পদ্মাসেতুর অগ্রগতি সাড়ে ৫৭ শতাংশ
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৯:৪৬
।। জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: স্বপ্নময় পদ্মাসেতুর সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। এছাড়া মূল সেতুর বাস্তবায়ন হয়েছে ৬৬ শতাংশ। গত আগস্ট পর্যন্ত অগ্রগতির এ চিত্র উঠে এসেছে ফাস্ট ট্রাক প্রকল্পগুলোর প্রতিবেদনে। অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, পদ্মাসেতুতে রেল সংযোগ, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, এলএনজি টার্মিনাল এবং দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়ায়লগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পগুলো এগিয়ে চলছে বাস্তবায়নের পথে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদনটি পাঠিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
এ বিষয়ে ইআরডির সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুর আযম সারাবাংলাকে বলেন, ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলো সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রগাধিকারপ্রাপ্ত। তাই এগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সব পক্ষই সজাগ রয়েছে। প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন সঠিক পথেই রয়েছে। বেশিরভাগ প্রকল্পেরই অগ্রগতি ভাল। বেশিরভাগেরই অগ্রগতি দৃশ্যমান। প্রতিবেদনে অন্যান্য প্রকল্পগুলোর অগ্রগতির চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র : দ্বিতীয় পর্যায়ে মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। শুরু থেকে আগস্ট পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ২ শ ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে স্বাক্ষরিত দুটি চুক্তির আওতায় এ প্রকল্পের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। প্রকল্পের আওতায় ১২ শ মেগাওয়াটের ২টি ইউনিটের মাধ্যমে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। প্রকল্পের মূল কাজ প্রথম রিয়্যাক্টর স্থাপন শুরু হয়েছে অনেক আগেই। দ্বিতীয় রিয়্যাক্টর স্থাপনের কাজও চলছে।
মেট্রোরেল: এ প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ২৩ দশমিক ২২ শতাংশ। মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের শুরু থেকে আগস্ট পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ১০৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত লাইন স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। কন্ট্রাক্ট প্যাকেজ-১ এর অগ্রগতি ১০০ শতাংশ। প্রকল্পের আওতায় পরবর্তী পর্যায়ে আগারগাঁও থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক, মতিঝিল পর্যন্ত লাইন স্থাপন কাজ শুরু হয়েছে।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র: আগস্ট পর্যন্ত এ প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশ আর আর্থিক অগ্রগতি ১৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ইপিসি ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পরামর্শকরা কাজ শুরু করেছেন। মাটি ভরাটের কাজ ১০০ শতাংশ, সীমানা প্রাচীর শতভাগ,অফিস কাম আবাসিক ভবনের কাজ শতভাগ, সংযোগ সড়ক ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের কাজ চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ২ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা।
মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র : প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ১৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ। প্রকল্পের জন্য দেড় হাজার একর জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষ। এছাড়া ওনারস ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ এবং জমি সংক্রান্ত দায়িত্ব,বাউন্ডারি ফেন্সিং কাজ এবং পরিবেশ সংক্রান্ত ক্লিয়ারেন্স এর কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। শুরু থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৬ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা।
পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর: এ বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১ হাজার ১২৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণ, ওয়্যার হাউজ নির্মাণ, সার্ভে বোর্ট,পাইট ভেসেল ইত্যাদি ক্রয় করা হচ্ছে। আগস্ট পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ১৩২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
পদ্মাসেতুতে রেলসংযোগ: এ প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া আর্থিক অগ্রগতি ২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের শুরু থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৯ হাজার ৮৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ: এ প্রকল্পটি বিল্ড ওন অপারেট এন্ড ট্রান্সফার (বিওওটি) পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গত বছরের ১৮ জুলাই টার্মিনাল ব্যবহার সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে। জিও টেকনিক্যাল সার্ভের কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে ডিজাইনের কাজ চলছে। সেই সঙ্গে জমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এর আগে মহেশখালী-আনোয়ারা, আনোয়ারা- ফৌজদারহাট এবং চট্টগ্রাম- ফেনী-বাখরাবাদ গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্প দুটিও এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করে নাম দেওয়া হয়েছে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ ও গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প নাম কারণের সিদ্ধান্ত নেয় ফাসট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটি।
রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়াল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ: এ প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ১১ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। রিসেটেলমেন্টের জন্য এনজিও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আগস্ট পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ২০৫ কোটি টাকা।
সারাবাংলা/জেজে/এসআই