Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেশের তিন শিশুর একটি খর্বকায়


২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৮:৩০

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি শিশু খর্বকায়। অর্থাৎ প্রতি তিনটি শিশুর একটি আকারে স্বাভাবিকের চেয়ে খাটো। এসব শিশুদের প্রায় অর্ধেকের বেশি বাস করে গ্রামে। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইএফপিআরআই) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, শিশুদের উচ্চতা ও দৈহিকভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রতিদিন দুধ খাবার অভ্যাস বড় ভূমিকা রাখে। শিশু জন্মের পর প্রথম এক হাজার দিনে নবজাতককে নিয়মিত দুধ খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে পারলে এসব শিশুর খর্বকায় হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে।

‘হাউজহোল্ড ডেইরি প্রোডাকশন অ্যান্ড চাইল্ড গ্রোথ: এভিডেন্স ফ্রম বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই গবেষণায় গ্রামের শিশু ও প্রজননক্ষম নারীদের জন্য দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার নিশ্চিত করতে দেশের পুষ্টিনীতিতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আইএফপিআরআইয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও এই গবেষণার মুখ্য লেখক ডেরেক হিডি তার গবেষণায় বলেছেন, যথাযথভাবে বুকের দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি ৬ থেকে ২৩ মাস বয়সী শিশুদের খাবারের তালিকায় দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার থাকলে তাদের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। আর এতে শিশুদের খর্বকায় হওয়ার ঝুঁকি কমে যায় প্রায় ১০ শতাংশ।

ডেরেক হিডি বলেন, এই গবেষণায় দেখা গেছে, ৬ থেকে ২০ মাস বয়সী শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধির হার অত্যন্ত ধীর। তাই নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানোর বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। মায়ের দুধের বিকল্প কোনো পণ্যই হতে পারে না— এটা বোঝাতে হবে। আর সারাবিশ্বে কমপক্ষে ৩১ লাখ শিশু পুষ্টিহীনতায় মারা যায়। এসব শিশুদের জীবনের প্রথমাংশে পুষ্টির অভাব দৈহিক ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত করে এবং পুরো জীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব বয়ে বেড়াতে হয়।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, বেশকিছু জরিপে দেশে খর্বাকায় শিশুর সংখ্যা ৩১ শতাংশ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অনেক বেশি এবং ধনী ও দরিদ্রের মধ্য পার্থক্যের হার ক্রমাগত বাড়ছে। ফলে গ্রাম, শহরতলী ও শহরের বস্তির মতো যেসব এলাকায় অপেক্ষাকৃত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাস বেশি, সেসব এলাকায় শিশুদের মধ্যে পুষ্টির ঘাটতি বেশি দেখা যাচ্ছে। খর্বাকায় শিশুর সংখ্যা এসব এলাকাতেই বেশি।

ডা. লেলিন বলেন, অর্থনৈতিক বৈষম্যর যে ক্রমবর্ধমান চিত্র, এর ছাপ পড়ছে শিশুদের মধ্যে। অর্থাৎ স্বচ্ছল, মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের উচ্চতা যেভাবে বাড়ছে, বিত্তহীন, গ্রামীণ ও অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাৎপদ শিশুরা সেভাবে বাড়ছে না।

এদিকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও বলছে, অপুষ্টিজনিত কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ শিশু খর্বাকায়। এছাড়াও ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ শিশু কৃশকায় এবং ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু কম ওজনে ভুগছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুষ্টির অভাবে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে ও তারা অপুষ্টিতে ভুগছে। রক্তস্বল্পতাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের হারও তাদের মধ্যে বেশি। অপুষ্টির শিকার মা ও শিশুর সংখ্যা আগের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কমলেও সেটি খুব বেশি ইতিবাচক নয় বলে মনে করছেন তারা।

ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, পুষ্টিহীনতা থেকে শিশুদের রক্ষা করতে চিকিৎসকরা অনেক আগে থেকেই মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। কিন্তু মৌলিক বিষয়টি হচ্ছে, মাকেও সুষম খাবার জোগান দেওয়ার বিষয়টি  নিশ্চিত করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

এর বাইরে, বাংলাদেশের প্রায় ২৫ ভাগ পরিবার খাদ্য অনিশ্চয়তায় ভুগছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। যদিও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা আগের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কমেছে। ফলে খাদ্যের অনিশ্চয়তা দূর করতে জাতীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বলে মত দেন ডা. লেলিন চৌধুরী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব সিরাজুল ইসলাম খান সারাবাংলাকে বলেন, অপুষ্ট শিশুর হার অনেকাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া পুষ্টি বিষয়ে জনসচেতনতা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে পুষ্টিবিষয়ক মৌলিক প্রশিক্ষণ, আইওয়াইসিএফ, স্যাম ও সিম্যাম। অন্যান্য ধরনের অপুষ্টির ওপরে ৩৮ হাজার ৫৪১ জন চিকিৎসক, নার্স ও মাঠকর্মীকেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

সচিব সিরাজুল ইসলাম আরও জানান, শিশুদের পুষ্টিসেবার জন্য ৪২৪টি জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইএমসিআই ও পুষ্টি কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি, মারাত্মক অপুষ্ট শিশুদের চিকিৎসার জন্য ২০২টি জেলা সদর হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ‘স্যাম’ কর্নার স্থাপন করা হয়েছে। খাদ্যের মান নির্ণয়ের জন্য জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণাগার তৈরি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সারাবাংলা/জেএ/জেডএফ

খর্বকায় শিশু শিশুখাদ্য শিশুর খাদ্যাভ্যাস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর