Tuesday 03 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৯০ শতাংশ নদী দূষণ করে কলকারখানা ও বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান


২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৯:০৪
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন বলেছেন, ‘নদী দূষণের জন্য ৬০ শতাংশ দায় কলকারখানার, ৩০ শাতাংশ দায় সিটি করপোরেশন, ওয়াসা এবং অন্যান্য সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের। মাত্র ১০ শতাংশ দায় সাধারণ জনগণের। তবে এই দায়গুলোও আসলে সরকারের ওপরে বর্তে, কেন না গুড গর্ভনেন্স হলে এই বিষয়টা সমাধান হতে পারত।’

সোমবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাপা, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও বুড়িগঙ্গা রিভারকিপারে যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘ঢাকার চারপাশের নদীদূষণ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য পাঠ করেন, বুড়িগঙ্গা রিভারকিপারের যুগ্ম সচিব ও ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, বাংলাদেশকে বলা হয় এশিয়ার ড্রেইন। দূর-দূরান্ত থেকে পানি এসে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে সমুদ্রে যায়। এ জন্য বাংলাদেশকে লার্জেস্ট অ্যাকটিভ ডেল্টা অফ ওয়ার্ল্ডও বলা হয়। তবে বাংলাদেশ পানি প্রাচুর্যের দেশ কিন্তু এটা সত্য নয়। বাংলাদেশ সারাবছর নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি পাই না। আমাদের ৮০ শতাংশ পানি আসে বর্ষায় বাকি সময়টা আমাদেরকে পানির স্বল্পতার মধ্যে কাটাতে হয়।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রতি স্কয়ার কিলোমিটারে ১ হাজার ৮৪ জন বসবাস করে। ঢাকায় এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। ফলে খুব কম জায়গায় অনেক মানুষ পানি ব্যবহার করে এতে পানি দূষণ বেশি হয়।

বাংলাদেশের পানি ব্যাবহার নীতির ত্রুটির উল্লেখ করে শরীফ জামিল বলেন, সারা পৃথিবীতে সবাই ভূপৃষ্টের উপরিভাগের পানি পুনঃব্যবহার করে, বাংলাদেশে ভূগর্ভস্ত পানি সহজলভ্য হওয়ায় এই পানি নির্ভর প্রকল্প বাড়ছে কিন্তু ভূগর্ভে পানির মজুদ ঠিক রাখার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ না হওয়ায় ভূগর্ভের পানির স্তর নেমে যাচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে ঢাকাও মহেঞ্জোদারো-হরপ্পা হয়ে যাবে।

তিনি নদী দূষণে ভারতের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, আমাদের নদীর উজানে ভারত নিজেদের ইচ্ছেমতো বাঁধ বসাচ্ছে। এই বাঁধ সবগুলোর তথ্যও আমাদের কাছে নেই কারণ এই এসব তথ্য আড়াল করা হয়। ভারতের মতো চীনও নিজেদের চাহিদা মতো নদী ব্যবহার করে যার ফল ভোগ করতে হয় বাংলাদেশকে।

বাংলাদেশের নদীর মোট সংখ্যার কোনো সঠিক তথ্য নেই এই অভিযোগ করে জামিল বলেন, আমাদের দেশের একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে ১১ শ ২০টা নদী আছে। উইকিপিডিয়া বলে ৭০০ আর ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী নদীর সংখ্যা ৩ শ। কিন্তু বাপা ও অন্য পরিবেশবাদী সংগঠন মিলে একটি তিন দিনের কনফারেন্সে দেশের সব নদীর পাড়ের মানুষদের মধ্যে সার্ভে চালিয়ে দেখেছি বাংলাদেশে ২৩০টির বেশি নদী পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া নদী রক্ষায় নদীর সঠিক জরিপের ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি।

তার মতে, নদীকে ঘিরে আমাদের দেশের মানুষের জীবন অবর্তিত হয়। নদী যদি মরে যায় তবে তার প্রভাব পড়বে জীবনে। এই রোষের বহিঃপ্রকাশ অনেক তীব্র হবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য শারমিন মুরশিদ। তিনি বলেন, নদী দূষণ হলে নদীর পাড়ে থাকা কলকারখানার ওপরেও এর প্রভাব পড়বে। সারা বিশ্বে কলকারখানার পণ্যের ক্রেতারা একটি সাধারণ মান বজায় রাখে। এই মান না পেলে সেখান থেকে তারা পণ্য নেয় না। তাই কলকারখানার নিজস্ব স্বার্থেই নদীর দূষণ বন্ধ করতে হবে।

তিনি পরামর্শ দেন, যে নদীগুলো দূষিত হয়নি সে নদীগুলোকে রক্ষা করতে হবে। যেগুলো নষ্ট হয়েছে সেগুলোকে ঠিক করতে হবে। এর জন্য সরকারের নীতিগুলোকে একমুখী করতে হবে। কারণ কোনো শিল্প কারখানা স্থাপনের আগে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র লাগে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় যদি পরিবেশের বিষয়টি ঠিকমতো তদন্ত না করে ছাড়পত্র দেয় তবে নদী রক্ষা কমিশন কীভাবে সেই নদীকে রক্ষা করবে, প্রশ্ন রাখেন শারমিন মুরশিদ।

তিনি আরও পরামর্শ দেন, আমাদের নদী রক্ষা করার জন্য আন্তর্জাতিক সমঝোতার বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। এতে সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। এভাবে আমাদের নদী রক্ষা করতে হবে।

সারাবাংলা/এমএ/এমআই

বাপা বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর