিকে এক করেছে একটি কালভার্ট। সেটি পেরিয়ে পশ্চিম-দক্ষিণ দিকে বেশকিছু দূর গেলে কাঁচা মাটির সড়কের দু’পাশে বেশ কয়েকটি পুরণো আধাপুরণো লম্বা টিনের ঘর দেখা গেলো। যার একটি থেকে এই শেষ বিকেলেও ছোটো ছোটো শিশুদের কণ্ঠে কোরাআন পড়ার শব্দ কানে আসছে। এটির নাম আশরাফুল উলুম আফাজউদ্দিন আমিনপুর কওমী মাদরাসা।

কথা হয় মাদরাসাটির শিক্ষক হাফেজ মো.মহিবুল্লাহর সঙ্গে। তিনি জানালেন, এই দ্বীপে আরো একটি কওমী মাদরাসা আছে, তবে এটিই বড়। এখানে নূরানী, হিফজ ও জামাত এই তিন বিভাগে প্রায় ৪’ শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছে। বাজারের ভেতর যে মাদরাসাটি রয়েছে সেখানেও শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় শ’খানেক।

স্থানীয় হিসেব অনুযায়ি,চরকুকরী মুকরীর মোট জনসংখ্যা ১১ হাজার ২১৪ জন। শিক্ষার হার মাত্র ২৭ ভাগ। মোট জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ শিশু-কিশোরের মধ্যে একটি বিশাল অংশই পড়ছে কওমী মাদরাসায়। যাদের প্রায় শতভাগই স্থানীয়।

এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, কৃষি আর মৎসপ্রধান এ চরে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ যেমন জন্মেনি সেইসঙ্গে নেই ভাল মানের কোনো স্কুল। ফলে সামগ্রিকভাবে শিক্ষার আলো ছড়ায়নি কাঙ্খিত মাত্রায়। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয়দের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আগ্রহ বাড়ছে।

পরিষদের দেয়া তথ্য মতে, চরকুকরী মুকরীতে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থাকলেও কোনো কলেজ নেই। ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি এবতেদায়ি মাদরাসা এবং একটি দাখিল মাদরাসা প্রস্তাবিত রয়েছে। চরকুকরী মুকরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ই তাই এই দ্বীপের সবচেয়ে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে বিদ্যালয়ের মাঠে কথা হয় শফিকুল ইসলাম নামের এ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রের সঙ্গে। তার বক্তব্য অনুযায়ি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৩’শ। তবে মেয়েদের তুলনায় ছেলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম।

সন্ধ্যায় বাজারের চায়ের দোকানে গল্পে গল্পে জানা গেলো, ১৯৯০ সালে মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে এই চরে কয়েকটি প্রাইমারী স্কুল ছিল। তখন প্রাইমারী পাশ করার পর খুব কম লোকই লঞ্চে করে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে মূল ভূখন্ডের দক্ষিণ আইচা গিয়ে মাধ্যমিকে পড়ার সুযোগ পেতো। হাইস্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এখানে শিক্ষার হার বাড়ছে।

কামাল হোসেন নামের একজন অভিভাবক জানালেন, তার ছেলে এবার এখান থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিবে। কিন্তু পাশ করার পর কলেজে ভর্তি নিয়ে তিনি এখনই দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। তিনি বলেন, একটি কলেজ এই চরে এখন খুবই জরুরি।

চরকুকরী মুকরীর শিক্ষার বর্তমান হাল নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাশেম মহাজনের মধেও। তিনি জানান, চরের একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এমপিও ভুক্ত। এসএসসি পর্যন্ত এমপিও না হওয়ায় শিক্ষকরা অনেক কষ্টে আছেন। এছাড়া উচ্চ শিক্ষার জন্য চরে একটি কলেজের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, প্রশাসনিকভাবে আমরা চরকুকরীর শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করছি। আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টার কোনো কমতি নেই। আপাতত মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিকে সম্পূর্ণ এমপিওর আওতায় আনার কথাও জানালেন তিনি।

সারাবাংলা/এমইউএস/জেডএফ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর