Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পর্যটনের প্রধান আকর্ষণ বিশ্বভারতীর ‘বাংলাদেশ ভবন’


২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৯:১৮

।। শুভজিৎ পুততুন্ড ।।

কলকাতা থেকে: পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে এখন পর্যটনের প্রধান আকর্ষণ বিশ্বভারতীর বাংলাদেশ ভবন। গত ২৫ মে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবনটির উদ্বোধন করেন। ভারত-বাংলাদেশ সম্প্রীতির এই নিদর্শনটি খুব দ্রুতই দুই বাংলার মানুষের কাছে  জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

বাংলাদেশ ভবনের প্রধান দুটি আকর্ষণ হলো গ্রন্থাগার এবং সংগ্রহশালা বা জাদুঘর। গ্রন্থাগারটি সকলের জন্য আগেই খুলে দেওয়া হলেও গত ১৮ সেপ্টেম্বর জাদুঘরটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশ ভবনের খবর প্রকাশিত হবার পর প্রতিদিনই এখানে ভিড় বাড়ছে।

বিশ্বভারতী, বাংলাদেশ ভবন
কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতনে বেড়াতে এসেছিলেন যাদবপুরের বাপুজিনগরের বাসিন্দা ভারতী পাল। কিন্তু পথেই নবনির্মিত বাংলাদেশ ভবনের নাম শুনে তার ভবনটি ঘুরে দেখতে ইচ্ছা হয়। প্রবল আগ্রহ নিয়েই বাংলাদেশ ভবন পরিদর্শন করতে এসেছিলেন ষাটোর্ধ ওই নারী। সেইসাথে জাদুঘরে প্রবেশের পরই পুরনো স্মৃতি উসকে দিল ভারতী দেবীকে।

তিনি বললেন, আমার জন্ম বাংলাদেশে। কিন্তু তখন বোঝার মতো বয়স না থাকার কারণে বাংলাদেশকে সেভাবে মনে নেই। এটাই আমার দু:খ যে আমি বাংলাদেশকে সেভাবে দেখে আসতে পারি নি। আর এখন বোঝার বয়স হয়েছে কিন্তু যাওয়ার কোন সুযোগ-সময় নেই। আজ সেই বাংলাদেশকে সামনে দেখে মন ছুঁয়ে যাচ্ছে।

বিশ্বভারতী, বাংলাদেশ ভবন

ভারতী পাল ভারতী দেবীর সাথেই এসেছেন তাঁর মা যাদবপুরের সুলেখার বাসিন্দা আশি বছর বয়সী নারী অন্নপূর্ণা কুন্ডু। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর ১৯৬২ সালে পরিবারের সাথে বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় চলে আসেন তিনি। অন্নপূর্ণা কুন্ডু জানান, বাংলাদেশ ভবনে এসে আগের কথা সব মনে পড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ভবন যে দেখতে পারবো এটাই কখনও ভাবিনি।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাংলাদেশকে জানতে-চিনতে এই ভবনের কোন বিকল্প নেই। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সবুজকলি সেন বলেন, বাংলাদেশকে জানতে হলে বা গবেষণা করতে গেলে বাঙালিকে শান্তিনিকেতনের বাংলাদেশ ভবনে আসতেই হবে। তাঁর অভিমত বাংলাদেশ সম্পর্কিত এরকম গ্রন্থাগার আর কোথাও নেই। বাংলাদেশ ভবনকে সার্থক করে তুলতে দুই দেশের শিল্পী, গুণীজনদের নিয়ে মত বিনিময়, আলোচনা সভা, বাংলাদেশ উৎসবের আয়োজন করা উচিত বলেও মনে করেন উপাচার্য।

বিশ্বভারতী, বাংলাদেশ ভবন

বাংলাদেশ ভবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে এখনই কোন প্রবেশমূল্য না থাকলেও ভবনটির রক্ষণাবেক্ষণে দুর্গোৎসবের পরই প্রবেশমূল্য ধার্য করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। যদিও ভবনটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের তরফে এককালীন আর্থিক সহায়তা করা হচ্ছে। পাশাপাশি অর্থ বরাদ্দের জন্য ভারত সরকারের কাছেও আর্জি জানানো হবে জানিয়েছেন সবুজকলি সেন।

বাংলাদেশ ভবন নিয়ে খুব ভাল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন এই ভবনের চিফ কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, প্রথম দিনই (১৮ সেপ্টেম্বর) থেকে শিক্ষামূলক ভ্রমণে এসেছিল স্থানীয় চাঁদপাড়া স্কুলের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও শান্তিনিকেতন, বিশ্বভারতী ও বাংলাদেশ থেকে প্রথমদিন আড়াইশো জনের মতো দর্শক পেয়েছি এবং প্রত্যেকেই আপ্লুত।

বিশ্বভারতী, বাংলাদেশ ভবন

মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় আরও জানান, এই ভবনের গ্রন্থাগার ও জাদুঘর-দুইটিই অত্যন্ত সমৃদ্ধ। আপাতত সচিত্র পরিচয় পত্র দেখিয়েই প্রবেশ করা যাবে এই ভবনে। গ্রন্থাগারে বসেই বই পড়ারও সুযোগ থাকছে। যদিও এখনই কোন বই বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইস্যু করা হবে না। এই মুহুর্তে গ্রন্থাগারটিতে ৩০৭৪ টি বই থাকলেও বাংলাদেশ সরকার আরও অতিরিক্ত তিন হাজার বই দেবে বলে জানিয়েছেন মানবেন্দ্র।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ভবনের মাধ্যমে প্রতিবেশী এই দেশটিকে নতুন করে চেনার দরজা খুলে গেছে বলে মনে করেন কলকাতার বাসিন্দা ঝিলাম গুপ্ত। তিনি জানালেন, এই ভবন এক কথায় অসাধারণ। আমাদের সংস্কৃতির সাথে বাংলাদেশের সংস্কৃতির খুব একটা পার্থক্য নেই। প্রায় একই ধরনের। তবুও সেটাকেই আবার নতুন করে দেখাটা সত্যিই খুব সুন্দর।

বিশ্বভারতী, বাংলাদেশ ভবনজাদুঘরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুদর্শনা সেন জানান, প্রত্যেকে একটা শ্রদ্ধা নিয়ে আসছে। প্রত্যেকে ভালবেসে আসছে। তিনি জানান, বাংলাদেশ যেভাবে ভাষাকে সম্মান দিয়ে বা শ্রদ্ধার সাথে রেখেছে কিংবা মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুসহ সেদেশের অসংখ্য এবং এভাবে সকলের সামনে প্রদর্শন করছে-সেটা একটা গর্বের বিষয়।

এদিকে বাংলাদেশ ভবনের বাইরে দুই প্রান্তে দুইটি মুর‌্যাল তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর একটি করবেন পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট শিল্পী যোগেন চৌধুরী। অন্যটি করবেন বাংলাদেশেরই একজন শিল্পী। বুধ ও বৃহস্পতিবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটির দিন এবং সরকারি ছুটির দিন বাদে অন্য দিনগুলিতে খোলা থাকবে এই ভবন।

সারাবাংলা/এনএইচ

বাংলাদেশ ভবন বিশ্বভারতী

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ইনজুরিতে মৌসুম শেষ রদ্রির
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:২৮

সম্পর্কিত খবর