Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাড়ছে ‘অপরিকল্পিত’ অবকাঠামো, জাবিতে ক্ষতিগ্রস্ত জীববৈচিত্র্য


২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৮:৫৪

।। তহিদুল ইসলাম, জাবি করেসপন্ডেন্ট ।।

জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি সবুজ-শ্যামল প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টি সবার পছন্দের। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপিপাসুদের ভিড় জমে। তবে আশঙ্কার বিষয় প্রয়োজনীয় কিন্তু ‘অপরিকল্পিত’ অবকাঠামো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পাসে কমছে গাছপালা।

বিজ্ঞাপন

এক যুগ আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন ছিল এখন আর তেমন নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অংশে গাছপালা, লতা-গুল্ম বিলীন হয়ে গেছে। যার প্রভাব পড়ছে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীববৈচিত্র্য। ক্যাম্পাস বর্তমানে যে অবস্থায় আছে কয়েক বছর পরে তেমন থাকবে কিনা সে আশঙ্কাও রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সূত্রে জানা যায়, বিগত একযুগে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি প্রকল্প ও কয়েকটি কর্মসূচির অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হয়েছে। ২০০৬ সালে ‘বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষার গুণগত মান ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ নামে একটি ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্প শুরু হয়। এই প্রকল্পের অধীনে শহীদ রফিক জব্বার হল ও নতুন প্রশাসনিক ভবনের নিচতলা নির্মিত হয়।

এছাড়া কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান ভবন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, কলা ও মানবিকী অনুষদ ও জীববিজ্ঞান অনুষদ সম্প্রসারণ করা হয়। ২০১০ সালে শুরু হওয়া ‘অধিকতর উন্নয়ন’ প্রকল্পের অধীনে শেখ হাসিনা হল ও ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের ৪ তলা পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়। তিন বছর মেয়াদি এই প্রকল্প শেষ হয় ২০১৩ সালে।

বিজ্ঞাপন

‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ভৌত অবকাঠামো সুবিধাদি বৃদ্ধির প্রকল্প’ (২০১২-১৬) নামে একটি প্রকল্পের অধীনে নতুন প্রশাসনিক ভবন পূর্ণাঙ্গ করা, সুফিয়া কামাল হল, ওই হলের প্রভোস্ট বাংলো, আবাসিক শিক্ষকদের বাসভবন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল, শিক্ষক ও কর্মচারীদের বাসভবন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের পৃথক বাসভবন, ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র পূর্ণাঙ্গ করা, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান ভবন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, কলা ও মানবিকী অনুষদ ও জীববিজ্ঞান অনুষদ সম্প্রসারণ এবং চিকিৎসা কেন্দ্রের নিচতলা নির্মিত হয়।

পাশাপাশি কয়েকটি কর্মসূচির অধীনে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মিত হয়। এসব অবকাঠামো নির্মাণের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু গাছপালা কাটা পড়েছে, উজাড় হয়েছে বন-জঙ্গল।

সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প আসছে। এই প্রকল্পের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬টি আবাসিক হল, একটি লাইব্রেরি, স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণসহ ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হবে। এতেও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছে সচেতন মহল। এই প্রকল্পের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য যে তিনটি আবাসিক হল নির্মিত হবে সেখানটা বর্তমানে বন-জঙ্গল ও গাছপালায় ভরা। স্থানটিতে বিভিন্ন নিশাচর প্রাণী, পাখি, কীটপতঙ্গ বাস করে। নতুন ভবন নির্মাণের ফলে এখানকার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।

শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন ভবনের পেছনের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ-জেইউ) নিজস্ব ভবন নির্মাণ করবে। এখানেও অসংখ্য গাছ কাটা পড়বে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্যউদ্যান তত্ত্ববিদ ও এস্টেটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘বিগত দিনে যেসব অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে তার অনেকগুলোই পরিকল্পিতভাবে নির্মিত হয়নি। যে কারণে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আশা করি সামনে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার যে প্রকল্প আসছে সে প্রকল্পটি পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়িত হবে।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আইবিএ ইনস্টিটিউট ভবন করার জন্য অনুমতি না নিয়েই বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশে বহু গাছ কেটে ফেলেছে। এখন তাদের রসায়ন বিভাগের পেছনে ভবন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এখানে ভবন হলে অসংখ্য গাছ কাটা পড়বে।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি নানানভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন করা হচ্ছে। প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে ফেলা হচ্ছে। কখনো কখনো পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে গাছপালা আচ্ছাদিত বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এতে হুমকির মুখে পড়ছে সেখানে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও কীটপতঙ্গের জীবন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্নস্থানে পূর্বে ঝোঁপঝাড়ে পূর্ণ থাকলেও এখন তা পরিষ্কার করে ফেলা হয়েছে। এর কোথাও কোথাও কেটে ফেলা হয়েছে, আবার কোথাও বিস্তীর্ণ অঞ্চল আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা সহজে পরিষ্কারের জন্য আগাছা, ময়লা-আবর্জনা একত্রিত করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন। এসব আগুনে পার্শ্ববর্তী গাছপালাও পুড়ে যায়। এছাড়া ‘সৌন্দর্য্য বর্ধন’ এর নামেও কেটে ফেলা হচ্ছে গাছপালা ও জঙ্গল।

একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ে সচরাচর শিয়াল, গুঁইসাপ, বেজি, বনবিড়ালের দেখা মিলত। কিন্তু এখন এসব প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামো বাড়ায় ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিলীন হওয়ায় এসব প্রাণীরা আশেপাশে স্থানান্তরিত হচ্ছে।

প্রজাপতি গবেষক প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোর প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য হয়তো গাছপালা, জঙ্গল কিছুটা কাটা পড়তে পারে। তবে অপ্রয়োজনে যেন তা পরিষ্কার না হয়ে যায় সে বিষয়টা আমাদের খেলায় রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গল কমে যাওয়ায় এখন অনেক প্রাণীই অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. আমির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যে মাস্টারপ্ল্যান ছিল সে অনুযায়ী কিছুই হয়নি। এজন্য এখন নতুন মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। সামনে যা হবে তা পরিকল্পিতভাবেই হবে। আমরা যখন কোনো ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করি, তার ভেতরে যদি গাছ থাকে তা তো কাটা পড়বে। এখন দেখার বিষয় হলো অপ্রয়োজনে গাছ কাটা পড়ছে কিনা।’

সারাবাংলা/এনএইচ/এমও

জাবি পরিবেশ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর