Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘দুর্ঘটনার জন্য শুধু চালক নয়, পথচারীও দায়ী’


২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৯:০৬

।। মাকসুদা আজীজ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর ।।

এই ভাই ভাই ভাই… ফুটপাথে উঠেন! যাকে বলা হচ্ছিলো, সে একবার ঘাড় ফিরিয়ে তাকালেন এরপর একরত্তি মেয়েটার দিকে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে হন হন করে হেঁটে চলে গেলেন রাজপথ ধরেই। মেয়েটা আশা ছেড়ে দিয়ে পরের জনকে ফুটপাতে উঠাতে মনযোগী হলো।

সকাল ৯টা। স্থান, ফকিরাপুল মোড়। চারদিক থেকে অগণিত যানবাহন আর পথচারীদের মিছিল, সবাইলে নির্দিষ্ট সময় কর্মক্ষেত্রে ঢুকতে হবে। নগরীতে এই সময়টাতেই ঝামেলা হয় সবচেয়ে বেশি। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সবাই যেন মেতে উঠেন আগে পৌঁছানোর প্রতিযোগিতায়।

ক’মাস আগেই এই নগরীতে কিশোর-তরুণরা নেমে এসেছিল রাস্তায়। তারা নাকি এ শহরের যান চলাচলকে নিয়মে আনবে। কিন্তু সব সংগ্রাম তো নগদে সফল হয় না। তাই জীবনের নিয়মে শিক্ষাক্ষেত্রে ফিরে গেলেও রোভার স্কাউটের ছেলে-মেয়েরা ট্রাফিক মাসে পুলিশকে সহায়তা করতে প্রায় এক মাস ধরে ঢাকার রাস্তার নানা পয়েন্টে কাজ করছে।

 

একরত্তি যে মেয়েটা হাজার অবজ্ঞা সত্ত্বেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছে তার নাম সোনিয়া ওমর। শাহজাহানপুর রেলওয়ে সরকারি স্কুলের ছাত্রী। তার কাছে জানা গেলো, প্রায় এক মাস ধরে তারা এখানে কাজ করছে। যতটা সময় স্কুল বা পড়ার কাজ থাকে তারা তা করেই এখানে চলে আসে।

এতদিন ধরে কাজ করে কেমন লাগছে? প্রশ্নের জবাবে সোনিয়া জানায়, আগে ভাবতাম, সব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকরা। পথে নেমে জানলাম আমরা পথচারীরাও কম দায়ী না। পথে কাউকে নিয়ম মানানো বেশ কষ্টসাধ্য। কেউ ফুটপাথে উঠতে চায় না, নিয়ম মেনে রাস্তা পার হতে চায় না, ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হয়..

তাহলে তোমাদের পথে নেমে কী লাভ হলো? এ প্রশ্নের জবাবে এগিয়ে আসে সোনিয়ার সঙ্গে থাকা সোমা। সে জবাব দেয়, ‘আমরা কাজ করে যাচ্ছি। হয়তো প্রতিদিন বলতে বলতে মানুষের অভ্যাস বদলাবে।’

বিজ্ঞাপন

সোনিয়া আর সোমার কথার মাঝে মধ্যেই পথচারীরা এদিক-ওদিকে দিয়ে নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করে। কথার ফাঁকে ফাঁকেই দৌঁড়ে গিয়ে স্কাউটরা তাদের আটকায়।

স্কাউটের সঙ্গে এই সিগনালে কাজ করছে ট্রাফিক পুলিশের নিয়মিত দল এবং পুলিশের অপরাধ শাখার কর্মকর্তারাও। তাদের একজন সদস্য সঞ্জয় সারাবাংলাকে জানান, ট্রাফিক মাস শুরুর পর থেকে আমরা নিয়মিত কাজের সঙ্গে এই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের লক্ষ্য মানুষকে নিয়ম পালনে সাহায়তা করা। এর জন্য আমরা কোনো শাস্তি বা জরিমানা করছি না শুধু সচেতন করছি।

এভাবে ঘটা করে ট্রাফিক সপ্তাহ পালন এবং যনবাহন ও পথচারীদের নিয়মানুবর্তী করার কিছু ফল সহজেই দৃশ্যমান। যেমন, জেব্রা ক্রসিং এর আগেই থামছে গাড়ি। আর পথচারীরা দল বেঁধে পার হতে পারছেন রাস্তা।

রাস্তার ওপারে দাঁড়িয়ে সোনিয়া ও সোমাদের আরেক সতীর্থ ইমরান। সে জানালো কিছু বিষয়ে উন্নতি সম্ভব হয়েছে তবে কিছু বিষয় একদম নিয়ম মানানো যাচ্ছে না। যেমন ফুটপাথ থেকে নেমে পথের ওপর দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা বা রাস্তা পার হতে হতে মোবাইলের ব্যবহার।

সেখানেই মোবাইলে কথা বলতে বলতে পার হচ্ছিলেন একজন পথচারী; তাকে সচেতন করার পরেও ফোন রাখলেন না তিনি। তার সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে গেলেন পুলিশ সদস্যারা। অবশেষে লজ্জিত হয়ে ফোন রেখে ক্ষমা চাইলেন পথচারী।

স্কাউটদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের এই দৃশ্য সারা শহর জুড়েই। ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের সামনেও দুপুরে দেখা গেলো স্কাউটের ইউনিফর্ম পরে বা স্কুল ইউনিফর্মের ওপর স্কাউটের স্কার্ফ বেঁধে নেমে এসেছে অনেকগুলো মেয়ে। রীতিমত অধিকার নিয়ে নির্দেশ দিচ্ছে চালক ও পথচারীদের। তুলে দিয়েছে স্কুলের সামনে থাকা হকারদের, পার্ক করতে দিচ্ছে না কোনো গাড়ি।

বিজ্ঞাপন

কথা হয় স্কুলটির মূল দিবা শাখার সহকারী হেডগার্ল মুমতাহিনা মোশাররফ মৌমিতার সঙ্গে। মৌমিতা জানায়, দুপুরে যে সময়টায় প্রভাতী শাখার স্কুল ছুটি হয় ও দিবা শাখার ক্লাস শুরু হয় এ সময়টা এখানে দীর্ঘ জটলা বেঁধে থাকে। গত এক সপ্তাহ ধরে, এ সময় প্রতিদিন ১৫ জন স্কাউট যানচলাচল নিয়ন্ত্রণের কাজ করেছে।

মৌমিতা আরও জানায়, স্কুলের সামনের যানচলাচল স্বাভাবিক করতে তারা অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাও নেবে। যেন প্রত্যেক শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বাহনকে নিয়মানুবর্তী করতে সচেষ্ট হয়।

সারাবাংলা/এমএ/এমআই

নিরাপদ সড়ক স্কাউটস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর